সুকাত্রা
সুকুত্রা আরব সাগরের মাঝে অবস্থিত। ভৌগোলিক পরিবেশ এবং গাছপালার অদ্ভুত দর্শনের কারণে এই দ্বীপকে ভিনগ্রহবাসীদের দ্বীপ বা ‘এলিয়েন দ্বীপ’ বলা হয়ে থাকে[১] চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত সুকাত্রা দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা ইয়েমেনের। ইয়েমেন ২০১৩ সালে এটিকে একটি প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করে। এটা হর্ন অফ আফ্রিকা থেকে ২৪০ কিলোমিটার (১৫০ মা) পূর্ব এবং আরব উপদ্বীপ থেকে ৩৮০ কিলোমিটার (২৪০ মা) দক্ষিণে অবস্থিত।[২]
স্থানীয় নাম: سُقُطْرَى সুকুত্রা | |
---|---|
ভূগোল | |
অবস্থান | আরব সাগর |
স্থানাঙ্ক | ১২°৩০′৩৬″ উত্তর ৫৩°৫৫′১২″ পূর্ব / ১২.৫১০০০° উত্তর ৫৩.৯২০০০° পূর্ব |
দ্বীপপুঞ্জ | সুকুত্রা |
মোট দ্বীপের সংখ্যা | 4 |
প্রধান দ্বীপসমূহ | সুকুত্রা, আবদ আল কুরি, Samhah, Darsah |
আয়তন | ৩,৭৯৬ বর্গকিলোমিটার (১,৪৬৬ বর্গমাইল) |
দৈর্ঘ্য | ১৩২ কিমি (৮২ মাইল) |
প্রস্থ | ৫০ কিমি (৩১ মাইল) |
সর্বোচ্চ উচ্চতা | ১,৫০৩ মিটার (৪,৯৩১ ফুট) |
সর্বোচ্চ বিন্দু | মাশানিগ, হাজির পর্বত |
প্রশাসন | |
ইয়েমেন | |
প্রদেশ | সুকাত্রা |
জেলা | হাদিবু (পূর্ব) Qulansiyah wa 'Abd-al-Kūrī (পশ্চিম) |
রাজধানী ও বৃহত্তর শহর | হাদিবু (জনসংখ্যা ৮,৫৪৫) |
জনপরিসংখ্যান | |
জনসংখ্যা | ৪৪০০০ |
জনঘনত্ব | ১১.৩ /বর্গ কিমি (২৯.৩ /বর্গ মাইল) |
জাতিগত গোষ্ঠীসমূহ | predominantly সুকুত্রিয়; minority দক্ষিণ আরবীয়, সোমালিয়, ভারতীয়, এবং বান্টু |
প্রাতিষ্ঠানিক নাম | Socotra Archipelago |
ধরন | Natural |
মানদণ্ড | x |
মনোনীত | 2008 (32nd session) |
সূত্র নং | 1263 |
State Party | Yemen |
Region | আরব ভূখণ্ড |
আয়তন
সম্পাদনা৩,৭৯৬ বর্গ কিলোমিটার ভূমি বিশিষ্ট এ দ্বীপপুঞ্জ দৈর্ঘ্যে ১৩২ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৫০ কিলোমিটার।[৩]। প্রদেশটির রাজধানীর নাম হাদিবু।
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রথম শতকে সুকাত্রা দ্বীপ গ্রিকদের পদচারণায় মুখর থাকার ইতিহাস জানা যায় প্রস্তর খণ্ডে প্রাপ্ত ভাষার ব্যবহার। ধারণা করা হয়, তৃতীয় শতকের দিকে দ্বীপটি প্রাচীন যুগের ব্যবসায়ের মূল কেন্দ্র ছিল।[৪] ‘সুকাত্রা’ নামটি গ্রিক শব্দ নয়, সংস্কৃত শব্দ সুখাদ্রা থেকে এর আগত যার অর্থ সহায়ক বা স্বর্গসুখ প্রদানকারক। মার্কো পোলোর বই “দ্য ট্রাভেলস অফ মার্কো পোলো”য়ে সুকাত্রা দ্বীপের উল্লেখ আছে।
উদ্ভিদ
সম্পাদনাউদ্ভিদগুলোর অদ্ভুত গড়নই এই দ্বীপকে ভিনগ্রহীদের দ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করার মূল কারণ। এ দ্বীপের বেশিরভাগ উদ্ভিদই এন্ডেমিক। পৃথিবীর অন্য কোথাও এগুলোর দেখা মেলে না। সুকাত্রা দ্বীপে ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩০৭টি প্রজাতিই স্থানীয়, অর্থাৎ প্রায় ৩৭ শতাংশ উদ্ভিদ পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে না[৫]। ২০০৪ সালে IUCN এর লাল তালিকায় সুকাত্রার ৩টি অতিবিপন্ন এবং ২৭টি বিপন্ন উদ্ভিদের নাম রয়েছে।[৫]
এই দ্বীপের সবচেয়ে অদ্ভুত গাছ হলো ড্রাগন-ব্লাড ট্রি। অদ্ভুত গড়নের ছাতাকৃতির এই গাছটি থেকে লাল বর্ণের আঠালো পদার্থ বের হয়। কথিত আছে বহুকাল আগের ড্রাগনের রক্ত থেকে এই গাছের উৎপত্তি এবং সে অনুযায়ী এর নামকরণ! এই গাছের আঠা রঙ তৈরিতে এবং বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত হয়।
