সুলেমান আতেশ (জন্ম: ৩রা জানুয়ারী, ১৯৩৩) একজন তুর্কি ধর্মতত্ত্ববিদ, দার্শনিক ও লেখক। তিনি তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক পরিদপ্তরের ১২তম পরিচালক ছিলেন। তিনি আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সহকারী প্রকল্পে যুক্ত হন। এরপর রুর বিশ্ববিদ্যালয় বখুম এ তিনি নিজের গবেষণা ক্ষেত্রে কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আল-আমির আব্দুলকাদির বিশ্ববিদ্যালয়, আলজেরিয়াতে কুরআনের ব্যাখ্যা ও কুরআন তেলাওয়াত বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ওন্দোকুজ মায়িস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক ইসলামি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান এবং ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদে একই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুলেমান আতেশ তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক পরিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সেখানে প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

Süleyman Ateş
President of the Directorate of Religious Affairs
কাজের মেয়াদ
16 April 1976 – 8 February 1978
রাষ্ট্রপতিFahri Korutürk
পূর্বসূরীLütfi Doğan
উত্তরসূরীTayyar Altıkulaç
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1933-01-03) ৩ জানুয়ারি ১৯৩৩ (বয়স ৯১)
Elazığ, Turkey

জন্ম, প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

তিনি এলাজিগের ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত তাদিমে ইব্রাহিম ও বেহিয়ে আতেশের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা তাকে কুরআনের শিক্ষার জন্য গ্রামের ইমামের কাছে পাঠিয়েছিলেন। ১০ বছর বয়সে তিনি পুরো কুরআন মুখস্থ করে ফেলেন এবং তার বাবা তাকে আরবি অধ্যয়নের জন্য এলাজিগে পাঠান। আরবি ভাষায় দক্ষ হওয়ার পর ১৯৫১ সালে তিনি এরজুরুম শহরে যান এবং হাজি ফারুকের কাছে শিক্ষালাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চেয়েছিলেন এবং ১৯৫৩ সালে মিশরে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। ব্যর্থ চেষ্টার পরে, তিনি এলাজিগ সিটির ভোকেশনাল রিলিজিয়াস হাই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি 'হাজি মুহাররম'-এর কাছেও শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন। পড়াশোনায় তিনি খুবই সফল ছিলেন। তিনি ১৯৬০ সালে হাই স্কুল শেষ করেন এবং আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদে যান। পড়াশোনার সময় তিনি চার বছর ধরে দুটি ভিন্ন মসজিদে ইমাম ও প্রচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে স্কুল থেকে স্নাতক হওয়া সুলেমান আতেশ এলাজিগের ভোকেশনাল রিলিজিয়াস হাই স্কুলে কয়েক মাস দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৬৫ সালের ৭ জুলাই আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালে পিএইচডি কর্মসূচিতে অংশ নেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৬৯ সালে তিনি তুর্কি সেনাবাহিনীতে আর্টিলারি ব্যাটালিয়নের রিজার্ভ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন এবং আঙ্কারা ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল থেকে স্নাতক হয়ে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। সুলেমান আতেশ নিজের গবেষণা ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ইরাক যান। ইরাক ও মিশরে গবেষণা শেষ করে তুরস্কে ফিরে আসেন এবং ১৯৭৩ সালের ২৪শে নভেম্বর আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন। সুলেমান আতেশ তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের ধর্মীয় বিষয়ক প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন এবং এরপর পুনরায় আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৭৮ সালে আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরো অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি পান। এরপর, ১৯৭৯ সালের ২৭শে এপ্রিল তিনি পশ্চিম জার্মানিতে গমন করেন।

সুলেমান আতেশ বোখুমের রুহর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের গবেষণার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে অনুসন্ধান করেন এবং জার্মান ভাষায় দক্ষতা বাড়ান। তিনি ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হন এবং রিয়াদে যান। তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলুদ্দিন অনুষদে কোরআনের তাফসির (ব্যাখ্যা) পড়াতেন। প্রশাসন তার ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি সেখানে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৮২ সালের ১৮ই নভেম্বর আঙ্কারায় ফিরে আসেন। তিনি কিছু সময়ের জন্য আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরের সেমিস্টারে, সুলেমান আতেশ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। এরপর তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআনের তাফসিরের শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি আলজেরিয়ার আমন্ত্রণে সেখানে যান এবং ১৯৮৭-১৯৮৮ সালে কোসান্টিনার আল-আমির আব্দুল কাদির বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআনের তাফসির এবং ইসলামী সুফিবাদ পড়ান।

সুলেমান আতেশ তাঁর নিজ দেশ তুরস্কে ফিরে আসেন এবং ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ওন্দোকুজ মাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলিক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওন্দোকুজ মাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের পর তিনি ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিভাগে অনুষদের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি মৌলিক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। সেই একই বছরে সুলেমান আতেশ মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিভাগেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়িয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

তিনি নেদারল্যান্ডসে যান এবং ইউরোপীয় বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী বিজ্ঞান পড়ান। কিছু সময়ের জন্য তিনি ২০০১-২০০২ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকও হন। এরপর, গবেষণার কাজ চালিয়ে নিতে তিনি তুরস্কে ফিরে আসেন।

সাহিত্য সম্পাদনা

সুলেমান আতেশ একজন বিখ্যাত লেখক যিনি ১০৭টিরও বেশি বই এবং অসংখ্য নিবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে পবিত্র কুরআন, কুরআনের তুর্কি অনুবাদ এবং কুরআন শরীফের একটি আধুনিক ব্যাখ্যা। ২০০৩ সালে তিনি ৩৩ খণ্ডের একটি বৃহৎ ইসলামী বিশ্বকোষ সমাপ্ত করেন। এই বিশাল গ্রন্থে তিনি বর্ণনাক্রমে এবং কালানুক্রমে বিভিন্ন ইসলামিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সুলেমান আতেশ ভাতান পত্রিকার একজন নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন, তবে ২০১১ সালে তিনি পত্রিকাটির জন্য লেখা বন্ধ করেন। বর্তমানে তিনি নিজস্ব ওয়েবসাইটে নিজের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেন এবং পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। এছাড়াও তিনি বিশ্বব্যাপী ইসলামী চিন্তাধারা বিষয়ে বিভিন্ন সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা