তাঈ আহোমদের আদি শাস্ত্রসমূহের মধ্যে লিৎ লাই পেঞ্ কা কা[১][২][৩][৪] হল একটি মূল শাস্ত্র। অসমীয়াতে এটিকে বিবর্ত্তন শাস্ত্র বলে আখ্যা দেওয়া যায়। মলুং চাও বাণী দেও বানী দেওধাই বরুয়ার মতে 'লিৎ লাই পেঞ্ কা কা'র অর্থ হল -'সৃ্ষ্টি পুনরায় অবতারণা বা প্রত্যাগমন বিবরণ সংবলিত খোদিত ফলি বা শাস্ত্র' (লিৎ লাই= সৃষ্টি পুনরায় অবতারণা, পেঞ্=ক্ষুদিত ফলি বা শাস্ত্র, কা কা= প্রত্যাবর্তন)। ' সৃষ্টির পুনরায় অবতারণা ' এবং ' প্রত্যাগমন' বিষয় দুটির সংযোগ ঘটিয়ে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গীতে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে এই শাস্ত্রটিতে বিবর্তন (evolution) সম্পর্কে প্রগাঢ় দার্শনিক তত্ত্ব আছে৷ সেজন্য এটিকে বিবর্তন সম্পর্কিত তাঈ আহোমদের দর্শন শাস্ত্র বলা যায়। এই শাস্ত্রটির বিষয়বস্তুকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হল আই সিং লাও অর্থাৎ শব্দের অধিষ্ঠাত্রী আইয়ের বন্দনা। দ্বিতীয় ভাগে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি এবং বিবর্ত্তনের বর্ণনা এবং তৃতীয় ভাগটিতে তাঈ আহোমদের উৎপত্তি সম্পর্কে বর্ণনা সংবলিত করা হয়েছে।

আদি পেঞ কা কা সম্পাদনা

বৃহৎ আকারের একটি আদি পেঞ কা কা লেখা হয়েছিল এবং সেটির একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ হল এই প্রবন্ধে উল্লিখিত ' লিৎ লাই পেঞ কা কা'[৩] টি। এটি তাঈ আহোম সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল নিদর্শন।

সাহিত্য সম্পাদনা

লিৎ লাই পেঞ্ কা কার প্রথম ভাগে থাকা আই সিং লাও লিৎ মুৎটি অতি উচ্চ খাপের গীতি কবিতা এবং শাস্ত্রটি নিজেই একটি অতি উচ্চমানবিশিষ্ট সুসাহিত্য। এটি ৫৬৫-৫৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মুং রি মূং রামে লেখা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।

দর্শন এবং বিজ্ঞান সম্পাদনা

বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি সম্পর্কে দার্শনিক তত্ত্বসমূহে দেওয়া ব্যাখ্যা মতে, ভগবান কোনো এক মূহুর্ত্তে প্রয়োজন বোধ করে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডর সৃষ্টি করেন এবং নির্ধারিত নীতি নিয়ম মতে চলতে থাকায় নিজেই আত্মগোপন করে থাকেন। অন্যদিক দিয়ে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব[২] মতে, যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হচ্ছে এবং সেখানে এক ভগবানের করার মত কিছু নেই। কিন্তু লিৎ লাই পেঞ কা কাই একটি নতুন তত্ত্ব তুলে ধরে বলেছে যে সেই ভগবানের কামনার ফলস্বরূপ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডর সৃষ্টি হয়েছিল। আজকাল বিজ্ঞানে বলে যে সূর্য্যের কাছ দিয়ে অন্য একটি নক্ষত্র পার হয়ে যাওয়ায় আন্ত:আকর্ষণের ফলে পৃথিবী সহ অন্য গ্রহসমূহের সৃষ্টি হয়েছিল। পেঞ কা কা মতে একটি গোলাকার বস্তুর মধ্যে হওয়া উদগীরণের ফলস্বরূপ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডর সৃষ্টি হয়েছে। তারপর (১) শক্তির উৎপত্তি, (২) মধ্যাকর্ষণ, (৩) প্রতিধ্বনি, (৪) শব্দ, (৫) জল, (৬) জলবায়ু, ৬-ক) মাটি ইত্যাদির সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে জল তারপর জীবের সৃষ্টি বলে পেঞ কা কার সূত্রই বলে। সেজন্য পেঞ কা কা একটি উচ্চ খাপের দর্শন শাস্ত্র তথা বিজ্ঞানগ্রন্থ।

সাথে দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Chonnabot, Mahāwitthayālai Mahidon Sathāban Wičhai Phāsā læ Watthanatham phư̄a Phatthanā (২০০১)। Abstracts: the 11th annual Southeast Asian Linguistics Conference : 16-18 May 2001 at Royal River Hotel, Bangkok (ইংরেজি ভাষায়)। Institute of Language and Culture for Rural Development, Mahidol University। আইএসবিএন 9789748837918 
  2. Tai Culture: International Review on Tai Cultural Studies (ইংরেজি ভাষায়)। SEACOM Sud̈ostasien-Gesellschaft। ২০০১। 
  3. Gogoi, Pushpa (১৯৯৬)। Tai of North East India (ইংরেজি ভাষায়)। Chumphra Printers and Publishers। 
  4. লিট্ লাই পেঞ কা কা-অসমীয়া অনুবাদ-নগেন হাজরিকা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা