তবলা
তবলা এক ধরনের দুই অংশ বিশিষ্ট আনদ্ধ (চর্মাচ্ছাদিত/membranophone) জাতীয় ঘাতবাদ্য (percussion) যন্ত্র। দুই অংশের মধ্যে ডান হাতে বাজাবার অংশটির নাম ডাহিনা (ডাইনা, ডাঁয়া) বা তবলা এবং বাঁ হাতে বাজাবার অংশটির নাম বাঁয়া বা ডুগি। তবলার বিশেষত্ব এর জটিল অঙ্গুলিক্ষেপনজাত উন্নত বোল আর তবলা বাদক শিল্পীকে বলা হয় তবলিয়া। তবলচি শব্দটি আগে একই অর্থে প্রচলিত ছিল, কিন্তু বাইজীগান বা খেমটানাচের সঙ্গতকারীদের জন্য বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকে একে অশ্রদ্ধাজনক বলে মনে করেন, তাই তবলচির বদলে তবলিয়া শব্দটির চল হয়।

উৎপত্তি
সম্পাদনাতবলার জন্ম সম্বন্ধে নানা মতবাদ আছে। একটি হল আমীর খস্রু সম্বন্ধে। মৃদঙ্গ জাতীয় কোন দুইদিক চামড়ায় ছাওয়া যন্ত্র ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়, কিন্ত তার পরেও তা থেকে সুন্দর অওয়াজ বের হয়। শুনে মুগ্ধ খস্রু বলেন "তব ভি বোলা"। তবলা শব্দটি "তব ভি বোলা" থেকে এসে থাকতে পারে।
আবার এমনও শোনা যায়, একমুখওয়ালা বাদ্যযন্ত্র সবসময়েই ছিল। মৃদঙ্গের ছাউনী সে জাতীয় যন্ত্রে প্রয়োগ ও তার বিবর্তন তবলার জন্য দেয় , যার মূল নায়ক ছিলেন আমীর খস্রু ।
গঠন
সম্পাদনাডাঁয়া
সম্পাদনাএক খণ্ড কাঠ ওপর থকে কুঁদে বাটির মত করা। তার উপর গরুর চামড়া টানটান করে বসান। তাকে ঘিরে গোল ছেদযুক্ত আরেকটি চামড়া দিয়ে কিনারা বা কানি। চামড়া পেঁচিয়ে প্রস্তুত পাগড়ী এদের ধরে রেখেছে। মাঝখানে কালো গাব (গাবগাছের আঠায় কাঠকয়লা মিশিয়ে) বা স্যাহী। কিনারা ও গাবের মধ্যে উন্মুক্ত পাতলা প্রথম চামড়া হল "সুর"। উপরের পাগড়িকে টেনে রাখার জন্য নিচে দ্বিতীয় চামড়ার পাগড়ি। দুটি পাগড়ি "ছট" দিয়ে বাঁধা। ছটের টান কমবেশি করার জন্য ছটে গোঁজা কাঠের "গুলি"। নিম গাছ থেকে ভাল তবলা হয় যা সহজে ঘূণে নষ্ট হয় না।
খিরন
সম্পাদনাএর অন্যান্য নাম স্যাহী,গাব। তবলার ছাউনির মধ্যস্থলে যে গোলাকার কালো অংশ থাকে, তাকে খিরন বলা হয়। গাবগাছের আঠার সাথে কাঠকয়লা মিশিয়ে আঠালো লেই তৈরি করে, উক্ত লেই দিয়ে কয়েকটি পর্যায়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। খিরন গাব-ফল দিয়ে তৈরি হয় বলে, একে অনেক সময় গাব নামেই অভিহিত করা হয়। খিরন তবলার মূল চামড়ার উপরে বসানো হয়।
কানি
সম্পাদনাএর অন্য নাম চাঁটি। তবলার ছাউনির প্রান্তভাগে একটি পৃথক চামড়ার আচ্ছাদন থাকে। এই অংশকে বলা হয় কানি।
ময়দান
সম্পাদনাএর অন্যান্য নাম লব, সুর। তবলার খিরন এবং প্রান্তদেশীয় কানি অংশের ভিতরে যে বৃত্তাকার অংশ দেখা যায়, তাকে ময়দান বলে।
পাগড়ি
সম্পাদনাএর অন্যান্য নাম গজরা, বেষ্টনী, বেড়। তবলার মূল চামড়া এবং কানির চামড়াকে একত্রিত করে কাঠের উপরে বসানো হয়। পরে চামড়ার ফিতা দিয়ে তৈরিকৃত বিনুনি তবলার কানি ও মূল চামড়ার সাথে যুক্ত করে, চামড়ার দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। এই বিনুনি অংশকে পাগড়ি বলা হয়। পাগড়িতে মোট ১৬টি ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্র পথে চামড়ার ফিতা তৈরি করে কাঠের নিম্নাংশের গুড়রি অংশের সাথে দৃঢ় করে বাঁধা হয়।
ডোরি
সম্পাদনাএর অন্যান্য নাম ছোট্, বদ্ধি, দোয়ানী। পাগড়ির ১৬টি ছিদ্র পথে যে চামড়া ফিতা প্রবেশ করিয়ে, কাঠের নিম্নাংশের গুড়রি অংশের সাথে দৃঢ় করে বাঁধা হয়, তাকে ডোরি বলা হয়।
গুলি
সম্পাদনাএর অন্যা নাম গট্টা। তবলার উপরের ছাউনির সটান অবস্থা এবং কাঙ্ক্ষিত সুর পাওয়ার জন্য ডোরি ভিতরে কয়েকটি কাঠের তৈরি লম্বাটে গোলাকার গুলি ব্যবহার করা হয়। এই ডোরি উপরে নিচে নামিয়ে তবলা সুরকে নিম্ন বা চড়া সুর নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
উঁচু-সুর বাঁধার পদ্ধতি:
- বেশি সংখ্যক ছটকে টেনে গুলির উপর স্থাপন করা ।
- হাতুড়ি মেরে বা জোরে ঠেলে "গুলি"কটি নিচের দিকে করা ।
- উপরের পাগড়িতে উপর হতে হাতুড়ি মেরে নিচে বসানোর চেষ্টা।
ডুগি
সম্পাদনাদেহ কাঠের নয়, মাটির বা ধাতব; বড় ক্ষেত্রফল, গাব উৎকেন্দ্রিক। গুলি নেই বা খুব পাতলা গুলি, অথবা ছোটগুলি জোড়ায় জোড়ায় একত্রিত করে আংটা লাগানো।
দুই খণ্ডের তবলা-বাঁয়ার সেটের একটি অংশ। সাধারণত এই অংশটি বাম হাতে বাজানো হয় বলে, একে বাঁয়া বলা হয়। কিছু কিছু বাদক এই অংশটি ডান হাতেও বাজিয়ে থাকেন।
ডুগির মূল দেহকাঠামো মাটি বা ধাতু দিয়ে তৈরি হয়। সাধারণত এর ধাতু হিসেবে পিতল, তামা বা এরূপ কোনো সংকর ধাতু ব্যবহার করা হয়। এর গঠন অনেকটা হাঁড়ির মতো। এর অন্য নাম কুড়ি।
তবলার তুলনায় ডুগি খাটো। সাধারণত ৮-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এর মুখও তবলার চেয়ে অনেক বড় হয়। উপরিভাগের ছাউনি অংশের ব্যাস হয় প্রায় ১০-১২ ইঞ্চি। এবং নিম্ন-মধ্যাংশের ব্যাস অপেক্ষাকৃত বেশি।
এর গঠনবৈশিষ্ট্য তবলার মতই। তবে এর ডোরির ভিতর দিয়ে কাঠের তৈরি গুলির পরিবর্তে ধাতব আংটি ব্যবহার করা হয়। খিরনের অবস্থানের বিচারে পার্থক্য রয়েছে। তবলার খিরন ছাউনির মধ্যভাগে থাকে। পক্ষান্তরে ডুগির খিরণ থাকে ছাউনির একটি প্রান্ত ঘেঁষে। ফলে এর একদিকে কানি ও ময়দান কাছাকাছি থাকলেও এর বিপরীত দিকের ময়দান অনেক বড় হয়। এছাড়া তবলার চেয়ে ডুগির খিরন বড় হয়।[১]
আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম
সম্পাদনাডুগি ও তবলার সঙ্গে ব্যবহৃত কয়েকটি আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম হল:
- বিড়ি/বিড়ে/বিড়া- যার উপর এক একটি ডুগি বা তবলাকে বসানো হয়।
- হাতুড়ি - সুর বাঁধার জন্য।
- পাউডার: অনেকে হাতে পাউডার' লাগান ঘাম থেকে তবলাকে রক্ষা করার জন্য। (গমক বাজাতেও পাউডারের পিচ্ছিলতা সাহায্য করে)।
- তবলার ঢাকা- বাতাসের আর্দ্রতা থেকে তবলাকে রক্ষা করার জন্য।
- নগমা রাখার জন্য সারেঙ্গী কিম্বা হারমোনিয়াম।
ঘরাণা
সম্পাদনাআগে তবলা সারেঙ্গীর মত প্রধানত বাইজীগানের সঙ্গতে ব্যবহার হত। তবে উত্তর ভারতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তবলা ধীরে ধীরে এক শ্রদ্ধার আসন লাভ করে। এতে পাঁচটি ঘরাণার ওস্তাদদের মূল্যবান ভূমিকা আছে:
কয়েকজন বিখ্যাত তবলিয়া:
- পণ্ডিত রাম সহায় (বেনারস ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা)
- উস্তাদ সিদ্দার খান (ফারুখাবাদ ঘরাণার)
- হাজী বিলায়েত খান (ফারুখাবাদ ঘরাণার প্রতিষ্ঠাতা)
- উস্তাদ মুনির খান (ফারুখাবাদ ঘরাণা)
- উস্তাদ আহম্মদজান থেরাকুয়া (ফারুখাবাদ ঘরাণা)
- পণ্ডিত কণ্ঠে মহারাজ(বেনারস ঘরানা)
- পণ্ডিত শামতা প্রসাদ(বেনারস ঘরানা)
- পণ্ডিত আনোখেলাল মিশ্র(বেনারস ঘরানা)
