সামুরা ইবনে জুনদুব
সামুরা ইবনে জুনদুব মুহাম্মাদের একজন বিশিষ্ট সাহাবা ছিলেন। তিনি একজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা ছিলেন। তিনি উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
নাম ও পরিচয়
সম্পাদনাতার পুরো নাম আবু সাঈদ সামুরা ইবনে জুনদুব ইবনে হিলাল ইবনে হারিজ ইবনে মুররাহ ইবনে হাযন ইবনে আমর ইবনে জাবের ইবনে জিররিয়াসাতইন আল-ফাযারি। তিনি আনসারী পরিবারে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। তার কুনিয়াত বা উপনাম আব্দুর রহমান বা আবু সাঈদ, ইবনে হাজর বলেছেন তার উপনাম আবু সোলাইমান, অন্য একটি বর্ণনায় তার উপনাম আবু আব্দুল্লাহ আবু মুহাম্মদ পাওয়া যায়।
বাল্যকাল
সম্পাদনাইবনে আব্দুল বার বলেন, সামুরা ইবনে জুনদুবের পিতা তার সন্তান সামুরাকে শিশু অবস্থায় তার মায়ের কোলে রেখে মারা যান, তার মা সুন্দরী নারী, তিনি মদিনায় আগমন করলে অনেকেই তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন, অতঃপর তিনি এক আনসারী ব্যক্তিকে বিবাহ করেন এনং মদিনাতে বসবাস শুরু করেন।
সামুরা বাল্যকাল থেকে শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদের ব্যপারে উদগ্রীব ছিলেন। বাল্যকালে তিনি একবার মুহাম্মাদের সামনে প্রতিপক্ষ অন্য একটি বালককে মল্লযুদ্ধে হারিয়েছিলেন। এই ঘটনার পরে তিনি বাল্যকালেই উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেন।
গুণাবলী
সম্পাদনাসামুরা ইবনে জুনদুব একজন সাহসী, জ্ঞানী ও জিহাদে অনুরক্ত সাহাবা ছিলেন। তিনি একজন কুরআনের হাফেজ ছিলেন। তার সম্পর্কে ইবনে আব্দুল বার বলেছেন, সামুরা মুহাম্মাদ থেকে বেশি হাদিস মুখস্তকারীদের অর্ন্তভুক্ত ছিলেন। তিনি কিছুটা কঠোর চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, বেদআতপন্থী, অপরাধী ও পথভ্রষ্টদের সাথে তিনি শক্ত আচরণ করতেন। এজন্য মুহাম্মাদ তাকে পছন্দও করতেন।
অভিযোগ
সম্পাদনাএকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তার একটি বাগান ছিলো, একটি পরিবারের গোপনীয়তা রক্ষা অসুবিধার কারণে সেই বাগানটি বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ঐ পরিবারের প্রধান, কিন্তু তিনি বাগান বিক্রি করতে রাজি হননি। পরে মুহাম্মাদও তাকে বাগানটি বিক্রি করার পরামর্শ দেন, তিনি তাতেও রাজি হননি। তবে এই হাদিসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, হাদিস বিশারদগন হাদিস বর্ণনাকারি রাবীর জন্মসাল পর্যালোচনা করে হাদিসকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বসরায় শাসন
সম্পাদনাসামুরা বসরায় বসবাস করতেন। যিয়াদ তাকে ৬ মাসের জন্য বসরার ও ৬ মাসের জন্য কুফার শাসক মনোনীত করেন। যিয়াদের মৃত্যুবরণের পর তাকে বসরার শাসক মনোনীত করা হয়। অতঃপর মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান তাকে বসরার শাসক হিসাবে বহাল রাখেন এরপর অপসরণ করেন। তিনি নাজদাতুল হারুরিদের উপর খুবই কঠোর ছিলেন। তাদের কাউকে তার কাছে আনা হলেই তাকে হত্যা করতেন, এবং বলতেন আমার কাছে এ হত্যাকান্ড আকাশের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে হত্যাকান্ড। তারা মুসলমানদেরকে কাফেরে পরিণত করছে এবং রক্তপাত করছে।
মুহাম্মদ ইবনে সিরিন, হাসান বসরীসহ বসরার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ তার প্রশংসা করতেন এবং তার দাওয়াত গ্রহণ করতেন। ইবনে সিরিন তার সন্তানদের বলেন, সামুরার অসিয়তের মধ্যে অনেক জ্ঞান লুকায়িত আছে।
মৃত্যুবরণ
সম্পাদনা৫৮ হিজরি ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে বসরা নগরীতে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের খিলাফত আমলে সামুরা মৃত্যু হয়েছিল। তবে কিছু বর্ণনায় তার মৃত্যু সাল খিলাফাতের শেষ দিকে ৫৯ হিজরি অথবা ৬০ হিজরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
মৃত্যুর কারণ
সম্পাদনাতিনি ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত ছিলেন বিধায় উক্ত ডেকের উপর বসে ধনুষ্টংকারের চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। একদিন তিনি গরম পানি ভর্তি ডেকের মধ্যে পড়ে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তার এ মৃত্যুতে মুহাম্মাদের একটি ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়। একদিন সামুরা, আবু হুরায়রা ও অন্য একজন সাহাবা একত্রে বসে ছিলেন, তখন মুহাম্মাদ তাদের বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যকার সর্বশেষ ব্যক্তি আগুনে পতিত হবে।
মুহাম্মদ ইবনে সিরিন বলেন, সামুরা কঠিন ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত ছিলেন, কোন ভাবেই তিনি তা প্রতিরোধ করতে পারছিলেন না। ফলে একদিন তিনি একটি বিরাট ডেক এনে তাতে পানি ভর্তি করে নিচে আগুন জ্বালানোর নির্দেশ দিলেন এবং তিনি ডেকের উপর বসার স্থান তৈরী করেন। কারণ আগুনের ধোঁয়া তার শরীরে পৌঁছালে রোগের উপশম হত। এভাবে থাকা অবস্থায় হটাত তিনি নিচে পড়ে যান, এই কারণেই তার মৃত্যু হয়।