সুকান্ত চৌধুরী

ভারতীয় উচ্চশিক্ষায়তনিক ব্যক্তিত্ব

সুকান্ত চৌধুরী (জন্ম ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ ) একজন ভারতীয় সাহিত্যিক। বর্তমানে তিনি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবনে তিনি ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি কলেজে এবং এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। অতঃপর ২০১০ সালের জুনে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। যাদবপুরে অবস্থিত ভারতের Digital Humanities তথা আধুনিক মানবতার অগ্রদূত "স্কুল অফ কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডস" এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি। তাঁর গবেষণার প্রধান বিষয়গুলি হল ইংরেজি এবং ইউরোপীয় রেনেসাঁ, অনুবাদ, পাঠ্যপুস্তক এবং আধুনিক মানবতা। অল সোলস কলেজ, অক্সফোর্ড; সেন্ট জনস কলেজ, কেমব্রিজ; দ্য স্কুল অফ অ্যাডভান্সড স্টাডি, লন্ডন; ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়; লয়োলা বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগো সহ অনেক জায়গায় তিনি অতিথি অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করেন। তিনি কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির একজন অনারারি সদস্য এবং আন্তর্জাতিক শেক্সপিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি ২০২১ সালে, তিনি ব্রিটিশ একাডেমির একজন কারেসপন্ডিং ফেলো নির্বাচিত হন। [][]

সুকান্ত চৌধুরী, জানুয়ারী ২০১৫।

রেনেসাঁ বৃত্তি

সম্পাদনা

রেনেসাঁ প্যাস্টোরাল অ্যান্ড ইট'স ইংলিশ ডেভলপমেন্টস (অক্সফোর্ড, ১৯৮৯) বইটি তাঁর প্রথম বড় প্রবন্ধগ্রন্থ যা মূলত ইনফর্ম গ্লোরি: শেক্সপিয়ার অ্যান্ড রেনেসাঁস ইমেজ অব ম্যান (অক্সফোর্ড, ১৯৮১) বইটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রচিত। অতি সম্প্রতি, তিনি প্যাস্টোরাল পয়েট্রি অব ইংলিশ রেনেসাঁস (দুই খণ্ড, ম্যানচেস্টার, ২০১৬-১৭) এবং শেক্সপিয়ারের এ মিডসামার নাইট'স ড্রিমের (২০১৭) তৃতীয় "আর্দেন" সংস্করণ সম্পাদনা করেন।(উল্লেখ্য আর্দেন শেক্সপিয়র হল উইলিয়াম শেক্সপিয়রের দীর্ঘকাল ধরে জনপ্রিয় রচনাগুলির পাণ্ডিত্যপূর্ণ সংস্করণ। এটি দীর্ঘ ভূমিকা এবং সম্পূর্ণ ধারাভাষ্যসমৃদ্ধ নাটক এবং কবিতার সম্পূর্ণ আধুনিক-বানানরীতি ও শব্দসম্ভার অনুযায়ী সম্পাদিত সংস্করণ।) তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের পক্ষ থেকে প্রকাশের জন্য ফ্রান্সিস বেকনের রচনা এবং এলিজাবেথান কবিতার সংকলনের জন্য রচনা নির্বাচন করেন এবং রেনেসাঁর সময়কালের বিভিন্ন প্রবন্ধের সম্পাদনা বা সহ-সম্পাদনায়ও ভূমিকা রাখেন। তিনি ইউরোপীয় এবং বাংলা রেনেসাঁসের মধ্যে যোগসূত্র এবং সম্পর্ক নিরূপণ এবং 'রেনেসাঁ'র সাধারণ একটি মডেলের সম্ভাবনা নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন।

