সম্বল (ড্রাম)
সম্বল হল পশ্চিম ভারতের একটি লোকজ ঝিল্লিস্বরী যন্ত্র।[১] এটি দুটি কাঠের ড্রামের সমন্বয়ে গঠিত, ড্রামদুটি মাথার দিকে পশু চামড়ার ঢাকা দিয়ে সংযুক্ত থাকে। একটি ড্রাম অন্যটির তুলনায় উচ্চস্বরী। দুটি ছোট লাঠি দিয়ে এই যন্ত্রটি বাজানো হয়, একটি লাঠির মাথা গোলাকার। সম্বল হল গোন্ধালিদের একটি ঐতিহ্যবাহী লোক ড্রাম। এটি পশ্চিম ভারতের দাদরা, নগর হাভেলি, মহারাষ্ট্র এবং গোয়ার কোঙ্কনি লোকদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
গোন্ধালি এবং কোঙ্কনি সম্প্রদায়, যারা ভগবান মহলক্ষ্মী দেবীর দাস, তাদের জন্য সম্বল হল একটি ঐতিহ্যবাহী উপকরণ। তারা এটি বাজিয়ে ভগবানের গান করে। এটি গোন্ধাল পূজাতে ব্যবহৃত হয়।
বাদন শৈলী
সম্পাদনাদুটি ড্রাম সাধারণত আকার এবং সুরে আলাদা হয়, একটি অন্যটির চেয়ে উচ্চ সুরে বাঁধা থাকে। বাজানোর লাঠিগুলির উভয় দিকই ব্যবহার করা যায়, তাদের প্রান্তগুলি আলাদা রকমের হয় — একটি সরল এবং সোজা, অন্যটির প্রান্ত বৃত্তাকার।[২]
যন্ত্রটি কোমরে বাঁধা হয় এবং মিছিলের সময় বাজানো হয়, মহারাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, গণপতি বিসর্জনের সময়, এটি বাজানো হয়। মেঝেতে ড্রাম স্থাপন করেও বাজানো হয়, সেই ক্ষেত্রে বাদকও মাটিতে বসে। [২]
গ্রামগুলিতে, সানাইয়ের সঙ্গতকারী হিসাবে সম্বল বাজানো হতে পারে এবং কখনও কখনও একক উপকরণ হিসাবেও বাজানো হয়। দ্বিতীয়ক্ষেত্রে শিল্পী একই সঙ্গে গান করে এবং যন্ত্রটি বাজায়।[২] সম্বল বাদক গায়কের ডান পাশে দাঁড়িয়ে বাজায়, এবং টুনটুনা বাদক বাম দিকে দাঁড়ায়। সম্বল শিল্পী সাধারণত সমবেত গানে অংশ নেয় বা প্রধান গায়কদের প্রশ্নের উত্তর দেয়।[২]
বাজানোর সময়
সম্পাদনামহারাষ্ট্রীয় বিবাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হল গোন্ধাল, যা বিবাহের রাতে সম্পাদিত হয়, এবং সেই সময় সম্বল বাজানো হয়।[২] দেবী তুলজাভাবাণীর সম্মানে অনুষ্ঠিত গোন্ধাল পুজোর সময় সম্বল বাজানো হয়। বিবাহ ও নিয়মিত শোভাযাত্রা ছাড়াও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিতে সম্বল বাজানো হয়।[২]
নবরাত্রির সময়, অনেক মহারাষ্ট্রীয় বাড়িতে গোন্ধালিদের বাদন একটি অবশ্যকর্ম। গ্রামগুলি ছাড়াও, বহু শহরে, নয় দিনের জন্য টুনটুনা, সম্বল এবং সিম্বাল নিয়ে ভক্তিমূলক গান গাওয়ার জন্য গোন্ধালিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।[২]
বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনাছত্রপতি শিবাজি ছিলেন এই শিল্পরূপের এক মহান পৃষ্ঠপোষক। আজকের দিনে অনেক গোন্ধালি বাদকই পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকরির খোঁজে শহরে চলে যাচ্ছে। এই জাতীয় লোক বাদ্যের অনুশীলন ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। [২]