- উস্তাদ কেরামতুল্লা খাঁ
- উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ
- পণ্ডিত কিষণ মহারাজ(বেনারস ঘরানা)
- উস্তাদ আল্লারাখা (পাঞ্জাব ঘরানা)
- পণ্ডিত সারদা সহায়(বেনারস ঘরানা)
- পণ্ডিত বিশ্বনাথ বোস(বেনারস ঘরানা)
- পণ্ডিত কুমার বোস(বেনারস ঘরানা)
- পণ্ডিত পুরান মহারাজ(বেনারস ঘরানা)
- উস্তাদ জাকীর হুসেন(পাঞ্জাব ঘরানা)
- পণ্ডিত যোগেশ সামসী(পাঞ্জাব ঘরানা)
- পণ্ডিত শ্যামল বোস (ফরুখাবাদ ঘরাণা)
- পণ্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দোপাধ্যায় (বেনারস ঘরানা)
- কল্লোল চট্টোপাধ্যায় ( বেনারস ঘরানা)
- পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ( ফরুখাবাদ ঘরাণা)
- পণ্ডিত স্বপন চৌধুরী ( লক্ষ্ণৌ ঘরানা)
- পণ্ডিত সমর সাহা ( বেনারস ঘরানা)
- পণ্ডিত মল্লার ঘোষ ( ফরুখাবাদ ঘরানা)
- পণ্ডিত সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ( ফরুখাবাদ ঘরাণা)
- পণ্ডিত শঙ্কর ঘোষ ( ফরুখাবাদ ঘরাণা)
- নিখিল ঘোষ ( ফরুখাবাদ ঘরাণা)
- কানাই দত্ত ( ফরুখাবাদ ঘরাণা)
- পণ্ডিত গোবিন্দ বোস ( ফরুখাবাদ ঘরাণা)
- পণ্ডিত হীরু গাঙ্গুলি ( বেনারস ঘরানা)
- নাটুবাবু পণ্ডিত কৃষ্ণকুমার গাঙ্গুলি ( বেনারস ঘরানা)
- পণ্ডিত সমীর চট্টোপাধ্যায় ( ফরুখাবাদ ঘরাণা)
- সুখবিন্দর সিং ( পঞ্জাব ঘরানা)
- পণ্ডিত সুরেশ তলোয়ারকর ( ফরুখাবাদ ঘরাণা)
- আরও অনেকে
বাংলার তবলা
সম্পাদনাবাংলায় তবলা ঐতিহ্য অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। কলকাতার হিরু গাঙ্গুলী ও জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ বাংলায় তবলাকে জনপ্রিয় করেন। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ছিলেন ফারুখাবাদ ঘরাণার মসিত খাঁ সাহেবের শিষ্য।
বাংলার আধুনিক তবলিয়াদের মধ্যে কয়েকজন বিশিষ্ট বক্তিত্ব হলেন:
- শঙ্কর ঘোষ (জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের প্রধান শিষ্য )
- পণ্ডিত শ্যামল বোস ( জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের শিষ্য)
- গোবিন্দ বোস
- পণ্ডিত কুমার বোস (বেনারস ঘরানার সুপ্রসিদ্ধ তবলা বাদক সংগীত আচার্য্য পণ্ডিত বিশ্বনাথ বোস এবং রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত সেতার বাদক বিদুষী ভারতী বোসের সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং বেনারস ঘরানার পণ্ডিত কিষাণ মহারাজজীর সুযোগ্য শিষ্য। পণ্ডিত বিশ্বনাথ বোস বেনারস ঘরানার পণ্ডিত কন্ঠে মহারাজজীর শিষ্য ছিলেন। পিতা এবং পুত্রের মিলিত প্রয়াসে বেনারস ঘরের বাজ বাংলায় প্রচার ও সমৃদ্ধ হয়েছে। পণ্ডিত কুমার বোস বর্তমানে বেনারস ঘরানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ তবলা বাদক।)
- অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় (পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের শিষ্য)
- পণ্ডিত সমর সাহা
- বিক্রম ঘোষ (শঙ্কর ঘোষের পুত্র)
- এছাড়াও অনেকে
বাদনকালে তবলা ও বাঁয়াকে কাপড়ের বেড়ের উপর বসানো হয়। বাদক বসে বা দাঁড়িয়ে বাদ্য পরিবেশন করেন। বাজাবার পূর্বে একে উত্তমরূপে সুরে বেঁধে নিতে হয়। তবলার বোল রেলা, কায়দা, গৎ, আড়ি, কুআড়ি, গৎপরণ প্রভৃতি নামে পরিচিত। তবলাবাদনের বিভিন্ন ঘরানা আছে। তন্মধ্যে দুটি বাংলা ঘরানার নাম বিষ্ণুপুর ঘরানা ও ঢাকা ঘরানা। [সমবারু চন্দ্র মহন্ত] [২]
