সিলন মেডিকেল কলেজ ছিল সিলনে অবস্থিত একটি সরকারি চিকিৎসা বিদ্যালয়কলম্বো মেডিকেল স্কুল নামে কলম্বোতে ১৮৭০ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সিলন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের সাথে একীভূত হয়ে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৪২ সালে সিলন বিশ্ববিদ্যালয় নাম ধারণ করে। মেডিকেল কলেজটি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঔষধ অনুষদে পরিণত হয়। কলেজটি কলম্বো মেডিকেল কলেজ নামেও পরিচিত ছিলো।[১][২]

সিলন মেডিকেল কলেজ
ধরনসরকারি
সক্রিয়১ জুন ১৮৭০ (1870-06-01)–১ জুলাই ১৯৪২ (1942-07-01)
অবস্থান, ,
০৬°৫৫′০৮.৩০″ উত্তর ৭৯°৫২′১৬.৩০″ পূর্ব / ৬.৯১৮৯৭২২° উত্তর ৭৯.৮৭১১৯৪৪° পূর্ব / 6.9189722; 79.8711944
শিক্ষাঙ্গনশহুরে ক্যাম্পাস
মানচিত্র

ইতিহাস সম্পাদনা

কলকাতায় ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ। ব্রিটিশ-শাসিত সিলনের গভর্নর স্টিউয়ার্ট-ম্যাকেনজি ১৮৩৯ সালে সিলনীয়দের একটি ছোটো অংশকে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য কলকাতায় পাঠাতে শুরু করেন।[৩] ১৮৪৭ সালে একজন মার্কিন মিশনারি চিকিৎসক স্যামুয়েল ফিস্ক গ্রিন উত্তর সিলনের মানিপায় শহরে একটি বেসরকারি মেডিকেল বিদ্যালয় স্থাপন করেন।[৪] ১৮৫২ সালে গভর্নর জর্জ উইলিয়াম অ্যান্ডারসনের নেতৃত্বে সিলনে সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।[৫]

১৮৬০-এর দশকে দ্বীপটিতে 'ইয়াস'(উষ্ণমণ্ডলীয় দেশের ব্যাকটেরিয়া-জনিত একধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ যাতে গায়ে লাল-লাল ফোস্কা হয়) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, যা শ্রীলঙ্কার ভান্নি অঞ্চলে বিপুল প্রাণহানি ঘটায়।[৩][৬] ১৮৬৭ সালে গভর্নর হারকিউলিস রবিনসন এই ব্যাপক প্রাণহানির কারণ অনুসন্ধান করতে তদানীন্তন উত্তর-শ্রীলঙ্কার ঔপনিবেশিক শল্যচিকিৎসক জেমস লুস'কে নিযুক্ত করেন।[৩][৬] দেশটিতে চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার জন্য একটি আধুনিক পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জেমস লুস তার পরামর্শগুলোর মধ্যে উল্লেখ করেন।[৩][৬] এরপর গভর্নর রবিনসনের হাত ধরে ১৮৭০ সালের ১লা জুন 'কলম্বো মেডিকেল স্কুল' প্রতিষ্ঠিত হয়।[৫][৭] কলম্বো সরকারি হাসপাতালের নারী অস্ত্রোপচার বিভাগে বিদ্যালয়টি প্রথম স্থাপিত হয়েছিলো।[৬] ইংরেজ সরকারের মুখ্য প্রশাসনিক চিকিৎসা কর্মকর্তা দ্বারা বিদ্যালয়টি নিয়ন্ত্রিত হতো।[৭]বিদ্যালয়ে পাঁচবছরমেয়াদী কোর্স শেষে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হতো এবং উত্তীর্ণ হলে তারা 'লাইসেনশিয়েট অফ মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি'(এলএমএস)ডিগ্রি লাভ করতেন।[৫][৭] এরপর তারা চিকিৎসক হিসেবে ওষুধ-পরামর্শ এবং অস্ত্রোপচার করতে পারতেন।[৫] বিদ্যালয়টিতে বক্তৃতা কক্ষ, পরীক্ষাগার, ব্যবচ্ছেদ কক্ষ এবং দুটি পাঠাগার ছিলো।[৫] পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন পড়ানো হতো সিলন টেকনিকাল কলেজে[৫] বিদ্যালয়টির প্রথম ব্যাচে ছিলো পঁচিশ জন পুরুষ শিক্ষার্থী।[৭][৮] জেমস লুস বিদ্যালয়টির প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।[৯][১০]

বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালে স্থানীয়দের অনেকে জমি এবং ভবন দান করেন।[৯][১১] ১৮৭৫ সালে মুদালিয়ার স্যামসন রাজাপাকসে সাড়ে তিন একর জমি দান করেন, যার ওপর বর্তমানে স্কুলটির উত্তরসূরী কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের ঔষধ অনুষদ দাঁড়িয়ে আছে।[৬] ডি সয়সা হাসপাতাল(শিশু প্রসবকেন্দ্র) এবং জীববিজ্ঞান ভবনটি দান করেন স্যার চার্লস হেনরি ডি সয়সা[৬] একই বছরে তার চাচা মুদালিয়ার সুসেউ ডি সয়সা একটি ভবন দান করেন যেখানে স্থান পায় মেডিকেল পাঠাগার, জীবাণুতত্ব যাদুঘর এবং জীববিজ্ঞান গবেষণাগার[৬] ১৮৯৯ সালে ব্যাকটেরিয়াতত্ব শিক্ষালয় স্থাপনের অর্থ যোগান দেন তার ছেলে মুদালিয়ার জে.ডব্লিউ.সি ডি সয়সা।[৬] অন্যান্য হিতৈষীদের মধ্যে ছিলেন মুহান্দিরাম এ. সিমোন ফার্নান্দো ভিজেগুনারাত্নে এবং ভিমালা গুনাবর্ধনে।[৬] ১৮৭৩ সালে বিদ্যালয়টির কোর্সের দৈর্ঘ্য চার বছর করা হয়।[৮] ১৮৭৫ সালে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় প্রদেশে ঔপনিবেশিক শল্যচিকিৎসক পদগ্রহণ করে লুস বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।[৬] তার স্থলাভিষিক্ত হন এডউইন লাওসন কচ।[৬]

১৮৭৬ সাল থেকে ইংরেজ সরকার সরকারি বৃত্তির ব্যবস্থা করে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টিতে এবং ব্রিটেনে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা বিনা খরচে করতে পারতেন।[১২] ১৮৭৭ সালে অধ্যক্ষ কচের মৃত্যু হলে জুলিয়ান লুইস ভ্যানডারস্ট্র্যাট অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন।[৬] বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সিলন মেডিকেল কলেজ রাখা হয় ১৮৮০ সালে।[১৩] ১৮৮৪ সালে বিদ্যালয়টির মেডিকেল কোর্স পাঁচবছরমেয়াদী করা হয়।[৮]

১৮৮৭ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অসবর্ন হাউজে অনুষ্ঠিত প্রাইভি কাউন্সিলের এক সভায় বিদ্যালয়টির এলএমএস ডিপ্লোমা ডিগ্রি জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃতি পায়।[৫][৭][১২][১৪] এই স্বীকৃতির মাধ্যমে কলম্বো এলএমএস ডিগ্রিধারীরা নিবন্ধিত চিকিৎসক হিসেবে 'মেডিকেল আইন ১৮৮৬'-এর আওতায় চলে আসেন এবং ইংরেজ সাম্রাজ্যের যেকোনো জায়গায় চর্চা করার সুযোগ পান।[৫][১২] কোনোরকম স্নাতকেতর কোর্স পুনরায় অধ্যয়ন করার বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ইংল্যান্ডে স্নাতকোত্তর পড়াশুনা অব্যাহত রাখার পথও এর মাধ্যমে সুগম হয়।[১২]

১৮৮২ সাল থেকে কলেজটিতে নারী শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে পারতেন।[৬][১৪] ভ্যানডারস্ট্র্যাটের পর ১৮৯৮ সালে অ্যালান পেরি অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন।[৬] ১৯০৫ সালে কলেজটি সম্পর্কে দুটি অর্ডিন্যান্স পাশ করা হয়। অর্ডিন্যান্স নং ৩, ১৯০৫ অনুসারে গঠিত হয় সিলন মেডিকেল কলেজ কাউন্সিল।[৫][১২] অর্ডিন্যান্স নং ৫,১৯০৫ অনুসারে ডাক্তারি-সনদপ্রাপ্ত যেকোনো ব্যক্তিকে (কলম্বো এলএমএস'ধারীরা সহ) সিলন মেডিকেল কলেজ কাউন্সিল নিবন্ধিত করার ‌অনুমতি পায়।[৭][১২]

"সিলন বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স নং ২০,১৯৪২" অনুযায়ী, সিলন মেডিকেল কলেজ এবং সিলন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ একীভূত হয়ে ১৯৪২ সালের ১লা জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় সিলন বিশ্ববিদ্যালয়[১৫][১৬][১৭] মেডিকেল কলেজটি তখন নবসৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়টির ঔষধ অনুষদে পরিণত হয়।[৮]

অধ্যক্ষবৃন্দ সম্পাদনা

অধ্যক্ষ যোগদান প্রস্থান
জেমস লুস ১৮৭০ ১৮৭৫
এডউইন লাওসন কচ ১৮৭৫ ১৮৭৭
জুলিয়ান লুইস ভ্যানডারস্ট্র্যাট ১৮৭৮ ১৮৯৮
অ্যালান পেরি ১৮৯৮ ১৯১৫
ও.জে.রাদারফোর্ড
জে.এফ.ই. ব্রিজার
জে.এফ.এল. ব্রিরেলিফ
এস.টি. গুনাসেকেরা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mills, Lennox A. (১৯৩৩)। Ceylon Under British Rule (1795 - 1932)Oxford University Press। পৃষ্ঠা 262। 
  2. Wijesinghe, F. D. C. (১২ জুলাই ২০০২)। "Women in the medical profession"The Island (Sri Lanka)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০২১ 
  3. Fonseka, Carlo। "Development of Health in Sri Lanka"। ২০১০-১১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. Martyn, John H. (১৯২৩)। Notes on Jaffna - Chronological, Historical, BiographicalTellippalai: American Ceylon Mission Press। পৃষ্ঠা 335। আইএসবিএন 81-206-1670-7 
  5. Arnold Wright, সম্পাদক (১৯৯৯)। Twentieth Century Impressions of CeylonAsian Educational Services। পৃষ্ঠা 225–226। 
  6. "University History: A Glimpse into the History of the Oldest Medical School in Sri Lanka" (পিডিএফ)University of Colombo NewsletterUniversity of Colombo1 (2): 2। সেপ্টেম্বর ২০০৮। ২০১২-০৮-০৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. Samarasekera, Ananda (২৮ জুলাই ২০০৩)। "Sri Lanka Medical Council: Past, Present and the Future"The Island (Sri Lanka)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০২১ 
  8. "History of the Faculty of Medicine"Faculty of Medicine, University of Colombo 
  9. Arnold Wright, সম্পাদক (১৯৯৯)। Twentieth Century Impressions of CeylonAsian Educational Services। পৃষ্ঠা 76। 
  10. Arumugam, Thiru (১৪ মার্চ ২০১০)। "The human drama underneath the factual medical, historical material"The Sunday Times (Sri Lanka) 
  11. Ferguson, John (১৯৯৪)। Ceylon in the Jubilee YearAsian Educational Services। পৃষ্ঠা 29। আইএসবিএন 81-206-0963-8 
  12. Margaret Jones; Amala de Silva (২০১৩)। "7: Good Health at Low Cost - The Sri Lankan Experience"। Milton James Lewis, Kerrie L. Macpherson। Health Transitions and the Double Disease Burden in Asia and the Pacific: Histories of Responses to Non-communicable and Communicable DiseasesRoutledge। পৃষ্ঠা 126–141। আইএসবিএন 978-0-415-57543-0 
  13. "About Us"। Sri Lanka Medical Council। 
  14. "Colombo Medical School Centenary"British Medical Journal3 (5724): 659। ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭০। ডিওআই:10.1136/bmj.3.5724.659  
  15. Ratnapala, Noeline S. (১৯৯১)। "Beginnings of University Education in Sri Lanka; in Retrospect" (পিডিএফ)Vidyodaya Journal of Social Science5 (1&2): 92। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  16. Abeygunawardene, H. (২৩ ডিসেম্বর ২০০২)। "University of Peradeniya - more open than usual"Daily News (Sri Lanka)। ২৭ মে ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  17. Banduwardena, Rupa (৯ অক্টোবর ২০১১)। "University of Ceylon, Peradeniya – its glorious past"Sunday Observer (Sri Lanka)। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।