আ. ন. ম. শহীদুল্লাহ (১৯২৩-২০০৫) একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও ভাষাসৈনিক। ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বই লেখার জন্য তিনি দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন।

আ ন ম শহীদুল্লাহ
জন্ম১৯২৩ ইং
চান্দপুর, কুমিল্লা
মৃত্যু২০০৫ ইং
পেশাসাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতা
পরিচিতির কারণসাহিত্যিক
উল্লেখযোগ্য কর্ম
শিশু সাথী, জীবন ফসল, আগড় বাগড়, জেলের চিঠি, পাকিস্তানি পাঁচ বছর, জীবন স্বপ্ন ইত্যাদি।
উপাধিসাহিত্যরত্ন
আন্দোলনভাষা আন্দোলন
পিতা-মাতামৌলভী মকসূদ আহমদ (বাবা) মরিয়ম বিবি (মা)

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

কবি আ,ন,ম,শহীদুল্লাহ ১৯২৩ সালে কুমিল্লা শহরতলীর চান্দপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৌলভী মকসূদ আহমদ ছিলেন একজন সরকারি আমলা। মায়ের নাম মরিয়ম বিবি।

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

মরহুম ভাষা বীর কবি শহীদুল্লাহ সাহিত্যরত্ন কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ করেন । তিনি সুপন্ডিত ড,মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ,ড, কাজী দীন মোহাম্মদ,ড,সৈয়দ আলী আহসান সাহেবের শিক্ষা ও সাহচর্য লাভ করেন । এ সময় তিনি অধ্যাপক (প্রিন্সিপাল) আবুল কাসেম, মজলুম জননেতা মাওলানা আঃ হামিদ খাঁন ভাসানী,শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ,ড,নুরুল হক ভূইয়া,কাজী গোলাম মাহবুব,তাজউদ্দিন আহমদ,মোঃ তোয়াহা,আতাউর রহমান খাঁন, প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ, আবুল মনসুর আহমদ,শেখ মুজিবুর রহমান,অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ (ন্যাপ),প্রথিতযশা লেখক আবুল মনসুর আহমদ,আতাউর রহমান খান, এবি,এম গোলাম মোস্তফা,মৌলানা মহীউদ্দিন খান,সানাউল্লাহ নূরী, আঃ গফুর , এ বি এম গোলাম মোস্তফা ,এডভোকেট সৈয়দ আব্দুল্লাহ পিন্টু, অধ্যাপক গোলাম আযম সহ দেশ-বরেণ্য ব্যক্তিদের সাহচর্যে এসে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ।

কর্মজীবন সম্পাদনা

তিনি একাধারে সাংবাদিক ও সুসাহিত্যিক ছিলেন ।কুমিল্লায় ১৯৪৭সালে মাসিক কোরক-এর প্রকাশক তথা সম্পাদক ছিলেন । তিনি মৌলানা আকরাম খাঁ-র দৈনিক আজাদ ও দৈনিক ইনসাফ -১৯৫০-১৯৫২-এর সিনিয়র সাব এডিটর হিসাবে কর্মরত অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় থেকে, সকল সংবাদ সংগ্রহ করতেন। তার প্রকাশনা ও সম্পাদনায় সাপ্তাহিক " আলো " (রেজি:নং ডিএ ৩৬৯) প্রকাশিত হয়।পরবর্তিতে তিনি "সাপ্তাহিক "শহীদ" নামে একটি পত্রিকার প্রকাশের অনুমতি পান।

ভাষা আন্দোলন সম্পাদনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ও দৈনিক আজাদের সিনিয়র সাব এডিটর ও তমদ্দুন মজলিসের একনিষ্ঠ কর্মি থাকা অবস্থায় তিনি ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে বিখ্যাত ব্যঙ্গ কবিতার বই পাকিস্তানি পাচঁ বছর প্রকাশ করে পাকিস্তানি শাসকের রোষানলে পড়েন। ভাষা আন্দোলনের জন্য কুমিল্লা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায়, কুমিল্লা টাউন হল ময়দানের জনসভায় সভাপতিত্ব করার সময়, ১৯৫২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি শাসকের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ সাত মাস জেল খাটেন। ঠিক তখনই কুমিল্লা জেলের নতুন নামকরণ করা হয় কেন্দ্রীয় কারাগার। সভায় উপস্তিত ছিলেেন ভাষা সৈনিক,মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠক এডভোকেট আহমদ আলী,মৌলভী তমিজ উদ্দীন তামিজী, এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম( সাবেক জিএস কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ) সহ আরো অনেকে।

সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৫১ইং সালে গৌড়বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ (দিনাজপুর) ও যশোর সাহিত্য পরিষদ (যশোহর) কবি শহীদুল্লাহ , মোঃ নজিবর রহমান ও কাজী আবদুল ওদুদ কে সাহিত্যরত্ন উপাধিতে ভূষিত করেন ।

১৯৬৪-১৯৬৫ইং তে সামরিক শাসক আইউব শাহীর জুলুম প্রতিরোধ দিবসে কপ-এর নেতা হিসাবে গ্রেফতার হন । এ সময় আরো কয়েকবার গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন । শেখ মুজিবুর রহমান ও কবি শহীদুল্লাহ কে জামিন নেন এডভোকেট মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়া । ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের একজন সক্রিয় সংগঠক ছিলেন তিনি।

রচনাবলি সম্পাদনা

ভাষা বীর, মুক্তিযোদ্ধা কবি শহীদুল্লাহ সাহিত্যরত্ন মুলত শিশু-সাহিত্যিক ছিলেন। তার কবিতার বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বই :

১) শিশু সাথী (১৯৪১ইং),

২) জীবন ফসল (১৯৫০ইং),

৩) আগড় বাগড় (১৯৫০ইং),

৪) জেলের চিঠি (১৯৫২ইং),

৫) কচিঁ পাঠ (১৯৫৩ইং),

৬) এক পেট দুই হাত (১৯৫৪ইং),

৭) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম পাঠ (১৯৫৫ইং),

৮) সোহাগ পাঠ (১৯৬২ইং),

৯) এতিম বালক আহমদ (১৯৬১),

১০) জীবন স্বপ্ন (১৯৪৯ইং; সাহিত্যরত্ন উপাধিপ্রাপ্ত বই),

১১) পাকিস্তানি পাঁচ বছর (১৯৫১ইং),

১২) রোড টু ব্লীজিং (ইংরেজি প্রবন্ধমুলক বই১৯৭৪ইং),

১৩) সহজ বাঙলা ১ম পাঠ ও ২য় পাঠ (১৯৭৪ ও ১৯৭৫ইং) ইত্যাদি আরো অনেক গ্রন্থ।

মৃত্যু সম্পাদনা

২০০৫ সালে আ,ন,ম, শহীদুল্লাহ পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তিনি ৫ পুত্র এবং ৫ কন্যা সন্তান রেখে যান। তাঁর নাতি চারজনই বাংলাদেশের স্বনামধন্য ক্রিকেটার। তারা হলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ আলম, রেজাউল করিম নাইম, নাসিরুল আলম নাহিদ এবং রিজভী আলম সায়েম

তথ্যসূত্র সম্পাদনা