বর্ণমালার কোনও একটি বা কয়েকটি বিশেষ বর্ণকে বাদ দিয়ে রচিত পাঠ্যকে লিপোগ্রাম বলা হয়।[১][২]

লিপোগ্রাম গ্রিক শব্দ lipagrammatos থেকে এসেছে, যার অর্থ missing letter । [১][২] বাংলা পরিষদ পর্যাভিধান অনুসারে লিপোগ্রামের বাংলা পরিভাষা হলো বর্ণবিরান।

উল্লেখযোগ্য লিপোগ্রাম সম্পাদনা

বাংলা ভাষায় লিপোগ্রাম ঢংয়ে রচিত কোনো উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম নেই।

তবে ইংরেজিতে এর উদাহরণ দুষ্প্রাপ্য নয়। আর্নেস্ট ভিনসেন্ট রাইট-এর গ্যাডসবি  উপন্যাসটি লিপোগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ।

লেখক হিসেবে আর্নেস্ট ভিনসেন্ট রাইট (১৮৭৩-১৯৩৯)-এর প্রতিজ্ঞা অত্যন্ত দৃঢ় ছিল। আমেরিকান এই লেখক ইংরেজি বর্ণমালার E অক্ষর বাদ দিয়ে তার ২৬৭ পাতার (৫০০০০- এ বেশি শব্দ) উপন্যাস Gadsby লিখেছিলেন ১৯৩৭ সালে।

ইংরেজি ভাষায় E সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অক্ষরের একটি। স্বরবর্ণ চরিত্রের কারণে বাক্যে অন্য অক্ষরের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি ব্যবহৃত হয় E। রাইট বইয়ের ভূমিকায় লিখেছিলেন,

কোনও সাহিত্যিক তকমা অর্জনের জন্য আমি এই বই রচনা করিনি, বরং এই যে E ছাড়া চলবেই না, E ছাড়া আপনি কথাই বলতে পারবেন না ধারণাই আমাকে এ বই লেখায় উদ্বুদ্ধ করেছে

রাইটের আগেও এ ধরনের খামখেয়ালির ইতিহাস আছে।

A অক্ষর বাদ দিয়ে ১৮৫৩ সালে ফ্রেঞ্চ লেখক জাঁক আরাগঁ (১৭৯০-১৮৫৫) একটি লেখা তৈরি করেছিলেন।রাইট নভেলটি লিখতে ছয় মাস সময় নিয়েছিলেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়ার ভেটেরানদের জন্য বরাদ্দকৃত একটি বাড়িতে থাকার সময় নভেলটি শেষ করেন তিনি। সাবধানতা হিসেবে প্রথমেই তিনি টাইপরাইটারের E অক্ষরটিকে সুতা দিয়ে আটকে নিয়েছিলেন।

পরে বইয়ের ভূমিকায় (E সহকারে অবশ্য) তিনি লেখেন এ ধরনের একটা E স্বরবর্ণশূন্য বই লিখতে গিয়ে নানা রকম সমস্যা গেছে তার। বড় একটা সমস্যা ছিল শব্দের অতীত রূপ বিশেষত -ed- এর বিকল্প ব্যবহার নিয়ে। রাইট তার লেখাকে সাধ্যাতীত করার বাসনায় উপন্যাসটিকে past tense বা ক্রিয়ার অতীতকালে বর্ণনা করেছেন। আরেক সমস্যা ছিল সর্বনাম। আরেক সমস্যা ছিল নাম্বার বা সংখ্যা। উপন্যাসের চরিত্রের প্রয়োজনে  তরুণী একটি মেয়েকে আনতে গিয়ে দেখা গেল E বাদ দিতে গিয়ে মেয়ের বয়স বাড়তে বাড়তে thirty অর্থাৎ ত্রিশে পৌঁছেছে। সংখ্যার মধ্যে জড়িয়ে থাকা E-দের এড়াতে গিয়ে তিনি লেখার মধ্যে তারিখ ব্যবহার প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন| E- যুক্ত বস্তুসামগ্রীর নাম এড়াতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ বর্ণনা দিয়ে বোঝাতে হয়েছে তাকে।

এই উপন্যাস লিখতে গিয়ে অল্পবিস্তর সমালোচনার মুখোমুখি হন তিনি। এক ভদ্রমহিলা তাকে ‘এ জেনুইন ফেইক’ বা সত্যিকারের দুই নম্বর হিসেবে অভিহিত করন। সে সময়ের একজন কলাম লেখক এমন প্রশ্নও রেখেছিলেন, যার নিজের নামের বানানে অন্তত তিনটি E আছে তিনি কেন E বিহীন এমন একটি বই লিখতে গেলেন। রাইট তার বইয়ের ছাপা কপি দেখে যেতে পারেননি। ১৯৩৯ সালে বইয়ের প্রকাশনার দিনেই ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। উপন্যাসটি ঘিরে যে প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি হয়েছিল তার এবং তিনি যে একটি অসাধ্য সাধন করে উঠতে পেরেছিলেন সে প্রেষণাতেই তার মৃত্যু হয়েছিল এমন ধারণা করা হয়। অব্যবহৃত E-দের অভিশাপ বা E ব্যবহার করতে না পারার অপরাধবোধ নিশ্চয়ই তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে না!

নিচে গ্যাডসবি উপন্যাস থেকে ছোট্ট একটি অংশ উদ্ধৃত হল-

Now this small town in our story had grown in just that way:- slowly; in fact, much too slowly to stand on a par with many a thousand of its kind in this big, vigorous nation of ours. It was simply stagnating; just as a small mountain brook, coming to a hollow, might stop, and sink from sight, through not having a will to find a way through that obstruction; or around it.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  • "Gadsby"spinelessbooks.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৬ 

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. McArthur, Tom (1992). The Oxford Companion to the English Language, p.612. Oxford University Press. আইএসবিএন ০-১৯-২১৪১৮৩-X
  2. "Oulipo: A Primer of Potential Literature", p.97-98 University of Nebraska Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০৮০৩২৮১৩১৮