শৈল চক্রবর্তী  (English Shaila Chakraborty)  (৯ ফেব্রুয়ারি,  ১৯০৯ - ১৪ অক্টোবর,  ১৯৮৯),  পুরো নাম শৈলনারায়ণ চক্রবর্তী  ছিলেন ভারতীয়  বাঙালি  চিত্রশিল্পী, ইলাসট্রেটর,  কার্টুন শিল্পী, পুতুল শিল্পী এবং গ্রন্থকার।  তিনিই বাংলায়  ‘স্ট্রিপ’ কার্টুনের প্রবর্তন করেন। শিশু সাহিত্যের জন্য ভারত সরকারের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভ করেন।[][]

শৈল চক্রবর্তী
জন্ম(১৯০৯-০২-০৯)৯ ফেব্রুয়ারি ১৯০৯
মৃত্যু১৪ অক্টোবর ১৯৮৯(1989-10-14) (বয়স ৮০)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাচিত্রশিল্পী, কার্টুন শিল্পী
সন্তানশৈবাল চক্রবর্তী (পুত্র)
দীপক চক্রবর্তী (চিরঞ্জিত) (পুত্র) (অভিনেতা)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

শৈল চক্রবর্তীর জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার আন্দুল মৌরিগ্রামে। পিতা উদয়নারায়ণ চক্রবর্তী ছিলেন আন্দুল হাইস্কুলের শিক্ষক। মাতার নাম রানি চক্রবর্তী। আন্দুল হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও হাওড়ার নরসিংহ কলেজ থেকে গণিতে অনার্স সহ বি.এসসি পাশ করেন। কোন আর্ট স্কুল বা কলেজে ভর্তি না হয়ে নিজের চেষ্টায় শিল্পকলায় স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠেন তিনি।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতে প্রসাধন তৈরির একটা ছোট কারখানা বানিয়ে সাবান,আলতা, সিঁদুর তৈরি করে বাড়ি-বাড়ি বিক্রি করতেন প্রথমদিকে। কিন্তু তার সে ব্যবসা চলেনি। কলেজে পড়ার সময় থেকে কলকাতার পত্রপত্রিকা এবং লেখক শিল্পীদের সাথে তার  যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। বন্ধু হিসাবে পেয়েছিলেন পরিমল গোস্বামী, সমর দে এবং প্রমথ সমাদ্দারকে। তাঁদের সাহচর্যে 'সচিত্র ভারত','যষ্টি মধু','যুগান্তর' প্রভৃতি পত্রিকায় তার আঁকা চিত্র প্রকাশিত হয় এবং অল্পদিনের মধ্যেই রসিকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দৈনিক বসুমতীর   রবিবারের পাতায় শিবরাম চক্রবর্তীর কলম 'বাঁকা চোখে' তে তার কার্টুন ছিল পত্রিকার বড়ো আকর্ষণ। অমৃতবাজার, যুগান্তর, অমৃতবাজার, বসুমতী প্রভৃতি পত্রিকার সাময়িকী ও বিশেষ সংখ্যাগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে ইলাসট্রেশনের কাজ করেছেন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে। তিনিই একমাত্র শিল্পী যিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশায় তার গল্পের - "ল্যাবরেটরি" র  ইলাসট্রেশন করেন। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় সেটি প্রকাশিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের আর একটি গল্প ‘প্রগতি সংহার’-এরও ইলাসট্রেশন করেছিলেন তিনি । [] এছাড়াও সত্যজিৎ রায়ের প্রথম মুদ্রিত গল্প - 'বর্ণান্ধ' র  ছবিও এঁকেছিলেন তিনি। শিবরাম চক্রবর্তীর বিভিন্ন গ্রন্থের অজস্র চরিত্রের চিত্রকর ছিলেন তিনি। শৈল চক্রবর্তীর তুলিতে শিবরাম চক্রবর্তীর সৃষ্ট চরিত্র 'গোবর্ধন' ও 'শিবরাম' ছবিতে এসেছে। অমৃতবাজার পত্রিকায় "Alias" নামে দীর্ঘদিন রবিবারের পাতায় 'কমিক স্ট্রিপ' পরিবেশ করেছেন। এতেই দেশি গল্প নিয়ে 'কমিক স্ট্রিপ' রচনার সম্ভাবনার পথ তিনিই দেখিয়েছিলেন। তার 'লিটিল ডাক' ছাড়াও স্ট্রিপ 'ডাকু সিরিজ' বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক শিল্পের পাঠ তার না থাকলেও তিনি তার পর্যবেক্ষণ শক্তি অর্থাৎ অবজারভেশন পাওয়ারের গুণে সুদীর্ঘকাল ব্যঙ্গচিত্র এঁকে গেছেন। এরপর তিনি কাহিনি সচিত্রকরণের কাজে হাত দেন। পুস্তক অলংকরণে তিনি দক্ষ ছিলেন। মধ্য যৌবনে ভাস্কর্যে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। রীতিমতো তালিম নিয়ে মূর্তি গড়া শিখেছিলেন। পুতুল তৈরি করে তাদের নিয়ে নাটক রচনা শুরু করেন এবং গড়ে তোলেন সংস্থা 'পুতুলরঙ্গম'। এর মাধ্যমে পুতুলনাটিকা মঞ্চস্থ করা শুরু করেন। একসময় তিনি বেঙ্গল গভর্নমেন্টের ডাইরেক্টরেট অব  পাবলিক ইনফরমেশন বিভাগের আর্টিস্ট হিসাবে কাজ করেছেন। লেখক হিসাবেও তিনি কৃতি ছিলেন। 'যুগান্তর' পত্রিকায় তার মজাদার লেখা সায়েন্স ফিকশন প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -

  • 'মানুষ এল কোথা থেকে'
  • 'গাড়িঘোড়ার গল্প'
  • 'ছোটদের ক্রাফ্ট'

তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় পঁচিশ। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির হল -

  • 'বেজায় হাসি’
  • ‘চিন্তাশীল বাঘ’ 
  • ‘ঘটোৎকচ বিজয়’ 
  • ‘স্বর্গের সন্ধানে মানুষ’ 
  • ‘কার্টুন’ 
  • ‘কৌতুক’ 
  • ‘যাদের বিয়ে হল’
  • ‘যাদের বিয়ে হবে’ 
  • ‘আজব বিজ্ঞান’ 
  • ‘চিত্রে বুদ্ধজীবন কথা’ 
  • ‘বেলুন রাজার দেশে’ 
  • 'গল্পকথার দেশে'
  • ‘কালোপাখি’
  • ‘টুলটুলির দেশে’
  • ‘কৃপণের পরিণাম’ 

শেষ বয়সে তিনি জল ও তেল রং কে নিয়ে পেন্টিংয়ের দিকে ঝুঁকেছিলেন এবং এই সময় তার বিষয় ছিল প্রকৃতি। ছবি নিয়ে বিদেশে গেছেন দুবার তার একক প্রদর্শনীর জন্য। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেরো তে এবং ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার নিউ জার্সি তে।

সম্মাননা

সম্পাদনা

'ছোটদের ক্রাফট' বইটির জন্য শৈল চক্রবর্তী শিশু সাহিত্যে ভারত সরকারের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভ করেন। 

জীবনাবসান

সম্পাদনা

শৈল চক্রবর্তী ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে র ১৪ অক্টোবর কলকাতায় প্রয়াত হন। 

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয়  খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি   ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৯৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "বাংলায় পাপেটের জনক শিল্পী শৈল চক্রবর্তীকে জন্মদিনে প্রণাম"। 2017-02-06 । ২০২২-০২-০৬  তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৫   |url-status=অকার্যকর  অবৈধ (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=, |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. "কল্পনা যেন বাঁধ না মানে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৫