রুম (উপন্যাস)

সাহিত্য কর্ম

রুম (কক্ষ) আইরিশ-কানাডীয় লেখিকা এমা ডনাহিউর ২০১০ সালের একটি উপন্যাস। পাঁচ বছরের শিশু জ্যাকের দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পটি বলা হয়েছে, যে তার মায়ের সাথে একটি ছোট কামরায় বন্দী রয়েছে।[১] ফ্রিৎজল কেস-এ পাঁচ বছর বয়সী ফেলিক্স এবং পেনসিলভেনিয়ার এক নারী উপন্যাসটির মতই একটি ছোট কামরায় তার সন্তানদের ৮ বছর ধরে বন্দী রাখার বিষয়ে ২০০৮ সালে আদালতের একটি মামলার বিষয়ে শোনার পর ডনাহিউ উপন্যাসটি রচনায় অনুপ্রাণিত হন।[২]

রুম
রুম উপন্যাসের প্রচ্ছদ
লেখকএমা ডনাহিউ
প্রচ্ছদ শিল্পীক্যাসিয়া বেক (আলোকচিত্র)
দেশকানাডা, আয়ারল্যান্ড
ভাষাইংরেজি
ধরনউপন্যাস
প্রকাশকপ্যান ম্যাকমিলান (কানাডা)
লিটল, ব্রাউন (যুক্তরাষ্ট্র)
প্রকাশনার তারিখ
৬ আগস্ট ২০১০
মিডিয়া ধরনমুদ্রণ (হার্ডকভার এবং পেপারব্যাক)
পৃষ্ঠাসংখ্যা৩৩৬ (হার্ডব্যাক)
আইএসবিএন৯৭৮-০-৩৩০-৫৩৩৯৭-৩
পূর্ববর্তী বইদ্য সিলড লেটার 

উপন্যাসটি ২০১১ অরেঞ্জ প্রাইজের জন্য দীর্ঘ তালিকায় স্থান পায়[৩] এবং ২০১১ কমনওয়েলথ রাইটার্স প্রাইজ আঞ্চলিক পুরস্কার (ক্যারিবিয় ও কানাডা) অর্জন করে। এছাড়াও এটি ২০১০ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার এবং ২০১০ রজার্স রাইটার্স ট্রাস্ট ফিকশন পুরস্কার এবং ২০১০ গভর্নর জেনারেল পুরস্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পায়। [৪][৫]

রুম উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্র ২০১৫ সালের অক্টোবরে মুক্তি পায়, যেটির শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন ব্রি লারসনজ্যাকব ট্রেম্বলে। চলচ্চিত্রটি সমালোচক ও বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভ করে। এছাড়াও এটি ৮৮তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা চলচ্চিত্রসহ মোট চারটি বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে এবং লারসন সেরা অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।

কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা

জ্যাক তার মায়ের সাথে রুম-এ থাকে, একটি আবদ্ধ একক কামরা, যাতে রয়েছে একটি ছোট রান্নাঘর, একটি বাথরুম, একটি আলমারি, একটি বিছানা ও টেলিভিশন। এগুলোই জ্যাকের একমাত্র পরিচিত জিনিস হওয়ায় জ্যাক মনে করে শুধুমাত্র কামরাটি ও এর মধ্যেকার জিনিসঔ (সে ও তার মা-সহ) একমাত্র বাস্তব। তার মা তাকে একটি সাধারণ জীবন দিতে পারবে না জেনে সেও জ্যাককে বিশ্বাস করতে দেয় পৃথিবীর বাকী সবকিছুর অস্তিত্ব শুধুমাত্র টেলিভিশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার মা মানসিক ও শারীরিক ব্যায়াম করানোর মাধ্যমে জ্যাককে সুখী ও সুস্থ রাখার সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করে। জ্যাকের দেখা অন্য একমাত্র ব্যক্তি হলো ওল্ড নিক, যে শুধুমাত্র রাতের বেলায় কামরাটিতে আসে, যখন জ্যাক আলমারিতে ঘুমায়। ওল্ড নিক তাদের ঔষধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে দেয়। জ্যাক জানেনা যে, ওল্ড নিক তার মায়ের ১৯ বছর বয়সে তাকে অপহরণ করে এবং তাকে সাত বছর যাবৎ বন্দী করে রেখেছে এবং সে প্রতিনিয়ত তার মাকে ধর্ষণ করে।

জ্যাকের পঞ্চম জন্মদিনের এক সপ্তাহ পর, তার মা জানতে পারে বিগত ছয় সপ্তাহ ধরে ওল্ড নিক বেকার রয়েছে এবং সে তার বাড়িও হারাতে পারে। সে মনে করে মুক্ত করার আগে ওল্ড নিক তাদের উভয়কে হত্যা করতে পারে। আর এজন্য জ্যাককে কামরা থেকে বের করার জন্য সে একটি পরিকল্পনা করে, সে ওল্ড নিককে বিশ্বাস করায় জ্যাক প্রচন্ড অসুস্থ। জ্যাক বাইরের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে ও লোকজনের সাথে মিশতে অক্ষম, তার মা তাকে প্রতিনয়ত সাহায্য করার আশ্বাস দেয়। যখন ওল্ড নিক জ্যাককে হাসপাতালে নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন সে জ্যাককে দিয়ে মরে যাওয়ার অভিনয় করায়। এবার ওল্ড নিক জ্যাককে একটি কম্বলে মুড়িয়ে কামরা থেকে বের করে। বাইরে জ্যাক ওল্ড নিকের কাছ থেকে পালাতে সক্ষম হয় ও একজন পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যে পুলিশে খবর দেয়। সাধারণ লোকজনের সাথে যোগাযোগের অক্ষমতা সত্ত্বেও জ্যাক পুলিশকে তার মায়ের কথা জানায়।

তাদের দুজনকে একটি মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে তারা চিকিৎসা ও সাময়িক আশ্রয় পায়। ওল্ড নিককে খুজে বের করা হয় ও তাকে অপহরণ, ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, যার ফলে তার ২৫ বছরের কারাদন্ড হতে পারে৷ হাসপাতালে থাকা অবস্থায় জ্যাকের মা তার পরিবারের সাথে পুনরায় মিলিত হয় এবং বড় জগতের সাথে কীভাবে মানিয়ে চলতে হয় তা আবার নতুন করে শিখতে শুরু করে, যেখানে জ্যাক নতুন লোকজন ও নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আতঙ্কিত এবং সে শুধু পুনরায় বদ্ধ কামরাটিতে ফিরে যেতে চায়। এদিকে ঘটনাটি লোকজন ও গণমাধ্যমের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা জ্যাক ও তার মায়ের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে আরও কঠিন করে তোলে। একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের পর জ্যাকের মা মানসিকভাবে প্রচন্ড আঘাত পায় ও আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

মা যখন হাসপাতালে জ্যাক তখন তার দাদী ও দাদীর নতুন সঙ্গীর সাথে বাস করে। পাশে মাকে ছাড়া তার নতুন বড় পরিবার ও আশপাশের সকল জিনিসের বিষয়ে বিভ্রান্ত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

তার মা সুস্থ হওয়ার পর জ্যাক এবং সে নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়, যেখানে তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করে। তারা দুইজনেই নতুন পরিবেশের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে শুরু করে। অবেশেষে জ্যাক কামরাটিতে যাওয়ার অনুরোধ করে। সে ও তার মা তাদের বন্দীদশার জায়গায় ফিরে যায়, কিন্তু জ্যাক এখন জায়গাটির প্রতি আগের মত টান অনুভব করে না, সে ও তার মা শেষবারের মত জায়গাটি ত্যাগ করার আগে তারা একে বিদায় জানায়।

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

  • নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার (ফিকশন, ২০১০)
  • ম্যান বুকার পুরস্কার, সংক্ষিপ্ত তালিকা (২০১০)
  • রজার্স রাইটার্স' ট্রাস্ট ফিকশন প্রাইজ (২০১০)
  • ইন্ডিগো বুকস এন্ড মিউজিক হেদার্স পিক (২০১০)
  • নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট বুক অব দ্য ইয়ার (২০১০)
  • নিউ ইয়র্ক টাইমস নোটেবল বুক অব দ্য ইয়ার (ফিকশন প পয়েট্রি, ২০১০)
  • সেলুন বুক এ্যাওয়ার্ডস (ফিকশন, ২০১০)
  • গভর্নর জেনারেলস এ্যাওয়ার্ডস, সংক্ষিপ্ত তালিকা (ফিকশন, ২০১০)
  • অ্যালেক্স এ্যাওয়ার্ড (২০১০)
  • পাবলিশার্স উইকলি লিসেন আপ এ্যাওয়ার্ড (বর্ষসেরা অডিও বই, ২০১০)
  • এএলএ নোটেবল বুক (২০১১)
  • হিউস এন্ড হিউস আইরিশ নভেল অব দ্য ইয়ার, আইরিশ বুক এ্যাওয়ার্ডস (২০১০)
  • কমনওয়েলথ রাইটার্সনপ্রাইজ (কানাডা ও ক্যারিবিয়, ২০১১)
  • ইন্ডিজ চয়েস বুক এ্যাওয়ার্ডস (অ্যাডাল্ট ফিকশন, ২০১১)
  • অরেঞ্জ প্রাইজ, সংক্ষিপ্ত তালিকা (২০১১)
  • ডব্লিউ এইচ স্মিথ পেপারব্যাক অব দ্য ইয়ার, গ্যালাক্সি ন্যাশনাল বুক এ্যাওয়ার্ডস (২০১১)
  • ইন্টারন্যাশনাল ইমপ্যাক ডাবলিন লিটারারি এ্যাওয়ার্ড (২০১২)[৬]