আরেকটি বিশেষ উদ্ভিদ হলো ডেন্ড্রোসসিয়াস নামক এক প্রকারের শশা গাছ। বিভিন্ন আকৃতির কান্ডটি লম্বা হয়ে চূড়া তৈরি করে, যেখানে হলুদ, গোলাপী ফুল ফোটে। উভলিঙ্গ এই গাছের জন্ম এই দ্বীপের বয়সের দ্বিগুণ আগে বলে গবেষকদের ধারণা। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এদের বংশবিস্তারের অনুকূল।
এছাড়াও রয়েছে পোমেগ্র্যানেট নামক ফুলেল উদ্ভিদ। এটি আড়াই থেকে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সাধারণত ফুল এবং ফল হয়। ফুলগুলো সাধারণত গোলাপি বা লালের কাছাকাছি রঙের হয় আর ফল পাকলে তা হলদে-সবুজ রঙ ধারণ করে। এই গাছের কাঠ খুব শক্ত হয় এবং ছোটখাট আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃতও হয়। এই গাছটি সুকাত্রার বিশেষ উদ্ভিদ হলেও হাওয়াইতে এর চাষের চেষ্টা চলছে।
প্রাণিকুল
সম্পাদনামোট ৩১ প্রজাতির প্রাণির দেখা মিলবে এই দ্বীপে, যার ৯৪ শতাংশ অর্থাৎ ২৯টি প্রজাতিই স্থানীয়। স্কিংস, পা-বিহীন টিকটিকি, নানা প্রকারের মাকড়শা এবং তিন প্রকারের বিশুদ্ধ পানির কাঁকড়ার দেখা মেলে এ দ্বীপে। স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে বাদুড় ছাড়া আর কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব মেলে নি।
জনবসতি
সম্পাদনাসুকাত্রা দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী মানুষেরা মাছ ধরে, পশুপালন করে এবং খেজুর চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। দ্বীপবাসীরা প্রধানত মুসলিম ধর্মাবলম্বী এবং তারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও পালন করে থাকেন।[৬]
যোগাযোগব্যবস্থা
সম্পাদনামৌসুমি আবহাওয়ার কারণে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই দ্বীপে জলপথে যাওয়া যায় না। বছরের অন্যান্য সময়ে জাহাজে করে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে যাওয়া যায়। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক একটি বিমানবন্দর স্থাপন করা হয়েছে সুকাত্রা দ্বীপে। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়েছে। সুকাত্রা বিমানবন্দরটি এর প্রধান শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। এই এলাকার বাস্তুসংস্থান বা ইকোসিস্টেমের কারণে সুকাত্রার অভ্যন্তরে গণপরিবহনের পরিমাণ খুবই নগণ্য।
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
দিক্সাম
-
ক্বলিনসিয়া
-
নওজাদ
-
আর'আর
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Huntingford, George Wynn Brereton (১৯৮০)। The Periplus of the Erythraean Sea। Hakluyt Society। পৃষ্ঠা 103। আইএসবিএন 0-904180-05-0।
- ↑ "Socotra islands scenery in Yemen"। en.youth.cn। China Youth International। ২৫ এপ্রিল ২০০৮।
- ↑ Abrams, Avi (৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "The Most Alien-Looking Place on Earth"। Dark Roasted Blend। ৫ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৮।
- ↑ Sidebotham, Steven E. (২০১১)। Berenike and the Ancient Maritime Spice Route। California। পৃষ্ঠা 189। আইএসবিএন 978-0-520-24430-6।
- ↑ ক খ Miller, A.G.; Morris, M. (২০০৪)। Ethnoflora of the Socotra Archipelago। Royal Botanic Garden Edinburgh।
- ↑ "Socotra history :: Socotra Eco-Tours"। www.socotra-eco-tours.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০২।