শহুরে কিংবদন্তি
একটি শহুরে কিংবদন্তি, শহুরে অতিকথা, শহুরে উপকথা, অথবা এককালীন কিংবদন্তি হলো লোককাহিনীর এমন একটি ধরন যেখানে বিশেষত পরিবারের সদস্য বা কোনো বন্ধুর সাথে ঘটে থাকা ভয়ানক সত্যি অভিজ্ঞ্যতার গল্প বলা হয়ে থাকে। এইরকম কিংবদন্তি স্রেফ বিনোদনের জন্য হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা গেছে এগুলিতে রহস্যময় বিপদ বা বিরক্তিকর ঘটনা, যেমন নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং অদ্ভুত বস্তুর বিবরন থাকে। এগুলি নৈতিক মানদণ্ডের সমর্থক হতেও পারে, অথবা কুসংস্কারের সমর্থক, অথবা সামাজিক উদ্বেগের যুক্তিসম্মত কারন।[১]
শহুরে কিংবদন্তিগুলি বেশিরভাগ সময় মুখে মুখে প্রচারিত হয়, কিন্তু এটি মিডিয়া, খবরের কাগজ, মোবাইল নিউজ অ্যাপ, ই-মেল এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও ছড়াতে পারে। অল্প কিছু পরিবর্তনের সাথে কিছু শহুরে কিংবদন্তি বছরের পর বছর চলে এসেছে আঞ্চলিক প্রকরণের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলার জন্য।।
উৎস ও অবয়ব
সম্পাদনালোককথকদের ব্যাবহৃত শব্দ, "শহুরে কিংবদন্তি", ১৯৬৮ সালে যখন রিচার্ড ডোরসন এটিকে ব্যবহার করতেন, সেই সময়ে ছাপানো প্রথম শুরু হয়।[২] উতাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অধ্যাপক জান হ্যারল্ড ব্রুনভান্ড, ১৯৮১ সালের শুরুর দিকে প্রকাশিত বিখ্যাত পুস্তক সিরিজের মাধ্যমে শব্দটির সাথে সাধারণ মানুষদের পরিচয় করিয়ে দেন। ব্রুনভান্ড তার কিংবদন্তি সমগ্র, "দা ভ্যানিশিং হিটচিকার: অ্যামেরিকান আর্বান লেজেন্ডস অ্যান্ড দেয়ার মিনিং" (১৯৮১), ব্যবহার করে দুটি জিনিস দেখান: প্রথমটি হলো, কিংবদন্তি আর লোককথা কেবলমাত্র তথাকথিত পুরনো জায়গায় বা সনাতন সমাজে ঘটে না। দ্বিতীয়টি হলো যে, কেউ এইরকম উপকথা জানার মাধ্যমে শহুরে ও আধুনিক সংস্কৃতির ব্যাপারে বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
বহু শহুরে কিংবদন্তি সম্পূর্নরূপে শুধুমাত্র গল্পকথা চরিত্র নিয়ে সাজানো থাকে। সাধারণ কোনো শহুরে কিংবদন্তিতে রহস্য, ভয়, বা কৌতুক থাকা আবশ্যক। অনেকসময় এগুলি সাবধানতামূলক গল্প হিসেবে কাজ করে। কিছু শহুরে কিংবদন্তি হলো নৈতিক কথা যা ছোটদের মধ্যে খারাপ স্বভাব তৈরির কারন হয়, ফলে তারা সমস্যায় পড়ে, ব্যাথা পায় ও মারাও পড়তে পারে।
শহুরে কিংবদন্তি আবার অনেকসময় পাঠকের মনে ঘৃনাও জাগাতে পারে, যে কারণে গল্পগুলি আরো বেশি স্বরনীয় ও অকাট্য হয়। যে কোনো প্রকারের শহুরে কিংবদন্তিতে চমকপ্রদ বিষয়ে ভরপুর থাকে ও তাই এই গল্পগুলি সবার উপর বেশ ভারী প্রভাব বিস্তার করে।[৩] একটি শহুরে কিংবদন্তিতে অপার্থিব বা অলৌকিক বিষয়াদি যুক্ত থাকতে পারে। প্রচুর জনপ্রিয় গল্প চেষ্টা করে লৌকিক আর অলৌকিকের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার।।[৩][সন্দেহপূর্ণ ]
প্রচার ও বিশ্বাস
সম্পাদনাযেমন জান ব্রুনভান্ড বলেছেন,[৪] পুরোনো কিংবদন্তিগুলিকে খুব সহজেই তাদের প্রতীকতা ও প্রসঙ্গ দিয়ে চেনা যায়। কেসগুলি অন্তত আংশিকভাবে সত্যি ঘটনায় উদ্বুদ্ধ থাকে, যেমন "দা ডেথ কার" (রিচার্ড ডরসন দ্বারা মিচিগান, যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত তল্লাশি চালানো);[৪] "দা সলিড সিমেন্ট কার্ডিলাক"[৫] এবং "দা হুক"-এর উৎস সম্ভবত ১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সারকানা, টেক্সাস শহরে ঘটে থাকা লাভারস লেন মার্ডারস।[৬][৭] যে কিংবদন্তির সাহায্যে কোকা-কোলা তাদের পানীয় ফান্টা নাজি জার্মানিতে কোনো ঝামেলা ছাড়াই বিক্রি করেছিল, সেটি জার্মান ম্যাক্স কেইথ-এর আসল গল্প, যিনি পানীয়টি আবিষ্কার করেছিলেন ও জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কোকা-কোলার ক্রিয়াকলাপ সক্রিয় রেখেছিলেন।[৮]
শহুরে কিংবদন্তির কথক বলতে পারে যে এটা তার বন্ধু (বা বন্ধুর কোনো বন্ধুর) সাথে ঘটেছে, এর মাধ্যমে আখ্যানটির সত্যতা ও প্রকৃতি বৃদ্ধি পায়[৯] বহু শহুরে কিংবদন্তি ভয়াবহ অপরাধ, বিষাক্ত খাবার, অথবা অন্যান্য পরিস্থিতির কথা চিত্রিত থাকে, যাতে অনেক মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে পারে। এইরকম গল্প যেই শোনে, তার ইচ্ছা করতে পারে প্রিয়জনদের সতর্ক করে দেওয়ার। বিভিন্ন উপলক্ষে, খবর সংস্থা, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এমনকি পুলিশ বিভাগ সতর্কতা জারি করে দেয় নতুন কোনো বিপদের আশঙ্কায়।[১০] "লাইটস আউট" গুজব অনুসারে, স্ট্রিট গ্যাং সদস্যদের হেডলাইট ছাড়াই গাড়ি চালাতে হয় যতক্ষণ না কোনো সকরুণ মোটরচালক এক বিশেষ হেডলাইটের ঝলকানি না দেখায়, এর ফলে নতুন গ্যাং সদস্যকে দীক্ষা হিসেবে একজন সাধারণ নাগরিককে হত্যা করতে হতো।[১১] এই কিংবদন্তি নিয়ে একটি ফ্যাক্স নাসসাউ কান্ট্রি, ফ্লোরিডাতে পৌঁছেছিল, দমকল বাহিনী ও পুলিশ, সেখান থেকে শহরের সকল বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছিল। কানাডার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকেও নিয়ে আসা হয়েছিল; তিনি দ্রুত সংসদের সকল অন্টারিও সদস্যদের জন্যে এক জরুরি সতর্কতা পাঠান।[১১]
শহুরে কিংবদন্তিতে সাধারণত নিকৃষ্ট উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকে: গল্পটি এমন একজন পুনরায় বলে থাকে যে আসল ঘটনার সাক্ষী বা অংশগ্রহণকারী নয়; তাদের ঘোরতরভাবে সতর্ক করা হয়ে থাকে, যারা কোনো উপদেশ বা থেরেইনের (ই-মেল ফিশিং স্ক্যাম সম্পর্কিত সাধারণ উপাদান) উপরে কোনো শিক্ষা পাত্তাই দেয় না; এবং গল্পটি অনেকসময় "আমার এক বন্ধু আমাকে কিছু বলেছিল" দিয়ে শুরু হয়, এই বন্ধুকে তার প্রথম নাম দিয়েই চেনা যেতে পারে অথবা একেবারেই না চেনা যেতে পারে।[১২] এইরকম কিংবদন্তি বিশ্বাসযোগ্য আর এমনকি শ্রোতাকে উত্তেজিতও করে ফেলতে পারে, কিছু পাঠকেরা এগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয় , এবং এগুলি দেখামাত্রই গোটা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ লোকেদের কাছে পৌঁছে যায়।[১৩] অনেকগুলি আবার স্রেফ মজা হয়ে থাকে, যেন সেগুলি সত্য ঘটনা।[১৪]
কিছু শহুরে কিংবদন্তি অবিরাম ঘটে থাকে, এগুলির সম্ভব হওয়ার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে, যেমন গল্পে একটি পেশাদার খুনি ভেবেচিন্তে গাড়ির পেছনের সিটেই লুকিয়ে থাকে। এরকম আরেকটি উদাহরন হলো ১৯৭০ সালের একটি জনপ্রিয় গুজব, যাতে বলা হয় যে প্রোক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বল কোম্পানি স্যাটান ওয়ারশিপারসদের সাথে হাত মিলিয়েছিল, কারন তাদের ঊনবিংশ শতকের ট্রেডমার্কে বৈশিষ্ট্য ছিল।[১৫] কিংবদন্তিটি কোম্পানির ব্যবসায় এমনভাবে বাঁধা সৃষ্টি করছিল যে তারা এই ট্রেডমার্ক ব্যবহার বন্ধই করে দেয়।।[১৬]
পুরাণের সাথে সম্পর্ক
সম্পাদনাসবথেকে আগে এই আখ্যানগুলিকে "শহুরে বিশ্বাসের গল্প" বলা হতো, বুনিয়াদি বৈশিষ্ট্য হিসেবে যা সেইসময় ভাবা হয়েছিল, এই শব্দটিতে তা লক্ষ্য করা যায়: কথকেরা তাদের গল্প সত্য অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে বলত, এবং বন্ধুদের থেকে শোনা কাহিনীগুলি অনেকটাই কৃত্রিম হতো কিন্তু প্রমাণীকরণে তাৎপর্যপূর্ন কাজ করতো।[১৭] নবোদ্ভাবিত শব্দটি "এফওএফ্লোর" ও "এফওএএফটেল" শব্দ দুটিকে সূচিত করে। অন্যদিকে অন্তত একটি সর্বোত্তম কিংবদন্তি, "ডেথ কার", কিছু ভিত্তি দেখাতে পেরেছে,[১৮] লোককথকদের এইসব আখ্যানগুলি অনাবৃত করবার এমন প্রবণতা দেখা যায় যে অনুষদ প্রতিষ্ঠান অনুমান করে এইসব গল্পগুলো বলার, পুনরায় বলার আর বিশ্বাস করার পেছনে কোনো আলাদা কারন রয়েছে।[১৯] পুরাণের ক্ষেত্রে, আখ্যানগুলিকে বিশ্বাস করা হয় কারন এগুলি যারা শোনে, তাদের জ্ঞানচক্ষু তৈরি ও বৃদ্ধি হয় অথবা, "কারন সেগুলি জটিল ঘটনাদ্বয়ের সুসংগত ও সন্তুষ্টকারী ব্যাখ্যা প্রদান করে"।[২০]
সমাজ বৈজ্ঞানিকরা শহুরে কিংবদন্তির সাহায্য নিয়ে জটিল আর্থ-সামাজিক বিশ্বাস যেমন অপরাধ, শিশুযত্ন, ফাস্ট ফুড, এসইউভি এবং আরো অন্যান্য "পরিবার" পছন্দের ব্যাখ্যা দিতে পারে।[২১] লেখকরা শহুরে কিংবদন্তি ও বিখ্যাত পূরাণের মধ্যে এক পরিষ্কার সম্পর্ক তৈরি করে, যেমন "গ্রিমের রূপকথার গল্প", যেখানে একই থিম আর প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেই কারণে, এটি এমন গোষ্ঠীদ্বয়ের একটি বৈশিষ্ট্য স্বরূপ, যেখানে প্রদত্ত আখ্যান আবর্তিত হয়ে অনুষদের বিক্ষোভ বা দাবীকে প্রত্যাখ্যান করে; এইরকম একটি উদাহরন হবে, পুলিশ অফিসারদের ক্ষোভ প্রকাশ, যাদেরকে বলা হয়েছে অপরিচিতদের হ্যালোইন ট্রিট প্রায় কখনোই ভেজাল হয় না।।[১৯][২২]
প্রদর্শন
সম্পাদনাশহুরে কিংবদন্তিগুলির প্রচার ও প্রকাশ ইন্টারনেট আরো সুবিধাজজক করে দিয়েছে।[২৩][২৪] যেমন ইউজনেট খবরগোষ্ঠি "alt.folklore.urban" এবং অন্যান্য কিছু ওয়েবসাইট; সবথেকে উল্লেখযোগ্য স্নোপস ডট কম, শহুরে কিংবদন্তিগুলির আলোচনা, তল্লাশি ও বিশ্লেষনে নজর রাখে। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি একটি নতুন-বন্ধ পরিসেবা ছিল, যার নাম হোক্সবাস্টার্স,[২৫] যেটি কম্পিউটার-বিতড়িত ধাপ্পাবাজি আর কিংবদন্তিগুলির সাথে মোকাবিলা করতো।[২৬] সবথেকে উল্লেখযোগ্য ধাপ্পাগুলিকে ক্রিপিপাস্তা নামে জানা হয়, এগুলি সাধারণত অজানা কারোর লেখা ভয়ানক গল্প। যদিও বেশিরভাগগুলিকে অবশ্যই মিথ্যা বলে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তবুও স্লেন্ডার ম্যান-এর মতো কিছু, বেশ কয়েকজন মানুষদের বিশ্বাস অর্জন করে নিয়েছে।[২৭]
