লক্ষ্মীপ্রিয়া মহাপাত্র

লক্ষ্মীপ্রিয়া মহাপাত্র (জন্ম ১৯২৮ - মৃত্যু ২০শে মার্চ ২০২১) ছিলেন একজন ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী। তিনি মঞ্চে এবং চলচ্চিত্রে ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করতেন। ১৯৪০ এবং ৫০ এর দশকে, তাঁর স্বামী কেলুচরণ মহাপাত্রের সাথে, তিনি ভারতে ওড়িশি নৃত্যকে পুনরুজ্জীবিত করার কৃতিত্বের অধিকারী।

নৃত্য জীবন সম্পাদনা

লক্ষ্মীপ্রিয়া ১৯২৮ সালে উড়িষ্যার খুরদায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মা, অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী তুলসী দেবীর কাছ থেকে তিনি নাচ শিখেছেন। সাত বছর বয়সে, তিনি উড়িষ্যার পুরীতে অন্নপূর্ণা থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন এবং ১৭ বছর বয়সে তাদের তারকা অভিনয়শিল্পী হয়ে ওঠেন। তাঁর নৃত্যাভিনয় দেখার জন্য প্রচুর দর্শক সমাগম হত। এরপর তিনি কটকে চলে যান, সেখানে কেলুচরণ মহাপাত্রের সাথে তাঁর দেখা হয়েছিল, যাকে তিনি পরে বিয়ে করেছিলেন। কেলুচরণ একজন প্রশিক্ষিত ওড়িশি নৃত্যশিল্পী ছিলেন, এবং সেই সময়ে নৃত্য পরিবেশনার সাথে সঙ্গত করার জন্য ধ্রুপদী ঘাত বাদ্য তবলা বাজাচ্ছিলেন।[১] ১৯৪৬ সালে, স্বামীর সাথে ওড়িশিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর, লক্ষ্মীপ্রিয়া মঞ্চে প্রথম একক ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন। এই অনুষ্ঠান শাস্ত্রীয় নৃত্যের ধরনকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।[২][৩] তিনিই প্রথম নারী যিনি মঞ্চে ঐতিহ্যবাহী গোটিপুয়া নৃত্য পরিবেশন করেন। ওড়িশি পরিবেশন করার পাশাপাশি, তিনি বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্যের ধরণেও প্রশিক্ষিত ছিলেন এবং ১৯৫০-এর দশকে ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাগ নিয়েছিলেন।[৪] তিনি মঞ্চে বেশ কিছু নাটকের পাশাপাশি মানিক জোড়ি, সূর্যমুখী, মালা জাহনা এবং আমাদাবাতা সহ বেশ কয়েকটি ওড়িয়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[৫]

যখন লক্ষ্মীপ্রিয়ার স্বামী, কেলুচরণ, একজন বড় নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্য পরিচালক হয়ে ওঠেন, তখন তাঁকে সমর্থন করার জন্য তিনি ১৯৮৫ সালে পেশাদার নৃত্য থেকে অবসর নেন।[৩] তার সাথে, তিনি ওড়িশার ভুবনেশ্বরে একটি সুপরিচিত শাস্ত্রীয় নৃত্য বিদ্যালয় সৃজন প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। তাঁদের ছেলে রতিকান্ত মহাপাত্রও একজন ওড়িশি নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্য পরিচালক।[২] তিনি মিনতি মিশ্র, প্রিয়ম্বদা মোহান্তি হেজমাদি, এবং কুমকুম মোহান্তি সহ বেশ কিছু আধুনিক ওড়িশি নৃত্যশিল্পীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।[৪]

মৃত্যু সম্পাদনা

তিনি ২০২১ সালের ২০শে মার্চ তারিখে ৮৬ বছর বয়সে মারা যান। তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়ে সমাহিত করা হয়েছিল।[১][৬] ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি পাঁচ দিনের ওড়িশি উৎসব উৎসর্গীকৃত হয়েছিল, এবং এতে তাঁর অনেক প্রাক্তন ছাত্রের ওড়িশি নৃত্য প্রদর্শন অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Noted Odissi Dancer Laxmipriya Mohapatra Passes Away"Outlook India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২৫ 
  2. Chakra, Shyamhari (২০২১-০৩-২৫)। "Laxmipriya Mohapatra: Trailblazer and inspiration"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২৫ 
  3. Vidyarthi, Nita (২০১৪-০৮-২৮)। "Odissi, then and now"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২৫ 
  4. Chakra, Shyamhari (২০২১-০৩-২৫)। "Laxmipriya Mohapatra: Trailblazer and inspiration"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২৫ 
  5. "Noted Odissi danseuse Laxmipriya Mohapatra passes away at 86"The New Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২৫ 
  6. {{cite web}}: CS1 maint: url-status (link)