সাধবা (বা সাধব ) ( ওড়িয়া: ସାଧବ)-রা ছিলেন কলিঙ্গ অঞ্চলের প্রাচীন নাবিক। প্রাচীন ভারতের কলিঙ্গ অঞ্চল আধুনিক ভারতের ওড়িশা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। সাধবারা বাণিজ্য পরিচালনার জন্য বোইটাস নামক বিশেষ জাহাজ ব্যবহার করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মতো দূরবর্তী দেশগুলিতে জলপথে গমন করত। [১]

কার্তিক পূর্ণিমার প্রথম প্রহর (অক্টোবর এবং নভেম্বরের পূর্ণিমার দিন) -কে সাধবারা তাদের দীর্ঘ যাত্রা শুরু করার জন্য একটি শুভ উপলক্ষ বলে বিবেচিত করতেন। [২] নারকেল, মাটির পাত্র, চন্দন, কাপড়, চুন, চাল, মশলা, লবণ, লবঙ্গ, কুমড়া, রেশমের শাড়ি, পান, সুপারি, হাতি, মূল্যবান ও অর্ধমূল্যবান পাথর ছিল তাদের বাণিজ্যের প্রধান সামগ্রী। এই উপজাতির মহিলারাও সমুদ্রযাত্রায় অংশ নিতেন। তারা সাধবানী নামে পরিচিত ছিলেন ( ওড়িয়া: ସାଧବାଣୀ সাধবাণী)। ওড়িয়া নাবিকরা পূর্বদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধহিন্দু ধর্মের প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও ভারতীয় স্থাপত্য, রামায়ণ এবং মহাভারতের মতো মহাকাব্য, ব্রাহ্মী লিপি লিখন পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে তাদের প্রমুখ যোগদান ছিল। সংস্কৃত সাহিত্যে অন্যান্য বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী যেমন খেমার, থাই, চাম, বালিনিজ ইত্যাদি অনেক দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ভাষায় বিভিন্ন ভারতীয় শব্দাবলীর উপস্থিতি দেখা যায়। মনে করা হয় সাধবাদের বানিজ্যযাত্রার জন্যই সেই অঞ্চলের ভাষায় বিভিন্ন ভারতীয় শব্দের প্রভাব পরেছিল।

গজপতি সাম্রাজ্যের পতনের সাথে ষোল শতকে সামুদ্রিক বাণিজ্য হ্রাস পায়, যা সাধবাদের পক্ষে অসুবিধাজনক হয়ে উঠেছিল।

প্রাচীন যুগে স্থল রেশম পথ এবং সামুদ্রিক রেশম পথ উপমহাদেশের দুটি স্বতন্ত্র ধরনের বাণিজ্য পথ ছিল যা বণিক নেতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। দুই প্রধান ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ছিল, শ্রেষ্ঠী এবং সার্থবাহশ্রেষ্ঠীরা শহর ও গ্রামে ব্যবসা করতেন এবং তারা স্থানীয় অঞ্চলের পন্যের প্রয়োজন পূরণ করতেন। অপরপক্ষে সর্থবাহ, যারা কাফেলা নেতা হিসাবেও পরিচিত, তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করতেন ও দেশী এবং বিদেশী উভয় পণ্যের ব্যবসা করতেন। তারা আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং স্থানীয় শ্রেষ্ঠীদের কাছে কাচামাল বিক্রেতা এবং সরবরাহকারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Sanyal, Sanjeev (২০১৬)। The Ocean of Churn: How the Indian Ocean Shaped Human History (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin UK। পৃষ্ঠা 84। আইএসবিএন 978-93-86057-61-7 
  2. Patnaik, Nihar Ranjan (১৯৯৭)। Economic History of Orissa (ইংরেজি ভাষায়)। Indus Publishing Company। পৃষ্ঠা 117। আইএসবিএন 81-7387-075-6