সাইদুর রহমান (বয়াতি)
সাইদুর রহমান বয়াতি একজন বাংলাদেশী গায়ক। তিনি বাউল রীতির লোক সঙ্গীত গেয়ে থাকেন [১] তিনি ২০১৩ সালে শিল্পকলা পদকে ভূষিত হন। এছাড়া ১৯৯৫ সালে সেরা পুরুষ নেপথ্য গায়ক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[২][৩][৪][৫][৬][৭]
সাইদুর রহমান বয়াতি | |
---|---|
জন্ম | ১৯৩১ (বয়সঃ ৮৫-৮৬) পশ্চিম হাসলি, মাণিকগঞ্জ, বাংলা প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | লোকগীতি |
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাসাইদুর রহমান বয়াতি ১৯৩১ সালে দক্ষিণ মানিকগঞ্জের পুটাইল ইউনিয়নের হাসলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জিগীর আলী। তার বাবাও গান গাইতেন।[৮]
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামানিকগঞ্জের পশ্চিম হাসলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন সাইদুর রহমান বয়াতি।[৯] ১৯৫৯ সালে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে তিনি অঙ্কে ফেল করেন। এরপর তিনি আর পড়াশোনা করেন নি।
ভাষা আন্দোলনে যোগদান
সম্পাদনা১৯৫১ সালে, তখন তার বয়স ছিলো ২০ বছর, পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় সাইদুর রহমান পায়ে হেটে ঢাকা এসেছিলেন জিন্নাহকে দেখতে। তিনি ঢাকায় এসে দেখলেন সবাই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর জন্য আন্দোলন করছে। এই আন্দোলন তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।[১০] তাদের আন্দোলন দেখে তিনি একটা কবিতা লিখলেন,
"আমার ভাষায় বলবো কথা।
তোদের কেন মাথা ব্যাথা?
এই ভাষাতে জুড়ায় প্রাণ,
তোদের কি তাতে যায় রে মান?
এই কবিতায় সুর দিয়ে গান হিসেবে গেয়ে বেড়াতেন তিনি।[৯]
মুক্তিযুদ্ধে যোগদান
সম্পাদনা১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। সাইদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। সহযোদ্ধাদের সাহস দেয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন গান ও কবিতা লিখতেন।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড
সম্পাদনাপারিবারিক ভাবেই সাইদুর রহমান সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। তিনি অভিনয়, গান লেখা, সুর দেওয়া, গাওয়া ইত্যাদিতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
যাত্রাপালা
সম্পাদনাছোটবেলায় সাইদুর রহমান যাত্রাপালায় অভিনয় করতেন। তিনি বড় চুল রেখেছিলেন যাত্রাপালায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। সেসময় "রানী" নামের একজন নায়িকা বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সাইদুর রহমান বয়াতিই হলেই সেই "রানী"। তিনি রানী ছদ্মনামে অভিনয় করতেন।[৯]
চলচ্চিত্র
সম্পাদনাসাইদুর রহমান বয়াতি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে নদীর নাম মধুমতি, লাল সালু, চিত্রানদীর পাড়ে, লালন, লিলি পুটেরা বড় হও ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নদীর নাম মধুমতি চলচ্চিত্রে গানের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[৯][১১]
গান
সম্পাদনা১৫ বছর বয়স থেকে তিনি গান লিখছেন। এই পর্যন্ত আধ্যাত্মিক গানের ধারায় জারি, সারি, ভাটিয়ালি, বাউল, মারফতি, নবীতত্ত্ব, কবিগান, মুর্শিদি, গাজীর গান, মালসি, সখী সম্পাত, দমতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব এমন প্রায় পঞ্চাশ শাখায় প্রায় ৩ হাজার গান লিখেছেন।[১২] ১৯৭৮ সালে তার প্রথম গানের ক্যাসেট বের হয়।
কর্মজীবন
সম্পাদনাসাইদুর রহমান বয়াতি নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন। এই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি মানিকগঞ্জে কো-অপারেটিভ ব্যাংকে কাজ নেন। কিন্তু ব্যাংকের হিসেবের খাতায় গান লেখাসহ বিভিন্ন কারণে তার চাকরি চলে যায়। এরপর গান গেয়ে ও মুদি দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। রেডিও,[১৩] টেলিভিশন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে, অভিনয় করে অর্থ উপার্জন করেন তিনি।
শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সম্পর্ক
সম্পাদনা১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় সাইদুর রহমান বয়াতি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিজের লেখা একটি গান গেয়ে শোনান। এতে শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত খুশি হয়ে তাকে একটি ঘড়ি উপহার দেন।[৯]
পরিবার
সম্পাদনা১৯৬৭ সালে সাইদুর রহমান সালেহা বেগমকে বিয়ে করেন। এই দম্পতি ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে জন্ম দিয়েছে। তাদের বড় ছেলে আবুল বাশার আব্বাসীও একজন সঙ্গীত শিল্পী। তিনি রেডিও-টেলিভিশনে গান গেয়ে থাকেন।[১৪]
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Shawon, Rashed (ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩)। "প্রথম 'শিল্পকলা পদক' পেলেন যারা" (Bengali ভাষায়)। risingbd.com। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৯, ২০১৬। CS1 maint: Unrecognized language (link)
- ↑ "Shilpakala Padak conferred"। The Daily Star। জানুয়ারি ১, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ মে ৪, ২০১৬।
- ↑ "মানিকগঞ্জে সাইদুর রহমান বয়াতীর 'লোকজ মেলা "সমাপ্ত"। BANGLA NEWS US। ২০১৬-১০-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "এখন বাউলরা লালনের নাম ভাঙিয়ে খায় : সাইদুর রহমান বয়াতি"। Risingbd.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৫।
- ↑ "ব্যাংকের হিসাবের খাতায় গান লেখায় আমার চাকরি চলে যায় | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৫।
- ↑ "জাদুঘরে সাইদুর রহমান বয়াতীর পালাগানের আসর || শেষের পাতা"। দৈনিক জনকণ্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "পালাগানের জমজমাট আসর জাদুঘরে"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৫।
- ↑ "সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র সায়েদুর রহমান বয়াতী"। The Daily Sangram - দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "সাইদুর রহমান বয়াতী : লোকসঙ্গীতের এক নিষ্ঠাবান সাধক – Zago Manikganj" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৬।
- ↑ "গানে গানে ভাষা আন্দোলন । বাংলাদেশ"। RTV Online। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৬।
- ↑ "নদীর নামে ছবির নাম - Bhorer Kagoj"। Bhorer Kagoj (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-০৬T১৪:২৯:১৯+০৬:০০। ২০১৮-০১-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2018-01-26। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Nasir, Mr.। "এখন বাউলরা লালনের নাম ভাঙিয়ে খায় : সাইদুর রহমান বয়াতি" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৬।
- ↑ "'মন আমার দেহ ঘড়ি' গানের শিল্পী: আবদুর রহমান বয়াতি | মুন্সিগঞ্জের খবর"। মুন্সিগঞ্জের খবর (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০৭-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৬।
- ↑ Team, Samakal Online। "শীতাতপ কক্ষে পালার সুর"। সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০১-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৬।