রোমুলো বেতানকুর্ত
রোমুলো এর্নেস্তো বেতানকুর্ত বেল্লো (স্পেনীয় ভাষায়: Rómulo Ernesto Betancourt Bello) (২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯০৮, গুয়াতিরে, মিরান্দা, ভেনেজুয়েলা – ২৮শে সেপ্টেম্বর, ১৯৮১, নিউ ইয়র্ক)[১] ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ও পরবর্তীকালে ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি ছিলেন। [২] তিনি একজন বামপন্থী, কিন্তু সাম্যবাদ-বিরোধী, রাজনীতিবিদ ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি কৃষি সংস্কার, শিল্পোন্নয়ন এবং শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের ব্যাপারে নীতি অনুসরণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীতে ভেনেজুয়েলার অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা এবং দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দল আক্সিওন দেমোক্রাতিকার (Acción Democrática) নেতা।
রোমুলো বেতানকুর্ত | |
---|---|
ভেনেজুয়েলার ৪৫তম রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ১৮ই অক্টোবর, ১৯৪৫ – ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ | |
পূর্বসূরী | ইসাইস মেদিনা আংগারিতা |
উত্তরসূরী | রোমুলো গাইয়েগোস |
ভেনেজুয়েলার ৫২তম রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৯ – ১৩ই মার্চ, ১৯৬৪ | |
পূর্বসূরী | এদগার সানাব্রিয়া |
উত্তরসূরী | রাউল লেওনি |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯০৮ গুয়াতিরে, মিরান্দা রাজ্য |
মৃত্যু | ২৮শে সেপ্টেম্বর, ১৯৮১ নিউ ইয়র্ক শহর |
রাজনৈতিক দল | আক্সিওন দেমোক্রাতিকা |
দাম্পত্য সঙ্গী | কার্মেন বালবের্দে রেনে হার্টমান বিসো |
ধর্ম | রোমান ক্যাথলিক |
বেতানকুর্ত কারাকাস শহরের কাছে গুয়াতিরে-তে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কারাকাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সামরিক স্বৈরশাসক হুয়ান বিসেন্তে গোমেসের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ডের জন্য ১৯২৮ সালে কারারুদ্ধ হন। সপ্তাহ খানেক পর তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও তিনি গোমেসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকেন। ফলে তাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি নির্বাসিত ছিলেন। এসময় তিনি তার অভিজ্ঞতার উপর একটি বই লেখেন এবং স্বল্প সময়ের জন্য কোস্টা রিকার কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৩৭ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু ১৯৩৯ সালে তাকে আবারও একই কারণে নির্বাসিত করা হয়। ১৯৪১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার ফিরে এসে বামপন্থী রাজনৈতিক দল "আকসিওন দেমোক্রাতিকা" গঠন করেন। দলটি শিঘ্রই প্রচুর জনসমর্থন কুড়াতে সক্ষম হয়। জেনারেল ইসাইস মেদিনা আংগারিতার বিরুদ্ধে একটি সামরিক ক্যু সংঘটিত হবার পর তাকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি বানানো হয়। এসময় তিনি একটি নতুন সংবধান লেখেন এবং একটি মধ্যপন্থী সামাজিক সংস্কার প্রকল্প শুরু করেন, যার অংশ হিসেবে ছিল ভূমি-সংস্কার ও কৃষকদের মাঝে ভূমি পুনর্বিতরণ এবং তেল কোম্পানিগুলির উপর অধিকতর সরকারি নিয়ন্ত্রণ। ১৯৪৮ সালে তিনি পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য পদত্যাগ করেন, কিন্তু এর পরপরই মার্কোস পেরেস হিমেনেস সামরিক ক্যু ঘটান এবং তাকে আবারও নির্বাসিত করা হয়। আকসিওন দেমোক্রাতিকাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বেতানকুর্ত পরবর্তী দশ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কিউবা, পুয়ের্তো রিকো ও কোস্টা রিকাতে কাটান এবং নিষিদ্ধ আকসিওন দেমোক্রাতিকার সদস্যদের পরিচালনা করতে থাকেন। ১৯৫৮ সালে হিমেনেসকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে দশ বছর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দেশটির গণতন্ত্রের ভিত্তি দৃঢ় করেন। ১৯৬০ সালে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের স্বৈরশাসক রাফায়েল তুর্হিয়ো ব্যক্তিগত বিদ্বেষবশত তাকে হত্যার জন্য ঘাতক পাঠান, কিন্তু কারাকাসে এ গুপ্ত বোমা আক্রমণে তিনি আহত হলেও অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। তিনি ১৯৬১ সালে দেশটির নতুন সংবিধান রচনার প্রক্রিয়া দেখাশোনা করেন এবং দেশ শাসনে সামরিক বাহিনীর প্রভাব খর্ব করেন। তিনি এসময় কিউবাপন্থী কট্টর সাম্যবাদী ও শঙ্কাগ্রস্ত রক্ষণশীলদের মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন এবং পেট্রোলিয়াম নির্ভরতা কমানোর জন্য দেশে শিল্পের প্রসার ঘটান। ১৯৬৪ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি সুইজারল্যান্ডে আট বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। ১৯৭২ সালে তিনি আবার ভেনেজুয়েলায় ফিরে আসেন এবং ১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। তবে ঐ বছর বেতানকুর্তকে ভেনেজুয়েলার সিনেটের আজীবন সদস্যপদ দেয়া হয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক ভেনেজুয়েলার জনক হিসেবে পরিচিত বেতানকুর্ত ১৯৮১ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে ডক্টর্স হসপিটালে ৭৩ বছর বয়সে মারা যান।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Biografia de Rómulo Betancourt"। www.biografiasyvidas.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৩।
- ↑ "Rómulo Betancourt | president of Venezuela | Britannica"। www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৩।