বৃষ্টি

ফোঁটা আকারে তরল জলকণা যা বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প থেকে ঘনীভূত হয়ে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ভূপৃ
(বৃষ্টিপাত থেকে পুনর্নির্দেশিত)

বৃষ্টি একধরনের তরল, যা আকাশ থেকে মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূপৃষ্ঠের দিকে পড়ে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। এই ফোঁটাগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ভারি হলে তা পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ে - একেই বলে বৃষ্টি। বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে বৃষ্টি সুপেয় জলের বড় উৎস। বিচিত্র জৈবব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি সচল রাখতে ও কৃষি সেচব্যবস্থা সচল রাখতে বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। যদিও সকল প্রকার বৃষ্টি ভূপৃষ্ঠ অবধি পৌঁছায় না। শুকনো বাতাসের মধ্য দিয়ে পড়ার সময় কিছু বৃষ্টির বিন্দু শুকিয়ে যায়। ভারগা নামে পরিচিত এই বৈশিষ্ট্যটি শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। বৃষ্টির এমইটিএআর কোড হল আরএ

ভারতের কলকাতার পথে বৃষ্টিপাতের দৃশ্য।

বৃষ্টিপাতের মাত্রা

সম্পাদনা
 
বাংলাদেশের একটি গ্রামে বৃষ্টির দৃশ্য

বৃষ্টিপাত মাপার ক্ষেত্রে বৃষ্টির ধারাকে মিলিলিটারে গণনা করা হয়। তারপর স্কেল অনুযায়ী পরিমাপ করে হালকা, ভারি, অতি ভারি ও চরম বৃষ্টিপাতের হিসাব দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ঘণ্টায় ০.২৫ মিলিমিটার থেকে ১ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে হালকা, ৪ মিলিমিটার থেকে ১৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে ভারি, ১৬ মিলিমিটার থেকে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে অতি ভারি এবং ৫০ মিলিমিটারের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতকে চরম বৃষ্টি আখ্যা দেয়া হয়।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত

সম্পাদনা

বৃষ্টিপাতের জন্য প্রথমেই দরকার পড়ে জলীয় বাষ্প, সেই জলীয় বাষ্প হালকা হওয়ার কারণে উপরে উঠে গিয়ে বাতাসের ধূলিকণা, বালুর কণা ইত্যাদির সহায়তায় জমাটবদ্ধ হয়ে তৈরি করে মেঘ। এভাবে মেঘের আকৃতি বড় হতে হতে যখন ভারি হয়ে যায়, তখন হয় বৃষ্টি। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটিকে মানবনিয়ন্ত্রীত পন্থায় করাকেই বলা হচ্ছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত। কৃত্রিম বৃষ্টিপাতে, কখনও পুরো প্রক্রিয়াটি, কখনও তার আংশিক (জলীয় বাষ্পকে মেঘে রূপান্তর) নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রথমে দ্রুতগতির বড় পাখা দিয়ে কোনো জলক্ষেত্রের জলকে বাষ্পীভূত করা হয়। হালকা সেই বাষ্প উপরে উঠে গিয়ে বাতাসের ধূলিকণার সাথে মিশে জমাট বাঁধে। তবে এই জমাট বাঁধানোর ব্যাপারটিও কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সিলভার আয়োডাইডের কণা ছুঁড়ে দিয়ে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিমভাবে তৈরি জলীয় বাষ্পকে জমানোর জন্য বন্দুক কিংবা রকেট ব্যবহার করে ভূমি থেকে উপরের দিকে, কিংবা বিমান ব্যবহার করে আকাশ থেকে ভূমির দিকে সিলভার আয়োডাইডের কণা ছড়িয়ে দেয়া হয়। উষ্ণ অঞ্চলে একাজে ব্যবহার করা হয় ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড[] এভাবে জমাটবদ্ধ জলীয় বাষ্প বা মেঘ যখন ভারি হয়ে যাবে, তখন ঐ স্থানে ঝরে পড়বে মেঘ, হবে বৃষ্টি। কৃত্রিম বৃষ্টির এই প্রক্রিয়া যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ।[]

 
বৃষ্টির ফোটা মাটিতে পড়ে জমা হচ্ছে

কৃত্রিম বৃষ্টির কথা প্রথম ভেবেছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানী ভিনসেন্ট শায়েফার। তিনি বাতাসের জলীয় বাষ্পকে জমাট বাঁধিয়ে মেঘ বানাতে ব্যবহার করেছিলেন জমাট বাঁধা কার্বন ডাইঅক্সাইডের টুকরা (ড্রাই আইস: Dry Ice)। তিনি বার্কশায়ার পাহাড়ের কাছে ড্রাই আইস ছুঁড়ে দিয়ে তুলোর মতো মেঘ বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তাকেই কৃত্রিম মেঘের জনক বলা হয়ে থাকে।[]

কৃত্রিম বৃষ্টি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশার বাণী নিয়ে এসেছে। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছে চীন। চীনের উত্তর অংশে বৃষ্টিপাত সাধারণ খুব কম হয়। পানির অন্যান্য উৎসগুলোর অবস্থাও ভয়াবহ খারাপ। তাই কৃত্রিম বৃষ্টি কাজে লাগিয়ে তারা ইচ্ছামতো বৃষ্টি ঝরিয়ে নদ-নদীর পানি ১৩% পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে বৃষ্টিমুক্ত রাখতেও কাজে লাগানো হয় এই কৃত্রিম বৃষ্টির পদ্ধতি।[] কিন্তু কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে কিনা, তা এখনও সন্দেহের অতীত নয়। বেইজিংয়ের প্রতিবেশী অঞ্চলগুলো অভিযোগ এনেছে যে, এই প্রক্রিয়ায় তাদের বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প টেনে নেয়া হচ্ছে। যথেচ্চ কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের এই ব্যবস্থা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও ঘটাতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।[]

গ্যালারি

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "আয় বৃষ্টি ঝেঁপে", জুবায়ের হোসেন; টুনটুন টিনটিন, দৈনিক কালের কণ্ঠ; ২৪ জুলাই ২০১০; পৃষ্ঠা ৯, ঢাকা।
  2. "বৃষ্টি তাড়ানো", সংকলনে: মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ; বিজ্ঞান বার্তা, মাসিক রহস্যপত্রিকা; আগস্ট ২০০৮; ২৪ বর্ষ, ১০ সংখ্যা।পৃষ্ঠা ৬১।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা