লিম্পোপো নদী আফ্রিকার দক্ষিণ ভাগের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী যা দক্ষিণ আফ্রিকাতে উতপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মোজাম্বিকের মধ্য দিয়ে গিয়ে ভারত মহাসাগরে মিশে গিয়েছে। লিম্পোপো শব্দটি রিভম্বো (লিভোম্বো / লেবোম্বো) থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়; হোসি রিভোম্বোর নেতৃত্বে সোঙ্গা উপজাতীয় মানুষজন এখানকার পার্বত্য অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল এবং তাদের নেতার নামে এই অঞ্চলটির নামকরণ করেছিল। নদীটি প্রায় ১,৭৫০ কিলোমিটার (১,০৮৭ ম) দীর্ঘ; নদীর অববাহিকা ৪,১৫,০০০ বর্গকিলোমিটার (১,৬০,২০০ মা ২) বিস্তৃত। নদীর এক বছরের গড় জলপ্রবাহ ১৭০ কিউসেক (৬২০০ কিউ ফুট / সে)। জাম্বেজি নদীর পরেই লিম্পোপো আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী যা ভারত মহাসাগরে প্রবাহিত হয়।

লিম্পোপো নদী
ভেহেম্বে নদী
মোজাম্বিক-য়ে লিম্পোপো নদী
লিম্পোপো নদীর গতিপথ
অবস্থান
দেশদক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
মোহনাভারত মহাসাগর
 • অবস্থান
গাজা প্রদেশ, মোজাম্বিক
দৈর্ঘ্য১,৭৫০ কিমি (১,০৯০ মা)
অববাহিকার আকার৪,১৫,০০০ কিমি (১,৬০,০০০ মা)
নিষ্কাশন 
 • গড়১৭০ মি/সে (৬,০০০ ঘনফুট/সে)

ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের মধ্যে ভাস্কো দা গামা প্রথম এই নদীর সন্ধান পান; তিনি ১৪৯৮ সালে লিম্পোপো নদীতে নোঙ্গর করেছিলেন এবং এর নাম দিয়েছিলেন এস্পিরিটু স্যান্টো নদী। ১৮৬৮-৬৯ সালে সেন্ট ভিনসেন্ট হুইটশেড এরস্কাইন দ্বারা এর মোহনার দিকের অংশটি অন্বেষণ করেছিলেন এবং ক্যাপ্টেন জে এফ এল্টন ১৮৭০ সালে এর মধ্য অংশটি পরিভ্রমণ করেছিলেন।

লিম্পোপো নদীর অববাহিকা অঞ্চলটি ভূতাত্ত্বিক সময়ের সাথে সাথে হ্রাস পেয়েছে। প্লিওসিন বা প্লাইস্টোসিন যুগের শেষ অবধি, জাম্বেজি নদীর উপরের অংশটি লিম্পোপো নদীতে প্রবাহিত ছিল[১]। নিকাশী বিভক্তির পরিবর্তন হ'ল ইপিরোজেনিক আন্দোলনের ফল যা বর্তমান সময়ের লিম্পোপো নদীর উত্তরে ভূ-পৃষ্ঠকে সমুন্নত করেছে জাম্বেজি নদীতে জলের প্রবাহ বাড়িয়েছে।[২]

গতি পথ সম্পাদনা

  লিম্পোপো নদীর গতিপথটি একেবারেই সরল নয়; এখানে প্রথমে উত্তর এবং তারপরে উত্তর-পূর্বে প্রবাহিত হয়েছে লিম্পোপো, তারপরে পূর্ব এবং অবশেষে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে নদীটি। এটি প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার (৩৯৮ মা) আন্তঃদেশীয় সীমান্ত হিসাবে কাজ করে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে দক্ষিণ -পূর্ব দিকে বতসোয়ানার থেকে পৃথক করে এবং উত্তর-পশ্চিমে জিম্বাবুয়ের থেকে পৃথক করে। মেরিকো নদী এবং কুমির নদী মিলিত হয়, যার নামটি লিম্পোপো নদীর পরিবর্তিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ স্রোত নদীটি নেমে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি র‌্যাপিড রয়েছে ।

নোটওয়ানে নদী লিম্পোপোর একটি প্রধান উপনদী, যা বতসোয়ানাকালাহারি মরুভূমির থেকে উতসারিত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে লিম্পোপোতে মিশেছে। লিম্পোপোর প্রধান উপনদীটি হল অলিফ্যান্টস নদী (এলিফ্যান্ট রিভার), যা প্রায় ১২৩৩ মিলিয়ন ঘনমিটার জল লিম্পোপোতে বহন করে আনে প্রতি বছর। [৩] অন্যান্য প্রধান উপনদীগুলির মধ্যে রয়েছে শশে নদী, এমজিংওয়ানা নদী, ক্রোকোডাইল নদী, মোয়েঞ্জি নদী এবং লুভুভু নদী । [৪]

দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব কোণে লিম্পোপো নদী ক্রুগার জাতীয় উদ্যানের সীমানা রচনা করে। মোজাম্বিকের বন্দর শহর জাই-জাই, লিম্পোপো নদীর মোহনার কাছে অবস্থিত। অলিফ্যান্ট নদীর নীচের অংশে লিম্পোপো নদীটি সরাসরি সমুদ্র অবধি নৌচলাচল যোগ্য, কিন্তু মাঝখানে একটি বালির চড়ার কারণে বড় জাহাজের চলাচলে অসুবিধা হয়।

উপনদীসমূহ সম্পাদনা

বাম তীরের উপনদী সম্পাদনা

  • নোটওয়ান নদী
  • বনপোভিটসে নদী
  • মহালাপসওয়ে নদী
  • লোটসেন নদী
  • মটলটস নদী
  • শশে নদী
  • উমজিংওয়ানি নদী
  • বুবি নদী
  • মোয়েঞ্জি নদী
  • চাংগান নদী

দক্ষিণ তীরের উপনদী সম্পাদনা

  • ম্যারিকো নদী
  • ক্রোকোডাইল নদী
  • ম্যাটালাবস নদী
  • মোকলো নদী
  • পালালা নদী
  • মোগলকবেনা নদী
  • কলোপ নদী
  • বালু নদী
  • নওনেদী নদী
  • লুভুভু নদী
  • অলিফ্যান্ট নদী

অববাহিকার বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

 
দক্ষিণ আফ্রিকায় মাপুঙ্গুবোয়ে জাতীয় উদ্যানে একটি বোর্ডে রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর গল্পে লিম্পোপো নদীর বর্ণনা

লিম্পোপোর জলে স্রোত খুব কম, পলিযুক্ত ঘোলাটে জল ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়। রুডয়ার্ড কিপলিং এর গল্পে লিম্পোপোকে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে- "ধূসর সবুজ রঙের চিটচিটে লিম্পোপো নদীর ধারে জ্বর-বৃক্ষ রয়েছে সারে সারে আর সেখানে" দ্বি-বর্ণযুক্ত পাইথন রক-স্নেক বাস করে"- লিম্পোপো ঠিক সেরকমই। ref> The Elephant's Child, Rudyard Kipling</ref> এখানে বৃষ্টিপাত মাঝে মাঝে হয় এবং অনিশ্চিত: শুষ্ক বছরগুলিতে নদীর উপরের অংশগুলিতে ৪০ দিন বা তারও কম সময়ের জন্য জল যায়। কালাহারি মরুভূমির উপরের অংশটি শুষ্ক হলেও নদীর নিচের দিকের অংশ অপেক্ষাকৃত কম শুকনো। [৫] লিম্পোপো অববাহিকায় প্রায় ১৪ মিলিয়ন মানুষ বাস করে। উর্বর নিম্নভূমিতে জনঘনত্ব বেশি। বর্ষাকালে বন্যা নিম্ন অঞ্চলে মাঝে মাঝে সমস্যা সৃষ্টি করে; ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারী বর্ষণ (একটি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে) বন্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। লিম্পোপো নদীর মধ্যে জলহস্তী-এর সর্বাধিক ঘনত্ব মোকোলো এবং মোগালকোবেনা নদী এর মধ্যবর্তী অংশে পাওয়া যায় [৬]

ইতিহাস সম্পাদনা

গ্যালারী সম্পাদনা

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Goudie, A.S. (২০০৫)। "The drainage of Africa since the Cretaceous": 437–456। 
  2. Moore, A.E. (১৯৯৯)। "A reapprisal of epeirogenic flexure axes in southern Africa": 363–376। 
  3. Görgens, A.H.M. and Boroto, R.A. 1997. Limpopo River: flow balance anomalies, surprises and implications for integrated water resources management. In: Proceedings of the 8th South African National Hydrology Symposium, Pretoria, South Africa.
  4. "Drought impact mitigation and prevention in the Limpopo River Basin"www.fao.org। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৮ 
  5. C.Michael Hogan, Mark L. Cooke and Helen Murray, The Waterberg Biosphere, Lumina Technologies, May 22, 2006. "Archived copy"। ২০০৭-০৩-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-২৩ 
  6. "State of Rivers Report: the Mokolo River" (পিডিএফ)। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০