টেলিভিশন শো যেমন "আরবান লেজেন্ডস, "বেয়ন্ড বিলিফ: ফ্যাক্ট অর ফিকশন", এবং পরে "মোস্টলি ট্রু স্টোরিজ: আরবান লেজেন্ডস রিভিলড", শহুরে কিংবদন্তির কাহিনীগুলি বিশদে পর্যালোচনা করে প্রকাশ করে যে সেগুলির মধ্যে কোনো বাস্তব ভিত্তি আদও আছে কিনা। ডিসকভারি চ্যানেল টিভি শো "মিথবাস্টারস" (২০০৩-২০১৬) কয়েকটি শহুরে কিংবদন্তি প্রমাণ বা খারিজ করার চেষ্টা করে সেগুলি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পুনরায় উপস্থাপনের মাধ্যমে।
১৯৯৮ সালের চলচ্চিত্র "আরবান লেজেন্ডস"-এ দেখা যায় একদল ছাত্রেরা জনপ্রিয় শহুরে কিংবদন্তিগুলি নিয়ে আলোচনা করছে, যখন সেই একই সময়ে তারা কিংবদন্তিগুলির শিকারও হয়ে পড়ছে।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে ফিল হিলে ও রিক গ্লানভিল "দা গার্ডিয়ান" খবর কাগজের "উইকএন্ড" বিভাগে "আরবান মিথ" নামের একটি সারি লেখা শুরু করে, সেটি সম্পন্ন করতে তারা চারটি বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করে: "আরবান মিথস", "দা রিটার্ন আর আরবান মিথস", "আরবান মিথস আনপ্লাগড",[২৮] এবং "নাও! দ্যাটস হোয়াট আই কল আরবান মিথস"। রবার্ট বয়েড, জান হ্যারল্ড ব্রুনভান্ড, আর রবার্ট লরেন ফ্লেমিং-এর লেখা ১৯৯৪ সালের কমিক্স সংহিতা "বিগ বুক অফ আরবান লেজেন্ডস"-এ ২০০টি শহুরে কিংবদন্তি কমিক্সের আকারে প্রকাশিত হয়েছিল।
ব্রিটিশ লেখক টনি ব্যারেল শহুরে কিংবদন্তিগুলি "দা সান্ডে টাইমস"-এর একটি দীর্ঘ ধারাবাহিক সারিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। সেখানে একটি গল্পে বলা ছিল ১৯৪০ সালের ব্যাটম্যান চলচ্চিত্রে অরসন ওয়েলস কাজ করা শুরু করেন, যেখানে জেমস ক্যাগনেকে রিডলার ও মারলিন ডাইট্রিচকে ক্যাটওম্যান হিসেবে ভূমিকা দেওয়ার পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন;[২৯] এর মধ্যে একরকম নাছোড়বান্দা গুজব হলো, রক সিঙ্গার কোর্টনি লাভ আসলে মার্লন ব্রান্ডোর নাতনি;[৩০] এবং ১৯৭০ সালের ফারাহ ফকেটের জনপ্রিয় পোস্টারে তার চুলের মধ্যে একটি গোপন অশ্লীল বার্তা লোকোনো রয়েছে, এইরকম ধারণা।[৩১]
প্রকার
সম্পাদনাঅপরাধ
সম্পাদনাচিরাচরিত শহুরে কিংবদন্তির মধ্যে ইন্টারনেট গুজবগুলির বহুকাংশ আসল বা স্রেফ নকল অপরাধের উপর তৈরি হয়।[৩২][৩৩] এইসব কাহিনী খুব মারাত্বক হতে পারে কারন এগুলি আধুনিক যুগের সাথে অত্যন্ত সম্পর্কযুক্ত ও সাধারণ শহুরে কিংবদন্তির আদর্শ মেনে চলে না।।[৩৪]
ঔষধ
সম্পাদনাকিছু কিংবদন্তি চিকিৎসা সংক্রান্ত লোককথা হয়, যেমন বলা হয় তরমুজের বীজ খেলে নাকি পেটের ভিতর তরমুজ বেড়ে উঠতে পারে, অথবা চান করার পরেই বাইরে বেরোলে ঠান্ডা লাগতে পারে।।[৩৫]
ইন্টারনেট
সম্পাদনাইন্টারনেটের শহুরে কিংবদন্তিগুলি ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ছড়িয়ে যায়, যেমন ইউজনেট বা ইমেল[৩৬] অথবা সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়া। এগুলি ভাইরাল অনলাইন প্রসঙ্গের সাথে জড়িত থাকতে পারে। কিছু আবার চেন লেটারসের আকার ধারণ করে এবং ই-মেলের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়, পাঠককে এগুলি শেয়ার করতে বলা হয় অথবা ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটার আশঙ্কা দেওয়া হয়,[৩৭] এবং চিনতে পারার মতো ফাঁদ, হুমকি, ও শেষপর্যন্ত অনুরোধ অনুসরণ করতেও বলা হয়।[৩৮] অন্যগুলো হলো জাল ভাইরাস সতর্কতা, লোকেদের কম্পিউটারে অস্তিত্বহীন ভাইরাসের জন্যে সতর্কতা করা, এগুলিকে বেশিরভাগ সময়েই শুধুমাত্র অনলাইন বিতরন বা স্টোর কুপনের পপ-আপ হিসেবে প্রত্যক্ষ করা যায়।।[৩৯]
অলৌকিক
সম্পাদনাএই গল্পগুলিতে কেউ একজন অপার্থিব কিছু অভিজ্ঞ্যতার কবলে পড়ে, যেমন ক্রিপ্টিড[৪০]— বিগফুট বা মথম্যান,[৪১] কিংবদন্তি প্রাণী যাদের প্রমাণ এখনো খোঁজা হয়ে চলেছে কিন্তু প্রচুর মানুষ এদের উপর বিশ্বাস রাখে।[৪২] অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, যে ব্যক্তিরা হঠাৎই এইরকম আশ্চর্যজনক ঘটনা (যেমন বিগফুট দেখতে পাওয়া) প্রত্যক্ষ করে, তারা ঘটনাটিকে অতিমাত্রায় বাড়িয়ে বলে।।[৪৩]
বিপণন
সম্পাদনাঅভিযোগ করা হয়েছে যে কোম্পানিরা তাদের লোগো বা প্যাকেজিং-এর পেছনে "গোপন বার্তা" লুকিয়ে রাখে।[৪৪] পুরোনো প্রোক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বল প্রতীকে, এক গুপ্ত চিহ্ন বর্ণিত আছে। (যদি প্রতীকের তেরোটি তারা একটি নির্দিষ্ট উপায়ে একে অপরের সাথে যুক্ত করা হয় তো একটি সারিতে তিনটি ছয় পাওয়া যায়।)[৪৫] এরূপ আরেকটি খ্রিস্টান মহিলার ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি হিব্রিউ বর্নমালার প্রতীকের মাধ্যমে ৬৬৬ সংখ্যার আড়ালে পশু শক্তি "উন্মুক্ত" করছে, এটি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।[৪৬]
হালকা দিকে, শহুরে কিংবদন্তির সাহায্যে বিজ্ঞাপন প্রচারেও সুবিধা হয়। এদের মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় উদাহরন হবে, জ্যাক লিঙ্কের বিফ জার্কির জন্যে সাসকোয়াচের ব্যবহার, আইসব্রেকারস বিজ্ঞাপনে ইউনিকর্নের ব্যবহার। আরেকটি হলো রাজ্যের বিখ্যাত ক্রিপ্টিড জার্সি ডেভিলের নামানুসারে হকি টিমের নাম দেওয়া, নিউ জার্সি ডেভিলস।।[৪৭]
আরও দেখুন
সম্পাদনাআরো পড়ুন
সম্পাদনা- এন্ডারস, জডি (২০০২)। নাটকে মৃত্যু ও অন্যান্য মধ্যযুগীয় শহুরে কিংবদন্তি। শিকাগো প্রেসের বিশ্ববিদ্যালয়। আইএসবিএন 978-0-226-20788-9।
- শহুরে কিংবদন্তি: আন্তর্জাতিক টল টেলস ও আতঙ্কের একটি সমগ্র, গিলিয়ান বেনেট আর পল স্মিথের সম্পাদিত (ওয়েস্টপোর্ট, কানেক্টিকাট: গ্রিনউড, ২০০৭), আইএসবিএন ০৩১৩৩৩৯৫২X
- আমেরিকান লোককথা ও কিংবদন্তির সংহিতা, ফ্র্যাঙ্ক দে কারো সম্পাদিত (লন্ডন: রোটলেজ, ২০১৫)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Urban Legend Definition"। Snopes.com।
- ↑ Oxford English Dictionary, 2d ed. 1989, entry for "urban legend," citing R. M. Dorson in T. P. Coffin, Our Living Traditions, xiv. 166 (1968). See also William B. Edgerton, The Ghost in Search of Help for a Dying Man, Journal of the Folklore Institute, Vol. 5, No. 1. pp. 31, 38, 41 (1968).
- ↑ ক খ Robson, David। "What makes an urban legend?"। www.bbc.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২০।
- ↑ ক খ Mikkelson, Barbara (১০ আগস্ট ২০০৬)। "snopes.com: Death Car"। Urban Legends Reference Pages। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১০।
