সুনয়না হাজারিলাল আগরওয়াল

সুনয়না হাজারিলাল আগরওয়াল একজন ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী। তিনি উত্তর ভারতের ধ্রুপদী নৃত্য কত্থক নৃত্যে তাঁর দক্ষতার জন্য সুপরিচিত এবং কত্থকের জানকীপ্রসাদ ঘরানা বা বেনারস ঘরানার একমাত্র জীবিত নৃত্যশিল্পী[১]। শাস্ত্রীয় নৃত্যে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্যে ভারত সরকার ২০১১ সালে তাঁকে চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দ্বারা সম্মানিত করে[২]

সুনয়না হাজারিলাল
২০০৪-এ সুনয়না
জন্ম
পেশাকত্থক নৃত্যশিল্পী
পুরস্কারপদ্মশ্রী
সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার
অভিনয়ন কলা সরস্বতী
মহারাষ্ট্র গৌরব পুরস্কার
ওয়েবসাইটOfficial web site

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

সুনয়নার জন্ম ভারতের উত্তর প্রদেশের বরেলি নামক শহরে। তাঁর বাবা ছিলেন রেল কমিশনার এবং মা একজন গৃহবধূ। বাবার বদলির চাকরি হওয়ার সুবাদে,সুনয়না ছোটবেলায় বাবা মায়ের কাছে থাকার সুযোগ পাননি কারণ তাঁর বাবা মা সবথেকে ছোট সন্তানকে নিয়ে অন্য শহরে থাকতেন এবং সুনয়নাসহ চার ভাইবোন ঠাকুরদাদা, ঠাকুমা এবং পিসির কাছে বারাণসীতে থাকতেন। তাঁর ঠাকুরদাদা খুব কঠোর ছিলেন - বাড়ি এবং বিদ্যালয়ের বাইরে অন্য কোথাও যাওয়া পছন্দ করতেন না। সেই কারণে শৈশবেও কখনো সুনয়না অন্য শিশুদের সাথে খেলার সুযোগ পাননি। সম্ভ্রান্ত বংশের মেয়েদের মধ্যে তখন নাচের প্রচলন না থাকায়, তাঁর দাদু নাচ শেখানোতে আগ্রহী ছিলেন না কিন্তু সাত বছর বয়সে নাচের প্রতি সুনয়নার আগ্রহ লক্ষ্য করে তাঁর পিসি তাঁকে নাচের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। সুনয়নার নিজের কথায় যদিও তিনি নাচ উপভোগ করতেন কিন্তু সেই প্রশিক্ষণ থেকে তিনি বস্তুতপক্ষে কিছু শেখেননি। নাচের প্রশিক্ষণে তাঁর দাদু রাজি না হলেও, তিনি সুনয়নাকে গান শিখতে দিতে রাজি হয়েছিলেন। সুনয়না খুব ভালো করেই গান শেখেন এবং স্কুলে পদকবিজয়ীও হন।[৩] ১৪ বছর বয়সে স্কুল শেষ করার পরে সুনয়না পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি মনোবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন। এছাড়া সেখানে তিনি প্রচুর সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। সেই সময়ে হাজারিলাল নামে এক শিক্ষকের অধীনে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। [৩] ১৭ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পরে, তিনি বাবা মায়ের কাছে মুম্বাইতে চলে যান এবং ভারতীয় বিদ্যাভবনে নৃত্য প্রশিক্ষণের জন্যে যোগ দেন। সেখানে হাজারিলালের অধীনে তিনি পাঁচ বছর ধরে কত্থক এবং ভরতনাট্যম -উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতীয় দুই শাস্ত্রীয় নৃত্যের প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীকালে তিনি কত্থকেই মনোনিবেশ করেন। [৩] ১৯৬৩ সালে গুরু হাজারিলালের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। [৩]

কর্ম জীবন সম্পাদনা

সুনয়না কত্থকের বেনারস ঘরানা বা জানকীপ্রসাদ ঘরানায় মনোনিবেশ করেন। সেই সময়ে এই ঘরানাটি মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল এবং কেউই এই ঘরানার নৃত্য পরিবেশন করতেন না। সুনয়না জানকীপ্রসাদ ঘরানার ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণাও করেছেন এবং এ প্রসঙ্গে অনেক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন[৪]। ১৯৭৪-এ সুনয়নার প্রথম বিদেশে নৃত্যপরিবেশনার সুযোগ ঘটে। তিনি আর তাঁর দল যুক্তরাজ্যে রয়াল আলব্যার্ট হল সহ মোট ২৩টি নৃত্যানুষ্ঠান করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত প্রতি বছর সুনয়না তাঁর দল নিয়ে বিদেশ সফর করেছেন এবং বহু শহরে নৃত্যানুষ্ঠান করেছেন। ১৯৬৯ সালে সুনয়না মুম্বাইতে নটবরী নৃত্য অকাদেমি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি প্রায় ১০০ ছাত্র ছাত্রীকে কত্থকের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ভারতীয় বিদ্যাভবনের সঙ্গীত ও নর্তন বিভাগের অধ্যক্ষ রূপেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন সুনয়না [৫]ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) সহ বিশ্বের কয়েকটি নামীদামী নৃত্য প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী অনুষদ হিসাবে কাজ করেছেন।

সম্মাননা ও স্বীকৃতি সম্পাদনা

সুনয়না কত্থকনৃত্যে তাঁর অবদানের জন্যে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলি হল[১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Kathak.org"। Kathak.org। ২০১৪। ২৯ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৪ 
  2. "Padma Shri" (পিডিএফ)। Padma Shri। ২০১৪। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৪ 
  3. https://www.scmp.com/magazines/post-magazine/arts-music/article/2125961/how-indian-classical-dancer-defied-her-family
  4. Sunil Kothari (১৯৮৯)। Kathak, Indian Classical Dance Art। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 64 of 234। আইএসবিএন 9788170172239 
  5. https://narthaki.com/info/intervw/intrv137.html