সাফিয়া বিবি ধর্ষণ মামলা
সাফিয়া বিবি ধর্ষণ মামলাটি ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের সাহিওয়ালে সাফিয়া বিবি নামে প্রায় এক অন্ধ কিশোরীকে তার নিয়োগকর্তার ধর্ষণ সম্বন্ধিত। যখন মেয়েটি আদালতে ধর্ষণ প্রমাণ করতে অক্ষম হন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শরিয়ত অনুপ্রাণিত হুদুদ অধ্যাদেশের অধীনে ব্যভিচারের অভিযোগ আনা হয় এবং তাঁকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, সঙ্গে ১৫টি বেত্রাঘাত এবং জরিমানা করা হয়।[১]
সাফিয়া বিবি ধর্ষণ মামলা | |
---|---|
স্থান | সাহিওয়াল, পাকিস্তান |
তারিখ | ১৯৮২-১৯৮৩ |
হামলার ধরন | ধর্ষণ |
ভুক্তভোগী | সাফিয়া বিবি |
হামলাকারী দল | মাকসুদ আহমেদ, মুহাম্মদ আলী |
ঘটনা
সম্পাদনাস্থানীয় বাড়িওয়ালার বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত সাফিয়া বিবিকে বাড়িওয়ালার ছেলে মাকসুদ আহমেদ এবং বাড়িওয়ালা মুহাম্মদ আলী নিজেই ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের কারণে, সাফিয়া গর্ভবতী হন এবং একটি সন্তান প্রসব করেন যে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। ১৯৮২ সালের ১৫ জুলাই সাফিয়ার বাবা স্থানীয় থানায় জানান যে তাঁর মেয়েকে মাকসুদ আহমেদ ও মুহাম্মদ আলী ধর্ষণ করেছে এবং এর ফলে সে একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে। সাফিয়া এবং মাকসুদ আহমেদ উভয়কেই চিকিৎসাগতভাবে পরীক্ষা করার পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।[২] তার বাবা-মা দাবি করেন যে, প্রতিশোধ ও অপমানের ভয়ে ধর্ষণের খবর আগে জানানো হয়নি।[৩]
বিচার এবং সাজা
সম্পাদনাপাকিস্তানের সাহিওয়াল জেলার দায়রা আদালতে এই মামলার বিচার করা হয়। শরিয়াহ আইনের হুদুদ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্ষণ প্রমাণ করার জন্য চারজন পুরুষ সাক্ষীর পাশাপাশি অপরাধীদের চাক্ষুষ সনাক্তকরণের প্রয়োজন হবে। সাফিয়া এই প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে অক্ষম ছিল এবং এর ফলে, অপরাধীরা একই দিনে বেকসুর খালাস পায়।[৩]
১৯৮৩ সালের ২৪ জুলাই হুদাদ অধ্যাদেশের অংশ জিনা (বিবাহ বহির্ভূত) অধ্যাদেশের অধীনে সাফিয়ার বিচার করা হয় এবং জিনার (ব্যভিচার) জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাকে প্রকাশ্যে চাবুক মারা (১৫ বার বেত্রাঘাত), ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ১,০০০ টাকা জরিমানার শাস্তি দেওয়া হয়।[৪] তিনি অবিবাহিত ছিলেন এবং ধর্ষণের কারণে গর্ভবতী হওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন, এই তথ্যতার প্রমাণ হিসেবে তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়।[২]
জন প্রতিবাদ এবং খালাস
সম্পাদনাএই সাজা জনসাধারণ এবং নারী অধিকার ফোরাম গ্রুপের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি নারী অধিকার গোষ্ঠীর দ্বারা প্রতিবাদের ঝড় তোলে।[১] দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি উত্থাপন করার জন্য বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল। এই মামলাটি পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে পাকিস্তানের বিব্রতকর কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম প্রশ্ন করেছিল এবং তাকে উপযুক্ত উত্তরের জন্য পাকিস্তানে ফিরে যোগাযোগ করতে হয়েছিল।
বিশাল বিক্ষোভ এবং অস্বস্তির পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেল শরিয়ত আদালত মামলাটি পর্যালোচনার জন্য নিজের কাছে স্থানান্তর করতে বলে। পর্যালোচনায় ফেডারেল শরিয়ত আদালত প্রযুক্তিগত কারণে সাফিয়া বিবিকে বেকসুর খালাস করে দেয়। যদিও, তিনি ইতোমধ্যে ছয় মাস কারাগারে কাটিয়েছেন এবং ততক্ষণে ১৫ টি বেত্রাঘাতের শিকার হয়েছেন।[৪]
পরে
সম্পাদনামামলাটি সামনে আনা এবং শরিয়া ভিত্তিক হুদুদ অধ্যাদেশ এবং এর কারণে মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক অবস্থান সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।[৩] আন্তর্জাতিক প্রচার পাকিস্তান সরকারকে বিব্রত করে, যার ফলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হকের সরাসরি হস্তক্ষেপের গুজব শোনা যায়, যিনি মামলাটি পর্যালোচনার জন্য ফেডারেল শরিয়ত আদালতে স্থানান্তরের আদেশ দেন।[৪]
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Khan, Shahid Reman (২৫ মে ১৯৮৬)। "Under Pakistan's Form of Islamic Law, Rape Is a Crime--for the Victims"। LA Times।
- ↑ ক খ Robyn Emerton (২০০৫)। International Women's Rights Cases। Psychology Press। পৃষ্ঠা 878। আইএসবিএন 9781859419069। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Robyn Emerton" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ ক খ গ Rebecca J. Cook (১৯৯৪)। Human Rights of Women: National and International Perspectives। University of Pennsylvania Press। পৃষ্ঠা 634। আইএসবিএন 9780812215380। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Rebecca J.Cook" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ ক খ গ Sangh Mittra (২০০৪)। Encyclopaedia of Women in South Asia: Pakistan। পৃষ্ঠা 312। আইএসবিএন 9788178351896। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Sangh Mittra" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে