শ্রীপুর বুড়া মসজিদ
শ্রীপুর বুড়া মসজিদ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীর একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ।[১] প্রতি শুক্রবার জুমার দিন এখানে দেশ বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগম ঘটে বরকত, ফজিলত ও পূণ্যের আশায়। জাতি-ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সারাদেশের মানুষের কাছে পুণ্যময় তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত এ বুড়া মসজিদ।
শ্রীপুর বুড়া মসজিদ | |
---|---|
শ্রীপুর বুড়া মসজিদ | |
স্থানাঙ্ক: ২২°২৪′০৭″ উত্তর ৯১°৫৮′১৭″ পূর্ব / ২২.৪০১৯৬৩৬° উত্তর ৯১.৯৭১২৯৮৬° পূর্ব | |
অবস্থান | ৮নং শ্রীপুর খরণদ্বীপ বোয়ালখালী উপজেলা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ |
প্রতিষ্ঠিত | ১৮৮৬ |
শাখা/ঐতিহ্য | ইসলাম (সুন্নি) |
প্রশাসন | সামাজিকভাবে পরিচালিত |
স্থাপত্য তথ্য | |
ধরন | আধুনিক স্থাপত্য, বর্তমান |
ধারণক্ষমতা | প্রায় ৩,০০০ |
দৈর্ঘ্য | ১৮২ ফুট |
প্রস্থ | ১১৮ ফুট |
আবৃত স্থান | ১.৩১ একর |
মিনার | ১টি |
মিনারের উচ্চতা | ৮৬ ফুট |
ভবনের উপকরণ | চুন সুরকি (পুরাতন) কংক্রিট (বর্তমান) |
অবস্থান
সম্পাদনাচট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থল হতে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ[২] ও শ্রীপুর মুন্সির হাট সংলগ্ন এলাকায় এই মসজিদের অবস্থান।
ইতিহাস
সম্পাদনাশ্রীপুর বুড়া মসজিদ বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এটি শ্রীপুর শাহী বুড়া মসজিদ নামেও পরিচিত। প্রায় ৩শ বছর আগে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে এ মসজিদ ঠিক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক দিনক্ষণ জানা যায়নি।[৩]
নামকরণ
সম্পাদনাধারণা করা হয়, মোঘল আমলের শেষের দিকে প্রথম শনের ছাউনি দিয়ে এ মসজিদ গড়া হয়। জনশ্রুতি রয়েছে নামাজের সময় হলে এ মসজিদে গায়েবী আজান হতো। চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রশাসক থানাদার ওয়াসিন চৌধুরী এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। তার দাদা শেখ নাছির উদ্দিন তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের গৌড় এলাকা থেকে এ এলাকায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেছিলেন। খুব সম্ভবত শেখ নাছির উদ্দিন এলাকার মুসল্লীদের পাঞ্জাগানা নামায আদায়ের সুবিধার্থে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, ওয়াসিন চৌধুরীর পিতা একজন ইবাদত গুজার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ইবাদত বন্দেগীতে এতই মশগুল থাকতেন যে, পারিপাশ্বিক অবস্থার কোন খবর রাখতেন না। তিনি বুড়ো বয়সে এ মসজিদে নামাজ যিকির আজকারে দিন রাত কাটিয়ে দিতেন। এভাবেই দিনের পর দিন কেটে যেত তার আধ্যাত্নিক সাধনায়। তিনি এতই পরহেজগার ছিলেন যে, তাকে সবাই বুড়া হুজুর নামে ডাকত। ইবাদত করতে করতে তিনি একদিন এই মসজিদ থেকে গায়েব হয়ে যান। পরবর্তীতে তার কোন সন্ধান কেউ পাননি বলে কথিত আছে। তাই তার নামানুসারে এটি বুড়া মসজিদ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।[৪]
সংস্কার
সম্পাদনা১৮৮৬ সালে ভূমিকম্পের কারণে বেড়া ও ছনের ছাউনি দিয়ে তৈরি মসজিদটি ভেঙ্গে যায়। ১৯৪০ সালে পুরনো মসজিদ ভেঙ্গে সেটি পাকা দালান করা হয়। ১৯৭৪ সালে মসজিদটি সম্প্রসারণ এবং ১৯৮৬ সালে মসজিদটি দ্বিতল ভবনে উন্নীত করা হয়।[৫] সময়ের বাস্তবতায় ইতিমধ্যে মসজিদটির নতুন অবয়ব দেওয়া হচ্ছে । তাই নতুন করে আধুনিক নির্মাণ স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে মসজিদটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে নকশাসহ প্রাথমিক কাজ। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি টাকা।‘পুরো আঙিনাটির আয়তন ১ লক্ষাধিক বর্গফুট।[৬] এ জায়গাকে ভিত্তি করে পরিকল্পনাটি করা হয়েছে। থাকবে ১৩০ ফুট উচ্চতার মিনার এবং মিনারে সর্বোচ্চ চূড়ায় স্থাপন করা হবে পবিত্র মক্কা শরীফের জমজম টাওয়ারের আদলে ক্লক টাওয়ার,(চার পাশে চারটি বৃহৎ আকারের ঘড়ি) যা দিনে ও রাতে সমানভাবে ২০ কিলোমিটার দূর হতে দেখা যাবে। এ ছাড়াও থাকছে সুপ্রশস্ত প্রবেশদ্বার, ঈদগাহ, কবরস্থান, এতিমখানা, মাদরাসা সংবলিত একাডেমিক ভবন, অজুখানা সহ অনেক কিছু যা এখানে আগত সকল মেহমানদের আকৃষ্ট করবে ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বোয়ালখালীর শ্রীপুর বুড়া মসজিদের জমা হলো দানবাক্সে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা"। এবিনিউজ২৪। ২৬ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২১।
- ↑ "দর্শনীয়স্থান - শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়ন - শ্রীপুর-খরণ্দ্বীপ ইউনিয়ন"। sreepurkharandwipup.chittagong.gov.bd। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০২১।
- ↑ "একনজরে শ্রীপুর বুড়া মসজিদ"। আলোকিত বোয়ালখালী। ১৬ মে ২০১৯। ৩১ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২১।
- ↑ ম রাজু দে (২৭ নভেম্বর ২০২০)। "বোয়ালখালীর ঐতিহ্য শ্রীপুর বুড়া মসজিদ"। যায়যায়দিন। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২১।
- ↑ "পুণ্যময় তীর্থস্থান বুড়া মসজিদ"। সিভয়েস২৪। ৮ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২১।
- ↑ রেজা মুজাম্মেল (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "নান্দনিক রূপে তিনশ বছরের মসজিদ"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২১।