চলচ্চিত্র সম্পাদনা

উপন্যাসটির উপর ভিত্তি করে ২০১৫ সালে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, রচয়িতা এমা ডনাহিউ এবং পরিচালক লেনি আব্রাহামসন। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন ব্রি লারসন, জোন অ্যালেন, উইলিয়াম এইচ. মেসি, শন ব্রিজার্স এবং জ্যাকব ট্রেম্বলেটেলুরাইড চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পর চলচ্চিটি ২০১৫ টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ প্রদর্শনী বিভাগে প্রদর্শন করা হয়।[৭] ২০১৫ সালের ১৬ই অক্টোবর চলচ্চিত্রটি সীমিত পরিসরে মুক্তি দেওয়া হয় এবং এ২৪ ফিল্মস-এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়।[৮] চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের থেকে ব্যপক প্রশংসা লাভ করে এবং বহু পুরস্কার অর্জন করে। এটি ৮৮তম একাডেমি পুরস্কারের জন্য সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা চিত্রনাট্যসহ চারটি বিভাগে মনোনিত হয় এবং সেরা অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করে। চিত্রনাট্য রচনার জন্য ৪র্থ কানাডীয় স্ক্রিন এ্যাওয়ার্ড-এ ডনাহিউ সেরা চিত্রনাট্য বিভাগে এবং সেরা চিত্রনাট্যকার বিভাগে ১৩তম আইরিশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন।[৯][১০]

ডনাহিউ উপন্যাসটি মঞ্চায়িত করার জন্যও চিত্রনাট্য রচনা করেন,[১১] যার উদ্বোধনী প্রদর্শন হয় ২০১৭ সালের ১০ই মে থিয়েটার রয়্যাল স্ট্রাটফোর্ড ইস্টে। এটিও ব্যপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।[১২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Barber, John. (September 7, 2010). "Emma Donoghue delighted by Booker nom[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]", The Globe and Mail. Retrieved September 9, 2010.
  2. Bethune, Brian. (September 7, 2010). "Emma Donoghue’s room without a view: Her new novel is claustrophobic, controversial, brilliant—and on the Booker short list ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে", Macleans. Retrieved September 9, 2010.
  3. Brown, Mark. (March 16, 2011). "Orange prize longlist tackles difficult subjects – and alligators ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে",The Guardian. Retrieved March 17, 2011.
  4. Frenette, Brad. (September 29, 2010). "Finalists announced for the Writers Trust Awards আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ১ জুলাই ২০১২ তারিখে", National Post. Retrieved September 29, 2010.
  5. "Emma Donoghue, Kathleen Winter make GG short list" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ অক্টোবর ২০১০ তারিখে. The Globe and Mail, October 13, 2010.
  6. "Three Irish novels among IMPAC nominees" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ নভেম্বর ২০১১ তারিখে. RTÉ News. 7 November 2011.
  7. "Toronto to open with 'Demolition'; world premieres for 'Trumbo', 'The Program'"ScreenDaily। ২৮ জুলাই ২০১৫। ২৯ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৫ 
  8. McNary, Dave (29 July 2015). "Brie Larson’s ‘Room’ Set for Oct 16 Release." ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে Variety.com. Retrieved 16 September 2015.
  9. "Feature Film Winners"Academy of Canadian Cinema and Television। মার্চ ১৩, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৭, ২০১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. "IFTA"। Irish Film & Television Academy। আগস্ট ১৮, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১, ২০১৬ 
  11. Room To Be Adapted accessed 11/23/2016
  12. "Room Review: Emma Donoghue's story of survival is ingeniously staged"The Guardian। ১১ মে ২০১৭। ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৭