- ↑ "snopes.com: Cement in Lover's Car"। Urban Legends Reference Pages। ১০ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০০৭।
- ↑ Mikkelson, Barbara (২ জুন ২০০৮)। "snopes.com: The Hook"। Urban Legends Reference Pages। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১০।
- ↑ Ramsland, Katherine। "Texas Chainsaw Massacre is based on a real case the crime library – Other Speculations – Crime Library on truTV.com"। Turner Broadcasting System Inc.। ৩১ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১০।
- ↑ Mikkelson, Barbara। "The Reich Stuff?"। Urban Legends Reference Pages। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০০৭।
- ↑ Brunvand, p.423
- ↑ Gross, Dave। "The "Blue Star" LSD Tattoo Urban Legend Page"। the Lycaeum Drug Archives। ১৮ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১০।
- ↑ ক খ Mikkelson, Barbara (৮ ডিসেম্বর ২০০৮)। "snopes.com: Flashing Headlights Gang Initiation"। Urban Legends Reference Pages। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১০।
- ↑ "Heard the one about..."। BBC News। ২৭ অক্টোবর ২০০৬। ৪ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১০।
- ↑ Gelfand, Lynn (২০১৪)। They are watching you: The Slender Man and the terrors of 21st century technologies।
- ↑ Brunvand, p.223
- ↑ Procter and Gamble v. Amway 242 F.3d 539
- ↑ Brunvand, p.333
- ↑ Brunvand, p. 459
- ↑ Richard Dorson. "American Folklore" University of Chicago Press, 1959, pp. 250-52.
- ↑ ক খ Adam Brooke Davis. "Davis, Adam Brooke. "Devil's Night and Hallowe'en: The Linked Fates of Two Folk Festivals." Missouri Folklore Society Journal XXIV(2002) 69-82 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-০৩-০৫ তারিখে
- ↑ John Mosier "WAR MYTHS" Historically Speaking: The Bulletin of the Historical Society: VI: 4, March/April 2005.
- ↑ Croft, Robin (২০০৬)। "Folklore, Families and Fear: Exploring the Influence of the Oral Tradition on Consumer Decision-making"। Journal of Marketing Management। 22 (9 & 10): 1053–1076। এসটুসিআইডি 144646252। ডিওআই:10.1362/026725706778935574।
- ↑ Best, Joel; Horiuchi, Gerald T. (জুন ১৯৮৫)। "The Razor Blade in the Apple: The Social Construction of Urban Legends"। Social Problems। 32 (5): 488–497। আইএসএসএন 0037-7791। জেস্টোর 800777। ডিওআই:10.2307/800777।
- ↑ Donovan, p.129
- ↑ "How Urban Legends Work"। HowStuffWorks (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০১-০৫-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২০।
- ↑ The U.S. Department of Energy has decided that it no longer wants to be associated with hoaxbusters.ciac.org so this site has been permanently shut down.