তবলা পরিভাষা
সম্পাদনাতাল (সঙ্গীত), তাল ফেরতা, তালভঙ্গ/ছন্দপতন,
ত্রিতাল, দাদরা, কাহারবা, একতাল, ঝাঁপতাল, রূপক, রূপকড়া, চৌতাল, আড়াচৌতাল, ধামার, যৎ, দীপচন্দী, পাঞ্জাবী (তাল), আদ্ধা, আদিতাল, মত্ততাল, রুদ্র, শিখর, ব্রহ্ম, কুম্ভ, পস্তো, লক্ষ্মী, ফরদোস্ত
লয়, লয়কারী, বিলম্বিত, ঠায় (লয়), দুন (লয়) (দ্বিগুন), ত্রিগুন, চৌদুন, দ্রুত, আড় ((লয়)), বিআড় (লয়), কুআড় (লয়),
বোল (তবলা), সম (সঙ্গীত), তালি (তবলা), খালি (তবলা)
ঠেকা, উপেজ (ঠেকার প্রকার), কায়দা (তবলা), পাল্টা (বিস্তার), রেলা (তবলা), লগ্গী, লড়ী, তিহাই, নবহক্কা তিহাই, চক্রদার, টুকড়া, দমদার ও বেদমদার টুকড়া, মুখড়া, উঠান, গৎ, পরন, পেশকার, লহরা, সঙ্গত, সওয়াল-জবাব,
তালিম, রেওয়াজ, নাড়া বাঁধা, সুর বাঁধা (মেলানো), নগমা,
তবলার বর্ণমালা
সম্পাদনাডানহাতের
সম্পাদনা- তা/না : অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা কানিতে আঘাত করলে তা বা না হয়।
- তি : অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা ময়দানে আঘাত করে তর্জনী না উঠালে তি হয়।
- তিন্ : অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা ময়দানে আঘাত করে তর্জনী উঠালে তিন্ হয়।
- দিন্/থুন্/দি/নে/নি : তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা একত্রে খিরনের উপর আঘাত করে আঙুলগুলো উঠিয়ে নিলে দিন্/থুন/দি/নে/নি হয়।
- তু/তুন্ : তর্জনী দ্বারা খিরনের কিনার বরাবর আঘাত করলে তু বা তুন্ হয়।
- তে/টে/তি/: তর্জনী ও মধ্যমার দ্বারা খিরনের মধ্যবর্তী স্থানে আঘাত করলে তে. টে বা তি উৎপন্ন হয়।
- রে/টি : তর্জনীর দ্বারা খিরনের মধ্যবর্তী স্থানে আঘাত করলে রে বা টি হয়।
- তাং : তর্জনী দিক কিছুটা উঁচু রেখে আঙুলগুলো প্রসারিত করে কনিষ্ঠা দিয়ে গাব স্পর্শ করে থাকা অবস্থায় খিরনের উপর অন্যান্য আঙুল দিয়ে আঘাত করলে তাং উৎপন্ন হয়। তবলায় একে চাটি বলে।
- দিং : তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা সংযুক্তকরে সরলভাবে প্রসারিত করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের উপর আলগা আঘাত করে হাত উঠিয়ে নিলে দিং উৎপন্ন হয়।
- তেৎ বা দেৎ : তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা সংযুক্তকরে সরলভাবে প্রসারিত করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা উড়ে চাপা আঘাত করেল তেৎ বা দেৎ উৎপন্ন হয়।
- ত্তা : মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা সংযুক্তকরে ঈষৎ বক্র করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের মধ্যস্থলে ফাঁপা আঘাত করলে ত্তা উৎপন্ন হয়। [৩]
বামহাতের
সম্পাদনা- কে/কি/ক : করতল ডুগীর খিরনের দিকে স্থাপন করে বৃদ্ধাঙ্গুলী সোজা এবং তর্জনী ঈষৎ বক্র করে মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠাকে সংযুক্ত করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনে আঘাত করলে কে, কি বা ক উৎপন্ন হবে।
- গে/গ/গা/গি/ঘ/ঘা/ঘি/ঘে : করতল ডুগীর খিরনের দিকে স্থাপন করে খিরন ও কানির মধ্যস্থলে মধ্যমা ও তর্জনীর বক্র করে, আঙুলের অগ্রভাগ দ্বারা আঘাত করেল গে, গ, গা, গি, ঘ, ঘা, ঘি বা ঘে উৎপন্ন হবে।
- কৎ : সমস্ত আঙুল সংযুক্ত করে লম্বা করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের উপরে সজোরে চাপা আঘত করলে কৎ ধ্বনি উৎপন্ন হবে।[৪]
- গমক
দুহাতের
সম্পাদনা- ধা : গে এবং তা এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
- ধিন/ধি : গে এবং দিন্ এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
- ধেং : গ এবং দিং এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
- তিন্ : কে এবং দিনধ্ এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
- ধিং : গে এবং দিং এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
- ধেৎ : গি এবং তেৎ এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
- ধে : গি এবং তে এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।[৫]
কতিপয় মিশ্র বোলের প্রয়োগ
সম্পাদনা১. কড়ান্/ক্রান্ : কৎ ধ্বনি উৎপন্নের পরে তা বা না বাজিয়ে উভয় হাত তুলে নিলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ২. কিনি : তি এবং ক একত্রে প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩. কেদিংকেনে: কে, দিং, কে ধ্বনি সৃষ্টির পর তবলার খিরন স্পর্শ করে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর আঘাত করলে নে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই চারটি ধ্বনি দ্রুত বাজিয়ে কেদিংকেনে উৎপন্ন করা হয়। ৪. ক্রানে : ক্রান ধ্বনি উৎপন্ন করার পর অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর মৃদু আঘাত করলে ক্রানে উৎপন্ন হয়। ৫. ক্রে : কে ধ্বনির সাথে তবলার খিরনে মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঘাত করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৬. গদি : গ এবং দি দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৭. গন : গ এবং ন দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৮. গদিঘেনে: গ, দিং, ঘে ধ্বনি সৃষ্টির পর তবলার খিরন স্পর্শ করে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর আঘাত করলে নে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই চারটি ধ্বনি দ্রুত বাজিয়ে কেদিংকেনে উৎপন্ন করা হয়। ৯. গেদিংকেনে: গে, দিং, কে ধ্বনি সৃষ্টির পর তবলার খিরন স্পর্শ করে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর আঘাত করলে নে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই চারটি ধ্বনি দ্রুত বাজিয়ে কেদিংকেনে উৎপন্ন করা হয়। ১০. গ্রে বা ঘ্রে : গে বা ঘে বাণীর পরে তে বা তেৎ বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১১. ঘড়ান্ : ঘ ধ্বনি উৎপন্নের পরে তা বা না বাজিয়ে উভয় হাত তুলে নিলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১২. ঘেন : ঘে এবং না একত্রে বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১৩. ঘ্রান্ : ঘড়ান্ বোল দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১৪. ঘ্রানে : ঘ্রান ধ্বনি উৎপন্ন করার পর অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর মৃদু আঘাত করলে ঘ্রানে উৎপন্ন হয়। ১৫. ঘ্রে : ঘে বাণীর পরে তে বা তেৎ বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১৬. তরান/ননান : তবলায় তাং বাজানোর সাথে সাথেই না বাজাতে হবে এরপর আবার তাং বাজাতে হবে। এই তিনটি কার্য দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১৭. তিক্ : তি এবং ক একত্রে প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১৮. তিট্ : উভয় হাতে ট প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১৯.তিনি : তি এবং দ্রুত প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ২০. তৃক : তবলায় দ্রত কিট এবং ডুগিতে একসাথে ত-ক বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ২১. ত্রে/দ্র : তে এবং রে দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ২২. ত্রেকেটে : তে,রে কে,টে ধ্বনি দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি পাওয়া যায়। ২৩. দ্ধে : ডুগির বড় ময়দানে কব্জির অল্প চাপে মধ্যমার দ্বারা খিরনের প্রান্তে আঘাত করতে হবে। একই সাথে অনামিকা, মধ্যমা ও কনিষ্ঠা দ্বারা তবলার খিরনে চাপা আঘাত করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ২৪. ধিট্/ধিরং : উভয় হাতে তি এবং ধি প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ২৫. ধানে : ধা বাজিয়ে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর ঈষৎ আঘাত করলে ধানে উৎপন্ন হয়। ২৬. ধিনি : তবলায় ধি এবং ডুগির কানি ও খিরনের মধ্যস্থলে একসাথে আঘাত করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ২৭. ধুমাকেটে : তবলার খিরনের উপর মধ্যমা ও অনামিকার অগ্রভাগ দিয়ে আঘাতের সাথে সাথেই বাঁয়ার পাগড়ির উপর আঙুল দ্বারা খোলা আঘাত করলে ধু ধ্বনি উৎপন্ন হয়। কিন্তু কেবল তর্জনীর দ্বারা তবলার খিরনে অল্প আঘাতে মা ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই দুটি ধ্বনি উৎপন্ন করার পরপরই কেটে ধ্বনি উৎপন্ন করা হয়। এবার দ্রুত এই চারটি ধ্বনি বাজালে ধুমাকেটে ধ্বনি পাওয়া যায়। ২৮. ধেরেধেরে : কনিষ্ঠার শেষপর্ব থেকে কব্জির পর্যন্ত পুরো অংশদেয় তবলায় আঘাত করলে এবং একই সাথে ডুগির কানি ও খিরনের মধ্যস্থলে মধ্যমার অগ্রভাগ দ্বারা আঘাত করলে ধে উৎপন্ন হবে। এই ধে-এর পরপরই যদি বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলের শেষাংশ দিয়ে তবলার গাবে আঘাত করলে রে উৎপন্ন হবে। এইভাবে দ্রুত ধেরে বাজিয়ে এই ধ্বনি উৎপন্ন করা হয়। ২৯. নাড়া : দুই বার দ্রুত না বাজালে নাড়া উৎপন্ন হয়।[৬]
বিশেষ
সম্পাদনা- ত্বকত্বক
- ধেরেধেরে
- ধেনেঘেনে, দিঙ্[৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বলার ইতিবৃত্ত। শম্ভুনাথ ঘোষ। আদি নাথ ব্রাদার্স। পৌষ ১৪১৭।
- ↑ http://bn.banglapedia.org/index.php?title=তবলা
- ↑ http://onushilon.org/music/instrument/tabla.htm
- ↑ ভারতীয় সঙ্গীতকোষ। শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। কথাশিল্প প্রকাশ। বৈশাখ ১৩৭২।
- ↑ বলার বাদন শৈলী ও তার ঘরানা। স্বরূপ হোসেন। শিল্পকলা (শিল্পকলা ষাণ্মাসিক বাংলা পত্রিকা)।
- ↑ বঙ্গীয় শব্দকোষ (দ্বিতীয় খণ্ড)। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য অকাদেমী। ২০০১।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৬।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |