সুনেকো ওকাজাক (岡崎 恒子, ওকাজাকি সুনেকো, জন্ম ৭ জুন ১৯৩৩) একজন জাপানি বিজ্ঞানী, তিনি তাঁর স্বামীর সাথে ওকাজাকি টুকরা আবিষ্কার করেন।[১] ওকাজাকি টুকরা ডিএনএর প্রতিরূপ বোঝার জন্য অবদান রেখেছিল। ড. সুনেকো ওকাজাকি ডিএনএ গবেষণায় আরও অগ্রগতিতে অবদান রাখার জন্য একাডেমিয়ায় জড়িত রয়েছেন।

সুনেকো ওকাজাকি
সুনেকো ওকাজাকি
জন্ম১৯৩৩
জাতীয়তাজাপানী
মাতৃশিক্ষায়তননাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণওকাজাকি টুকরা আবিষ্কার
দাম্পত্য সঙ্গীরেইজি ওকাজাকি
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রআণবিক জীববিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ফুজিতা স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়, ক্রোমো গবেষণা সংস্থাপন।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

সুনেকো ওকাজাকি ১৯৩৩ সালে জাপানের আইচি অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। [২] তিনি আইচি অঞ্চলের আসাহিগাওকা সিনিয়র হাই স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতক পড়ার সময় তিনি নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ সায়েন্সে জীববিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন।[৩] তিনি ১৯৫৬ সালে নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ সায়েন্স থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন,[৪] ঐ বছরই তার স্বামী রেইজি ওকাজাকির সাথে দেখা হয়। তারা একই বছর বিয়ে করেন এবং তার পরেই তাঁরা তাদের গবেষণা কাজে এবং পরীক্ষাগারে যোগদান করেন।[৩]

ওকাজাকি টুকরোর অনুসন্ধান ও কাজে নেতৃত্বদান সম্পাদনা

সুনেকো এবং রেইজি ওকাজাকির প্রাথমিক গবেষণা ছিল ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং ব্যাঙের ডিম ও সামুদ্রিক আর্চিনে নির্দিষ্ট নিউক্লিওটাইড বৈশিষ্ট্য নিয়ে।[৩] এই কাজটির ফলে চিনির মতো দেখতে নিউক্লিওটাইড থাইমিডিন-ডাইফসফেট রামনোস আবিষ্কৃত হয়, যার ফলে পরবর্তীতে তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার জন্য দ্বা উন্মুক্ত হয়ে যায়। তারা যথাক্রমে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জে. এল. স্ট্রমিঞ্জার ও আর্থার কর্নবার্গের পরীক্ষাগারে কাজ করেন, সেখানে তাদের গবেষণাটি আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা সহজলভ্য ছিল।[৩] বছরখানেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান উভয় দেশে অনেক গবেষণার পর ১৯৬৮ সালে সুনেকো এবং রেইজি পিএনএএস তে ওকাজাকি টুকরো সম্পর্কে তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কার প্রকাশ করেন।[৫] ১৯৭৫ সালে হিরোশিমা-ঘটিত লিউকেমিয়া থেকে রেইজি ওকাজাকির অকাল মৃত্যুর পরে সুনেকো তার গবেষণা চালিয়ে যান এবং ওকাজাকি টুকরোর সাথে সম্পর্কিত আরএনএ প্রাইমারের গঠন প্রমাণ করার দিকে এগিয়ে যান।[৬]

অন্যান্য গবেষণা অবদান সম্পাদনা

সুনেকো আজ অবধি বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে জড়িত রয়েছেন, তিনি মূলত ডিএনএর বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি পরীক্ষাগারের প্রধান, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সুপারভাইজার হিসাবে নেতৃত্ব দান এবং গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিগত সহযোগী হিসাবে কাজ করেছেন। তার অবদানসমূহের মধ্যে রয়েছে এইচজিসিএমাকে একটি অমরা-বর্গীয় প্রতিলিপি নিয়ন্ত্রক হিসাবে প্রকাশ করার বিষয়ে গবেষণা, সম্ভবত একাধিক অমরা-বর্গীয় জিনের বৈশিষ্ট জড়িত। তিনি α- স্যাটেলাইট অনুক্রমের নিউক্লিওসোমের ট্রান্সিশনাল অবস্থানে প্ররোচিত করে পাওয়া মানুষের সেন্ট্রোমায়ার প্রোটিন বি গবেষণায় অবদান রেখেছেেন।[৭] তিনি এইচএলএ-জি এর জিনোমিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ এবং কীভাবে লাইন১ জিন সাইলেন্সারের উপস্থিতি এইচএলএ-জি-এর সীমিত অভিব্যক্তি ব্যাখ্যা করতে পারে তা জানার জন্য কাজ করেছেন।[৮] তিনি মানুষের মধ্যে ডাউন সিনড্রোমের জিনোটাইপ-ফেনোটাইপ বৈশিষ্ট্যগুলি বোঝার জন্য ডাউন সিনড্রোমের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ইঁদুর নিয়ে গবেষণায় ভূমিকা রেখেছেন।[৯]

কর্মজীবন জড়িত সম্পাদনা

সুনেকো ১৯৬৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ সায়েন্সে আণবিক জীববিদ্যা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রধান অধ্যাপক হওয়ার আগ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ফুজিতা স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব কম্প্রিহেন্সিভ মেডিকেল সায়েন্সে চলে যান, সেখানে তিনি পাঁচ বছর অধ্যাপক ছিলেন এবং ২০০৮ অবধি ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। অধিকন্তু ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত স্টকহোম অফিসে তাঁর প্রধান কর্মস্থল ছিল, সেখানে তিনি জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব সায়েন্স এর পরিচালক ছিলেন। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ক্রোমো রিসার্চ সংস্থারও সিইও/সভাপতি এবং পরিচালক ছিলেন।[৩]

পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

স্বামীর সাথে ওয়াশিংটন এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চালিয়ে ফিরে আসার পর ১৯৬৩ সালে সুনেকো প্রথম সন্তান গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে তার দ্বিতীয় সন্তান হয়। জাপানে তৎকালীন শিশুশালা যত্নের নিম্ন মানের কারণে সুনেকো তার গবেষণায় পূর্ণকাল কাজ করায় বাচ্চাদের যত্ন নিতে সাহায্য পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হন। তিনি একটি গণ প্রচারণায় অংশ নেন, সেখানে তিনি শিশু যত্ন সহায়তা প্রাপ্যতা বৃদ্ধির জন্য পদযাত্রা করেছিলেন।[5] রেইজি ওকাজাকি ১৯৭৫ সালে মারা যান, তবে সুনেকো তারা যে গবেষণা নিয়ে কাজ করছিলেন তা শেষ করার জন্য কাজ চালিয়ে যান।

স্বীকৃতি সম্পাদনা

সুনেকো ২০০০ সালে বিজ্ঞানে নারীদের ল’ওরিয়াল-ইউনেস্কো পুরস্কার লাভ করেন।[১০]

তিনি ২০০০ সালে বেগুনি ফিতা সহ দ্য অর্ডার অফ দ্য স্যাক্রেড ট্রেজার পদক এবং ২০০৮ সালে গলা ফিতা সহ গোল্ড রে পদক লাভ করেন।[১১]

২০১৫ সালে নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় "অধ্যাপক ওকাজাকির আত্মা ও উত্তরাধিকারের সম্মানে" সুনেকো ও রেইজি ওকাজাকি পুরস্কার প্রবর্তন করে।[১২]

২০১৫ সালে তিনি সাংস্কৃতিক মেধাবী ব্যক্তিত্ব হিসাবে নির্বাচিত হন।[১৩]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Willingham, Emily Jane (২০১০)। The Complete Idiot's Guide to College Biology। Penguin। আইএসবিএন 978-1-59257-848-1। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১১  অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  2. (জাপানি ভাষায়)"『岡崎フラグメントと私』岡崎 恒子 | サイエンティスト・ライブラリー | JT生命誌研究館"サイエンティスト・ライブラリー | JT生命誌研究館। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-১৫ 
  3. Okazaki T (মে ২০১৭)। "Days weaving the lagging strand synthesis of DNA - A personal recollection of the discovery of Okazaki fragments and studies on discontinuous replication mechanism"Proceedings of the Japan Academy. Series B, Physical and Biological Sciences93 (5): 322–338। ডিওআই:10.2183/pjab.93.020পিএমআইডি 28496054পিএমসি 5489436  
  4. Shmaefsky, Brian (২০০৬)। Biotechnology 101 । Greenwood Publishing Group। আইএসবিএন 9780313335280  অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  5. Okazaki R, Okazaki T, Sakabe K, Sugimoto K, Sugino A (ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮)। "Mechanism of DNA chain growth. I. Possible discontinuity and unusual secondary structure of newly synthesized chains"Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America59 (2): 598–605। ডিওআই:10.1073/pnas.59.2.598পিএমআইডি 4967086পিএমসি 224714  
  6. "Tsuneko & Reiji Okazaki Award - Okazaki Fragment"www.itbm.nagoya-u.ac.jp। ২০১৮-০৫-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-২২ 
  7. Suzuki N, Itou T, Hasegawa Y, Okazaki T, Ikeno M (মার্চ ২০১০)। "Cell to cell transfer of the chromatin-packaged human beta-globin gene cluster"Nucleic Acids Research38 (5): e33। ডিওআই:10.1093/nar/gkp1168পিএমআইডি 20007595পিএমসি 2836578  
  8. Ikeno M, Suzuki N, Kamiya M, Takahashi Y, Kudoh J, Okazaki T (নভেম্বর ২০১২)। "LINE1 family member is negative regulator of HLA-G expression"Nucleic Acids Research40 (21): 10742–52। ডিওআই:10.1093/nar/gks874পিএমআইডি 23002136পিএমসি 3510505  
  9. Miyamoto K, Suzuki N, Sakai K, Asakawa S, Okazaki T, Kudoh J, Ikeno M, Shimizu N (এপ্রিল ২০১৪)। "A novel mouse model for Down syndrome that harbor a single copy of human artificial chromosome (HAC) carrying a limited number of genes from human chromosome 21"। Transgenic Research23 (2): 317–29। ডিওআই:10.1007/s11248-013-9772-xপিএমআইডি 24293126 
  10. (2015-04-05) DNA researcher Okazaki wins int'l award for female scientists., the Free Library, Retrieved 2017-10-31.
  11. "My Life & Okazaki Fragments | Features | Nagoya University Academic Research & Industry-Academia-Government Collaboration"Nagoya University Academic Research & Industry-Academia-Government Collaboration (জাপানি ভাষায়)। ২০১৭-১২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-২২ 
  12. "Tsuneko & Reiji Okazaki Award"www.itbm.nagoya-u.ac.jp। ২০১৭-১০-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-৩১ 
  13. "T.O.L.講義:2015度の文化功労者に選ばれた、名古屋大学名誉教授 岡崎恒子先生による特別講義を実施しました!"isen.ac.jparchive.is। ২০১৫-১১-১৩। ২০১৬-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-৩১