- ↑ Watstein, Sarah; Jovanovic, John (২০০৩)। "Bioterrorism and Biological Warfare"। Statistical Handbook on Infectious Diseases । An Oryx book। Westport, Connecticut: Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 297। আইএসবিএন 9781573563758। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২০।
A number of Internet sites are available regarding urban legends and hoaxes, such as [...] the Compute Incident Advisory Committee and Department of Energy's HoaxBusters site at http://hoaxbusters.ciac.org.
- ↑ "Slender Man case: girl who attacked classmate gets 25-year hospital sentence"। the Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১২-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২০।
- ↑ Healey, Phil; Glanvill, Rick (১৯৯৪)। Urban Myths Unplugged। Virgin। আইএসবিএন 9780863698972। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ Tony Barrell (৫ জুলাই ২০০৯)। "Did You Know: Orson Welles"। The Sunday Times। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১২।
- ↑ Tony Barrell (১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "Did You Know: Courtney Love"। The Sunday Times। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১২।
- ↑ Tony Barrell (৪ অক্টোবর ২০০৯)। "Did You Know: Farrah Fawcett"। The Sunday Times। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১২।
- ↑ Pamela Donovan, No Way of Knowing: Crime, Urban Legends, and the Internet (Psychology Press, 2004)
- ↑ Pamela Donovan, Crime legends in a new medium: Fact, fiction and loss of authority, Theoretical Criminology; vol. 6 no. 2; May 2002; Pp. 189-215
- ↑ Donovan, Pamela (২০০৪)। No Way of Knowing Crime,Urban Legends, and the Internet। Great Britain: Routledge। পৃষ্ঠা 2, 3। আইএসবিএন 0203507797।
- ↑ "Medical Myths and Hoaxes: Debunked? You Be The Judge."।
- ↑ Chris Frost, (2000) ..Tales on the Internet: making it up as you go along, ASLIB Proceedings, Vol. 52 Iss: 1, pp. 5–10
- ↑ "Chain Linked"। Snopes.com। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Blank, Trevor (২০০৭)। "Examining the Transmission of Urban Legends: Making the Case for Folklore Fieldwork on the Internet"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ de Vos, Gail (২০১৯)। What Happens Next? Contemporary Urban Legends and Pop Culture। United States of America: Libraries Unlimited। পৃষ্ঠা 78। আইএসবিএন 9781598846331।
- ↑ "Definition of CRYPTID"। www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২০।
- ↑ "An Overview of Paracryptozoology"। Supernatural Magazine (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২০।
- ↑ Dagnall, Neil; Denovan, Andrew; Drinkwater, Kenneth; Parker, Andrew; Clough, Peter J. (২০১৭)। "Urban Legends and Paranormal Beliefs: The Role of Reality Testing and Schizotypy"। Frontiers in Psychology (ইংরেজি ভাষায়)। 8: 942। আইএসএসএন 1664-1078। ডিওআই:10.3389/fpsyg.2017.00942 । পিএমআইডি 28642726। পিএমসি 5463090 ।
- ↑ Radford, Benjamin; Frazier, Kendrick (জানুয়ারি ২০১৭)। "Felt Time: The Psychology of How We Perceive Time"। Skeptical Inquirer। 41 (1): 60–61।
- ↑ Hieronimus, Robert (২০০৮)। The United Symbolism of America : Deciphering Hidden Meanings in America's Most Familiar Art, Architecture, and Logos। Franklin Lakes, NJ: New Page Books.। পৃষ্ঠা 267। আইএসবিএন 9781601630018।
- ↑ The Big Book of Urban Legends। New York: Paradox Press। ১৯৯৪। পৃষ্ঠা 172। আইএসবিএন 1-56389-165-4।
- ↑ Mikkelson, David (১০ নভেম্বর ২০১৪)। "Does the Monster Energy Drink Logo Include the Number 666?"। Snopes।
- ↑ "Top 10 Most Famous Cryptids"। Toptenz.net (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৯-০৫-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২০।