অনুবাদকর্ম

সম্পাদনা

সুকান্ত চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার রায়, রাজশেখর বসু এবং অন্যান্য ধ্রুপদী বাঙালি লেখকবৃন্দ এবং বহু আধুনিক বাঙালি কবিদের রচনাসমূহ ব্যপকভাবে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। তাঁর রচিত "দ্য সিলেক্ট ননসেন্স অব সুকুমার রায় " (নয়াদিল্লি: ও.ইউ.পি, ১৯৯৮) মূলত সুকুমার রায়ের অদ্ভুত কল্পনাপূর্ণ কবিতার ইংরেজি অনুবাদ যা যথেষ্ট প্রশংসিত হয়। তিনি ছিলেন অক্সফোর্ড ঠাকুর অনুবাদ (২০০০ থেকে ২০০৫ এর মধ্যে প্রকাশিত পাঁচটি খণ্ড) এর সাধারণ সম্পাদক। তিনি এডওয়ার্ড লিয়ারের সকল লিমেরিক (মজাদার আজগুবি ছড়া) বাংলায় অনুবাদ করেন এবং লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নোটবুক থেকে নির্বাচিত রচনাসমূহ ইটালিয়ান ভাষায থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। তিনি "Translation and Understanding" অর্থাৎ "অনুবাদ এবং বোধগম্যতা "(নয়াদিল্লি: ও.ইউ.পি, ১৯৯৯) বইটির লেখক।

পাঠ্য গবেষণা এবং আধুনিক মানবিকতা

সম্পাদনা

দীর্ঘকাল তিনি পাঠ্য গবেষণা এবং সম্পাদকীয় তত্ত্ব নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করেছেন। তাঁর লেখা দ্য মেটাফিজিক্স অব টেক্সট বইটি বর্তমান সম্পাদকীয় তত্ত্ব এবং ভাষাতত্ত্বের সাথে ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থপঞ্জিকা এবং পাঠ্য সমালোচনার অন্তর্দৃষ্টিকে একত্রিত করেছেন। উপরে বর্ণিত শেক্সপিয়ার এবং প্রথমদিককার আধুনিক গ্রন্থগুলোর পাশাপাশি তাঁর পাঠ্য গবেষণাগুলির মধ্য দিয়ে তাঁর কর্ম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত স্কুল অফ কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডসের সাহায্যে আধুনিক মানবতা (Digital Humanities) এর ক্ষেত্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তাঁর কাজের মধ্যে ডিজিটাল সংরক্ষণাগার, ডাটাবেস তৈরি এবং পাঠ্যের গণনা বিশ্লেষণ প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত। তিনি ব্রিটিশ লাইব্রেরির বিপন্ন আর্কাইভ প্রোগ্রামের অধীনে দুটি বৃহৎ প্রকল্পের প্রধান তদন্তকারী ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাবলির বিস্তারিত অনলাইন সংস্করণ "বিচিত্রা"-র ও প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন।

নাগরিক গবেষণা

সম্পাদনা

মিঃ চৌধুরী শহুরে জীবনের গবেষণায় আগ্রহী ছিলেন। তিনি কলকাতা: দ্য লিভিং সিটি (ও.ইউ.পি দিল্লি, ১৯৯০) নামক দুই-খণ্ডবিশিষ্ট একটি প্রামাণ্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। সুদীর্ঘকাল তিনি দ্য এশিয়ান এজ পত্রিকার জন্য "ভিউ ফ্রম কলকাতা" নামে একটি পাক্ষিক কলাম লিখতেন। তিনি শহুরে ইস্যু, বিশেষত তাঁর জন্মশহর কলকাতা সম্পর্কে লেখালেখি করেন এবং প্রচারণা চালান।

মিঃ চৌধুরীর যাহা চাই নাটকটি নান্দীকার নামক নাট্যদল কর্তৃক ২০০৭ সালে মঞ্চায়িত হয়েছিল। এটি "সাংস্কৃতিক গতিশীলতা" সম্পর্কিত বিশ্বব্যাপী প্রকল্পের একটি অংশ ছিল যা মূলত শেক্সপিয়ারের বিলুপ্ত নাটক কারডেনিও ধারণার ভিত্তিতে নির্মিত এবং এর সমন্বয়কারী ছিলেন পণ্ডিত স্টিফেন গ্রিনব্ল্যাট এবং ব্রডওয়ে নাট্যকার চার্লস এল. মি.। চৌধুরী গল্পটি আধুনিক বাংলার প্রেক্ষিতে রচনা করেন, যা মূলত বিলুপ্ত নাটকটির কল্পিত রূপান্তর।

তিনি সুপ্রিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছিলেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Sukanta Chaudhuri now fellow of The British Academy"www.telegraphindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৯ 
  2. "Professor Sukanta Chaudhuri FBA"The British Academy (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১৬ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা