সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী
সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী হচ্ছে সিঙ্গাপুরের সামরিক বাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সিঙ্গাপুরে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী কাজ করতো। সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীর শেকড় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যেই রয়েছে; গুরুত্বপূর্ণভাবে সিঙ্গাপুরে মাদ্রাজ রেজিমেন্টের সৈন্যরা কাজ করতো যারা তামিল ভাষী ছিলো এবং ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার পর সিঙ্গাপুরে তামিল ভাষাকে অন্যতম সরকারী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সৈন্যই চীনা ভাষার।
সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী | |
---|---|
Tentera Singapura (মালয়) 新加坡陆军 (চীনা) சிங்கப்பூர் தரைப்படை (তামিল) | |
![]() সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী ক্রেস্ট | |
প্রতিষ্ঠা | ১২ মার্চ ১৯৫৭ |
দেশ | ![]() |
আনুগত্য | ![]() |
শাখা | সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী |
ধরন | স্থলবাহিনী |
ভূমিকা | স্থলযুদ্ধ |
আকার | ৪৮,২০০ সৈন্য |
অংশীদার | চিত্র:Crest of the Singapore Armed Forces.png সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী |
নীতিবাক্য | Yang Pertama Dan Utama (মালয়) (দ্রুত এবং ক্ষিপ্র) শক্তি সর্বদা প্রস্তুত |
কুচকাত্তয়াজ | সিঙ্গাপুর পদাতিক রেজিমেন্ট মার্চ |
কমান্ডার | |
সর্বাধিনায়ক | রাষ্ট্রপতি হালিমা ইয়াকুব |
প্রতিরক্ষামন্ত্রী | ডক্টর এনজি এং হেন |
সশস্ত্র বাহিনী প্রধান | লেফটেন্যান্ট জেনারেল মেলভিন অং |
সেনাবাহিনী প্রধান | মেজর জেনারেল গোহ সি হোউ |
চীফ অব জেনারেল স্টাফ | ব্রিগেডিয়ার কেনেথ লিও |
সার্জেন্ট মেজর অব দ্যা আর্মি | সার্জেন্ট চুয়া গোয়া হোয়ান |
প্রতীকসমূহ | |
পতাকা | ![]() |
মাত্র ৭০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ সিঙ্গাপুরে সৈন্য সমাবেশ করা খুবই কঠিন কাজ ছিলো, তাও ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'মালয় কমান্ড' (বর্তমানে মালয়েশিয়া ভূখণ্ডতে অবস্থিত) সদর দপ্তরের অধীনস্থ দুটি ব্রিগেড সিঙ্গাপুরে ছিলো, এবং ঐ দুটোই ছিলো পদাতিক বাহিনীর, এরা যুদ্ধে জাপানী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী সিঙ্গাপুর ত্যাগ করে এবং সিঙ্গাপুর ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার অধীনে ছিলো তাই ১৯৬৯ সালের আগ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর সরকার সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী বানানোর কোনো চেষ্টা করেনি কারণ সিঙ্গাপুর আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হয় ১৯৬৫ সালের ৯ আগস্ট যদিও সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী তৈরির বছর ধরা হয় ১৯৫৭ সালের ১২ই মার্চ কারণ ঐদিন মালয়েশীয় সেনাবাহিনী তৈরি করা হয় অস্থায়ী ভাবে। সিঙ্গাপুর স্বাধীন হলে চার বছর পর ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে দুঃখ ভারাক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ সিঙ্গাপুরের সেনাবাহিনী বানানোর জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, তিনি তারপর 'সিঙ্গাপুর পদাতিক রেজিমেন্ট' নামের একটি রেজিমেন্ট গড়ে তোলার নির্দেশ দেন তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে, ১৯৭২ সালে সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার দুরূহ কাজ হাতে নেন লি কুয়ান ইউ, সেনাবাহিনীর নিজস্ব কোনো ইতিহাস, ঐতিহ্য না থাকায় তিনি খুবই চিন্তিত ছিলেন, তিনি পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন সৈন্যবাহিনী তৈরি করার জন্য। সিঙ্গাপুরের উত্তরে মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া - এই দুটো দেশ থেকে তার দেশে কোনো হুমকি আসার সম্ভাবনাকে তিনি উড়িয়ে দিচ্ছিলেন না, তাছাড়া সিঙ্গাপুরের জাতীয় একটি পরিচয়ের জন্য সেনাবাহিনী তৈরির প্রয়োজনীয়তা খুবই শক্তভাবে অনুভূত হয়। সিঙ্গাপুরের নিজস্ব ভূখণ্ড খুবই ছোটো কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন তার দেশের অর্থনীতি এবং সামরিক বাহিনী শক্তিশালীকরণের ব্যাপারে। সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীর জন্য মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, যুদ্ধ কৌশল-অনুশীলন সবই চালু করেন, মার্কিনদের মত পোশাকও চালু করা হয়। সেনা ফরমেশন শুরুতে কেবল তিনটি মাত্র ব্যাটেলিয়ন রাখা হয় তবে সত্তরের দশকে সিঙ্গাপুর সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি সিঙ্গাপুরের বন্ধু রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াতে রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেন লি কুয়ান ইউ। সেনাবাহিনীর পদমর্যাদাগুলো মার্কিনদের আদলেই করা হয়।[১][২] লি কুয়ান ইউয়ের উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী গোহ চক তং সিঙ্গাপুরের সেনাবাহিনীকে লি কুয়ান ইউয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ীই সাজাচ্ছিলেন আর লি সিয়েন লুং যিনি লি কুয়ান ইউয়ের ছেলে ছিলেন তিনি রাজনীতিতে আসার আগে এই সেনাবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন, ১৯৭১ সালে লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগ দেওয়া লি সিয়েন লুং ১৯৮০-এর দশকে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন, তখন তার পদবী ছিলো ব্রিগেডিয়ার।
সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীতে পদাতিক, সাঁজোয়া, গোলন্দাজ, প্রকৌশল সব ধরণের শাখাই রয়েছে, রয়েছে সংকেত প্রদান বাহিনী (সিগনালস), চিকিৎসা পরিষেবা বাহিনী এবং কমান্ডো শাখা; তবে অধিকাংশ ঘাঁটিই খুবই ছোটো কারণ সিঙ্গাপুরে বেশি জায়গা নেই। সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীর পাঁচটি ডিভিশন ফরমেশন রয়েছে তবে এগুলো অপূর্ণাঙ্গ এবং অর্ধ-সজ্জিত এবং সবকটি ডিভিশনই মূলত ছোটোখাটো ব্যাটেলিয়নের সমপর্যায়ের; সিঙ্গাপুরের সৈনিক এবং কর্মকর্তাদের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ একই সঙ্গে 'সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র' (ইংরেজিতে 'সিঙ্গাপুর আর্মড ফোর্সেস ট্রেনিং ইন্সটিটিউট')-এ হয়, আগে সিঙ্গাপুরের সামরিক সদস্যরা ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান এবং ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিতো তবে এখনো উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য সিঙ্গাপুরীয়রা এইসব দেশেই যায়।
১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে সেনাপ্রধানের কোনো পদ ছিলোনা, বাহিনীটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব (অসামরিক) চালাতেন। ১৯৯০ সালে ব্রিগেডিয়ার বোয়ে টেক হ্যাপ নামের একজন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনিই ছিলেন সিঙ্গাপুরের প্রথম সামরিক উর্দি পরিহিত সেনাপ্রধান।[৩]
চিত্রশালাসম্পাদনা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর সৈন্যদের সঙ্গে সিঙ্গাপুরীয় সৈন্যদের সহ-যুদ্ধ অনুশীলন
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Singapore Armed Forces Act"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Singapore Armed Forces Come Into Effect"। HistorySG। National Library Board Singapore। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Organisation Structure"। ২৯ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
উইকিমিডিয়া কমন্সে সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনী সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |