সরস্বতী রাজামণি

ভারতীয় জাতীয় বাহিনীর অফিসার

সরস্বতী রাজামণি ( ১৯২৮ - ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮) ছিলেন ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর (আইএনএ) একজন সৈনিক। সেনাবাহিনীর সামরিক গোয়েন্দা শাখায় কাজ করার জন্য তিনি সুপরিচিত। তিনি রানি ঝাঁসি ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট হয়েছিলেন। নীরা আর্য তার সহকর্মী ছিল।


তিনি সম্প্রতি ইউটিউবে 'ভয়েস অফ এ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্ডিয়ান' শীর্ষক একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিতে উপস্থিত হয়েছিলেন।

শৈশব সম্পাদনা

রাজামনির জন্ম বার্মার রেঙ্গুনে (বর্তমান মিয়ানমারে ইয়াঙূ)। তার বাবা সোনার খনির মালিক ছিলেন এবং রেঙ্গুনের অন্যতম ধনী ভারতীয় ছিলেন। তার পরিবার ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের কট্টর সমর্থক এবং এই আন্দোলনে অর্থ দিয়ে সাহায্য করছিল।[১][২]

রেঙ্গুনে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাষণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৬ বছর বয়সী সরস্বতী তার সমস্ত গহনা আইএনএতে দান করেছিলেন। অল্প বয়সী মেয়ে নির্বোধভাবে গহনা দান করেছে বুঝতে পেরে নেতাজি তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। তবে রাজমণি অনড় ছিলেন যে তিনি এটি সেনাবাহিনীর জন্যই ব্যবহার করবেন। তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় মুগ্ধ হয়ে তিনি তার সরস্বতীর নামকরণ করেছিলেন।[১][২]

ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে কাজ সম্পাদনা

১৯৪২ সালে, রাজামণি আজাদ আজাদ হিন্দ ফৌজেররানি ঝাঁসি রেজিমেন্টে নিযুক্ত হন এবং সেনাবাহিনীর সামরিক গোয়েন্দা শাখার অন্তর্ভুক্ত হোন।[৩]

প্রায় দুই বছর ধরে, রাজামণি এবং তার কিছু মহিলা সহকর্মী ছেলে হিসাবে ছদ্মবেশে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। ছেলে হিসাবে সেজে থাকার সময় তার নাম ছিল মণি। একবার, তার এক সহকর্মী ব্রিটিশ সেনার হাতে ধরা পড়ে। তাকে উদ্ধার করার জন্য, রাজমণি নর্তকীর পোশাক পরে ব্রিটিশ শিবিরে অনুপ্রবেশ করেছিলেন। তিনি দায়িত্বরত ব্রিটিশ অফিসারদের নেশাগ্রস্থ করেছিলেন এবং তার সহকর্মীকে মুক্ত করেছিলেন। তারা পালানোর সময় একজন ব্রিটিশ রক্ষী রাজামনিকে তার পায়ে গুলি করেছিল, কিন্তু তারপরও উনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হোন।[১][২][৪]

পরের বছরগুলো সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, রাজামনির পরিবার সোনার খনি সহ তাদের সমস্ত সম্পত্তি দান করে দিয়ে ভারতে ফিরে এসেছিল।[২] ২০০৫ সালে একটি পত্রিকা জানিয়েছিল যে তিনি চেন্নাইতে বাস করছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পেনশন পেলেও, তিনি অত্যন্ত কষ্টে জীবন যাপন করছিলেন। তিনি তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলেন তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা তাকে পাঁচ লাখ টাকার এককালীন অনুদান এবং বিনা ভাড়ায় একটি আবাসন ফ্ল্যাট দিয়ে সহায়তা করেছিলেন।[৩][৪]

তিনি ওড়িশার কটকের নেতাজি সুভাষ জন্মস্থান জাতীয় জাদুঘরের আইএনএ গ্যালারিতে স্বাক্ষর দান করেছেন।[৫]

২০১৬ সালে, ইপিক চ্যানেল তার গল্পটি টেলিভিশন সিরিজ আদ্রস্যায় দেখিয়েছিল।[৬]

মৃত্যু সম্পাদনা

মুক্তিযোদ্ধা শ্রী সরস্বতী রাজামণি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮ এ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা গেলেন। তার শেষকৃত্য চেন্নাইয়ের রায়পেট্টাহের পিটার্স কলোনীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "An INA veteran lives in penury"The Hindu। জুন ১৭, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬ 
  2. "The forgotten spy"Reddif.com। আগস্ট ২৬, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬ 
  3. "Jaya dole for Netaji spy"The Telegraph। জুন ২২, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬ 
  4. "INA veteran has something to give too"The Hindu। জুন ২১, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬ 
  5. "INA memorabilia to be displayed in Netaji museum"Hindustan Times। অক্টো ১৭, ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬ 
  6. "Watch Adrishya – Epic TV Series – India's Greatest Spies – epicchannel.com"Epic Channel। ১০ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