শফিকুন নূর মওলা
শফিকুন নূর মাওলা যিনি এস এম মওলা নামে পরিচিত (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৮৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
শফিকুন নূর মওলা | |
---|---|
মৃত্যু | ১৯৮৪ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাএস এম মওলার জন্ম রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেব গ্রামে। তার বাবার নাম নূর মোহাম্মদ মাওলা এবং মায়ের নাম সুফিয়া বেগম। তার স্ত্রীর নাম জান্নাতুন নাহার মাওলা। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে । [২]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৭১ সালে এস এম মওলা ঢাকার তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে যান। ভারতে তিনি মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তৃতীয় সপ্তাহের একদিন চট্টগ্রাম নৌবন্দরের বহির্নোঙ্গরে দুঃসাহসী এক অপারেশনের জন্য নৌকমান্ডোরা রেকি করেছিলেন। কিন্তু রেকিতে তাদের একটা বড় ভুল হয় এবং সেটা হলো দূরত্বের হিসাব। তারা অনুমান করেছিলেন বহির্নোঙ্গরের দূরত্ব দেড়-দুই মাইলের বেশি হবে না। কিন্তু বাস্তবে এই দূরত্ব ছিল তিন-চারগুণেরও বেশি। জলপথের দূরত্ব হিসাব করার ব্যাপারে তারা অভিজ্ঞ ছিলেন না। নৌকামান্ডোরা তাদের অজ্ঞাতেই বিরাট এই ভুল করে ফেলেন। সহযোদ্ধা নৌকমান্ডোদের সঙ্গে এস এম মওলা সাঁতার কেটে যেতে থাকলেন সমুদ্রের গভীরে। পানির মধ্যে তাদের পায়ের ফিনস অনবরত ওঠানামা করছিলো। এক ঘণ্টার বেশি সময় সাঁতরিয়ে তারা মাথা তুলে তাকালেন লক্ষ্যস্থলের দিকে। দেখলেন লক্ষ্যস্থল তখনো অনেক দূরে। আরও আধা ঘণ্টা সবাই সমানতালে সাঁতার কাটলেন। তার পরও দূরত্ব কমল না। ক্লান্ত হয়ে গেলেন তারা। সামনে কিংবা পেছনে যাওয়ার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। চরম দুঃসাহস প্রদর্শন করেও ব্যর্থ হলেন তারা। এস এম মাওলাসহ দুঃসাহসী নয়জন নৌকমান্ডো রাতে ভাটার সময় সমুদ্রের পানিতে নেমে লক্ষ্যস্থলের দিকে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় সাঁতরেও তারা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। দেড় ঘণ্টা ধরে একটানা সাঁতরানোর পর এতই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে তারা সামনে বা পেছনে ফেরার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের অভিযান শেষ হয় ট্র্যাজিক ঘটনার মধ্য দিয়ে। পরে জোয়ারের প্রবল ধাক্কায় পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় সমুদ্রের তীরে পৌঁছান। তখন তাদের অনেকের জ্ঞান ছিল না। নয়জনের মধ্যে এস এম মওলাসহ চারজন মৃতপ্রায় অবস্থায় যেখানে ভেসে ওঠেন সেখানে ছিল সশস্ত্র প্রহরা। পাকিস্তানি সেনারা তাদের দেখে ফেলে। সেনারা তাদের আটক করে। তাদের ব্যাপক নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নির্যাতনে একজন (মোহাম্মদ হোসেন, বীর প্রতীক) মারা যান। এস এম মওলাসহ তিনজনকে পরে ঢাকা সেনানিবাসে পাঠানো হয়। এখানেও চলে তাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন। স্বাধীনতার পর তারা ছাড়া পান। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৮-০২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৫৩৭। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ৩১৫। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।