রেজিনা গুহ (মৃত্যু ১৯১৯) ছিলেন একজন ভারতীয় আইনজীবী এবং শিক্ষক। ১৯১৬ সালে, তিনি আইনি বিধানগুলির ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি উল্লেখযোগ্য মামলা লড়েন। বিধানগুলি কার্যকরভাবে ভারতে মহিলাদের আইন অনুশীলন থেকে নিষিদ্ধ করেছিল।[১]

রেজিনা গুহ
রেজিনা গুহ আনুমানিক ১৯১৩
জন্ম
রেজিনা গুহ
মৃত্যু১৯১৯
পিতা-মাতাপিয়ারে মোহন গুহ (বাবা), সিমচা গুব্বে (মা)
পরিবারহান্না সেন (বোন)

জীবন সম্পাদনা

রেজিনার বাবা ও মায়ের নাম ছিল যথাক্রমে পিয়ারে মোহন গুহ (একজন আইনজীবী) এবং সিমচা গুব্বে। সিমচা একজন বাগদাদি ইহুদি মহিলা ছিলেন।[১] রেজিনার বাবাও পরে ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। রেজিনা এবং তাঁর তিন ভাইবোন ইহুদি বিশ্বাসে বেড়ে ওঠেন। রেজিনা এবং তাঁর বোন হান্না আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর বোন, হান্না সেন, একজন শিক্ষক এবং রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন।[১][২][৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

রেজিনা ১৯১৩ সালে প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রী নিয়ে তাঁর মাস্টার অফ আর্টস সম্পন্ন করেন এবং তাঁর ক্লাসে তিনি মর্যাদাক্রমে প্রথম অবস্থানে ছিলেন।[২][৪] তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৫ সালে আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপরে তিনি আলিপুর জেলা জজ আদালতে একজন বাদী (আইনজীবী) হিসাবে নথিভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু মহিলাদের নথিভুক্ত করার অনুমতি নেই এই কারণে তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। রেজিনা কলকাতা হাইকোর্টে এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে যুক্তি দিয়েছিলেন যে নিয়ন্ত্রক আইন, দ্য লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস অ্যাক্ট, যোগ্য "ব্যক্তিদের" আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত করার অনুমতি দেয় এবং 'ব্যক্তি'-এর সংজ্ঞা মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করে। তাঁর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন আইনজীবী এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন সদস্য ইয়ার্ডলি নর্টন[১][২][৫] কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচজন পুরুষ বিচারকের একটি বেঞ্চ ইন রে রেজিনা গুহ (রেজিনা গুহকে দেওয়া জবাবে) মামলায় রায় দিয়েছে যে যদিও গভর্নিং আইন, লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস অ্যাক্ট ১৮৭৯, তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে 'ব্যক্তি' শব্দটি ব্যবহার করেছে, সেখানে নারী এই শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করেনি।[৬][৭] তারা তদনুসারে তাঁকে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত করার অধিকার দিতে অস্বীকার করেছিল।[৮]

রেজিনা গুহ কলকাতার ইহুদি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হয়েছিলেন এবং স্কুলের প্রথম ইহুদি অধ্যক্ষ ছিলেন।[২]

রেজিনা গুহের মামলাটি সেই সময়ে যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলা বেব বনাম ল সোসাইটি এবং ব্র্যাডওয়েল বনাম ইলিনয় লড়াইয়ের তুলনামূলক মামলার মতো ছিল।[১] সুধাংশুবালা হাজরা যখন পাটনা হাইকোর্টে মহিলা অনুশীলনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তখন ভারতে এটি একটি দ্বিতীয় অসফল আবেদন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।[৫] ১৯২৩ সালে, লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার (উইমেন) অ্যাক্টের প্রণয়ন শেষ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞাকে সরিয়ে দেয়, যার বলে নারীরা তালিকাভুক্ত হতে পারে এবং আইন অনুশীলন করার অনুমতি পায়।[১] আইনটি রেজিনা গুহের মৃত্যুর পরে পাস করা হয়েছিল, কিন্তু তাঁর ভাইবোনেরা এই আইন কার্যকর হওয়াকে চিহ্নিত করার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বৃত্তিদান শুরু করেছিলেন, প্রতি বছর এমএ ইংরেজি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ছাত্রকে একটি পদক প্রদান ক'রে।[১][২]

আরও পড়ুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Sen, Jhuma। "The Indian Women Who Fought Their Way Into the Legal Profession"The Wire। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৮ 
  2. Chakrabarti, Kaustav (মার্চ ২০১৭)। ""Revisiting the Educational and Literacy Activities among the Jewish Women of Calcutta"": 25–50। ডিওআই:10.11114/ijsss.v5i3.2241 HeinOnline-এর মাধ্যমে। 
  3. "Recalling Jewish Calcutta | Hannah Sen · 04 Women Pioneers"www.jewishcalcutta.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৮ 
  4. "Miss Regina Guha"The Times of India। ২৩ আগস্ট ১৯১৯। প্রোকুয়েস্ট ৩১১১১৭৯১৮ 
  5. जैन, Arvind Jain अरविंद (২০১৯-০৬-১২)। "No place for women in temples of justice"Forward Press (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৮ 
  6. Mishra, Saurabh Kumar (২০১৫-১২-১৫)। "Women in Indian Courts of Law: A Study of Women Legal Professionals in the District Court of Lucknow, Uttar Pradesh, India" (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 1647-0737ডিওআই:10.4000/eces.1976  
  7. Veeraraghavan, A.N. (১৯৭২)। "Legal Profession and the Advocates Act, 1961": 228–262। আইএসএসএন 0019-5731জেস্টোর 43950131 
  8. Manson, Edward; Trevelyan, E. J. (১৯১৭)। "Notes on Cases": 268–278। আইএসএসএন 1479-5973জেস্টোর 752258