রুডি কোয়ের্তজেন
রুডল্ফ এরিক রুডি কোয়ের্তজেন (/ˈkɜːrtsən/; আফ্রিকান্স: Rudi Koertzen; জন্ম: ২৬ মার্চ, ১৯৪৯) ওয়েস্টার্ন কেপের কিসনা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক প্রথিতযশা দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আম্পায়ার। তরুণ অবস্থাতেই ক্রিকেটের প্রতি তার সুগভীর অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। দক্ষিণ আফ্রিকার রেলওয়ে বিভাগে কেরাণী হিসেবে কর্মরত অবস্থায়ও লীগ ক্রিকেটে অংশ নেন। ১৯৮১ সালে আম্পায়ার হিসেবে খেলা পরিচালনায় অগ্রসর হন রুডি কোয়ের্তজেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | |
---|---|
পূর্ণ নাম | রুডল্ফ এরিক কোয়ের্তজেন |
জন্ম | কিসনা, পশ্চিম কেপ, দক্ষিণ আফ্রিকা | ২৬ মার্চ ১৯৪৯
ডাকনাম | রুডি |
আম্পায়ারিং তথ্য | |
টেস্ট আম্পায়ার | ১০৮ (১৯৯২–২০১০) |
ওডিআই আম্পায়ার | ২০৯ (১৯৯২–২০১০) |
উৎস: ক্রিকইনফো, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ |
আম্পায়ারিত্ব
সম্পাদনা৯ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তারিখে প্রথম ওডিআই এবং ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট খেলা পরিচালনা করেন তিনি। উভয় খেলাই দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, ঐ সিরিজে প্রথমবারের মতো রান আউটের সিদ্ধান্তে সহায়তাকল্পে টেলিভিশন রিপ্লে ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল। খুব ধীরলয়ে তর্জনী উত্তোলনের মাধ্যমে ব্যাটসম্যানের আউট ঘোষণা করে খুব দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন কোয়ের্তজেন।
১৯৯৭ সালে পূর্ণাঙ্গকালীন আইসিসি আম্পায়ার মনোনীত হন তিনি। ২০০২ সালে প্রবর্তিত আইসিসির সেরা আম্পায়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রকৃত আম্পায়ারদের অন্যতম ছিলেন তিনি। সর্বমোট ২০৯টি ওডিআই পরিচালনা করেছেন তিনি। ডেভিড শেফার্ডের পর দ্বিতীয় আম্পায়ার হিসেবে ১৫০ ওডিআই পরিচালনার অধিকারী হন। ১৯ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ভারত বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার খেলা পরিচালনার মাধ্যমে এ মর্যাদার অধিকারী হন তিনি।[১] এরপর শেফার্ডের গড়া ১৭২ ওডিআই পরিচালনার রেকর্ড ক্রিকেট বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার বার্বাডোসে অনুষ্ঠিত ২১ এপ্রিল, ২০০৭ তারিখে অতিক্রমণ করেন।[২] ১১ জুলাই, ২০০৯ তারিখে ডাবলিনে আয়ারল্যান্ড-কেনিয়ার মধ্যকার খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২০০তম ওডিআই পরিচালনা করেন তিনি।[৩] স্টিভ বাকনরের পর দ্বিতীয় আম্পায়ার হিসেবে টেস্টে শততম খেলা পরিচালনা করেন। ১৬ জুলাই, ২০০৯ তারিখে লর্ডসে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে এ গৌরব অর্জন করেছেন তিনি।[৪] তিনি সর্বমোট ১০৮ টেস্টের দায়িত্ব পালন করেন।
বেশ কিছু উচ্চ স্তরের খেলা পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। তন্মধ্যে, ভারত-পাকিস্তান সিরিজ ও অ্যাশেজ সিরিজ অন্যতম। ২০০৩ ও ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপেও তার অংশগ্রহণ ছিল। সেমি-ফাইনালে অন-ফিল্ড আম্পায়ার ও ফাইনালে তৃতীয় আম্পায়ার ছিলেন। ২০০৪ ও ২০০৬ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে অন্যতম আম্পায়ার ছিলেন। ২০০৫ সালে সাইমন টাওফেল, আলীম দার ও ড্যারেল হেয়ারের সাথে অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্ব একাদশের মধ্যকার আইসিসি সুপার সিরিজের খেলা পরিচালনার জন্য মনোনীত হন।
বিতর্ক
সম্পাদনাপেশাদারী পর্যায়ে থেকে তিনি কিছু বিতর্কিত অবস্থা অবলোকন করেন। সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারতের মধ্যকার কোকা-কোলা সিঙ্গাপুর চ্যালেঞ্জের চূড়ান্ত খেলায় ফলাফল নির্ধারণে ঘুষ প্রত্যাখ্যান করেন। জানুয়ারি, ২০০০ সালে সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্টে জোরপূর্বক ফলাফলে এক জুয়াড়ী কর্তৃক অধিনায়ক হানসি ক্রনিয়ের সম্পৃক্ততা অন্যতম।[৫]
বেশ কয়েকটি ভুলের সাথেও তার অংশগ্রহণ রয়েছে। মার্চ, ২০০১ সালে ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্টে দূর্বলভাবে খেলা পরিচালনা করেছেন।[৬] ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে তার বিভ্রান্তিপূর্ণ আইন প্রয়োগের কারণে মন্দালোকের মাধ্যমে খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয়। এরফলে পরের বছরে আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অবশ্য ২০০৯ সালের টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় তাকে রাখা হয়েছিল।
সম্মাননা
সম্পাদনাখেলোয়াড়দের কাছে তিনি সম্মানীয় ছিলেন। ২০০২ সালে আনুষ্ঠানিক ভোটে শীর্ষ আম্পায়ার হন। ২০০৫ ও ২০০৬ সালে আইসিসি বর্ষসেরা আম্পায়ার হিসেবে মনোনয়ন পেলেও টাওফেল এবং দারের পিছনে অবস্থান করে তৃতীয় হন।
৪ জুন, ২০১০ তারিখে কোয়ের্তজেন আম্পায়ার থেকে তার অবসরের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।[৭] ৯ জুন, ২০১০ তারিখে হারারেতে জিম্বাবুয়ে-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সর্বশেষ ওডিআই পরিচালনা করেন। এরপর ২১-২৪ জুলাই, ২০১০ তারিখে লিডসে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার চূড়ান্ত খেলা পরিচালনায় অংশ নেন।[৮]
পরিসংখ্যান
সম্পাদনাপ্রথম | শেষ | সর্বমোট | |
---|---|---|---|
টেস্ট | দক্ষিণ আফ্রিকা ব ভারত, পোর্ট এলিজাবেথ, ২৬-২৯ ডিসেম্বর, ১৯৯২ | পাকিস্তান ব অস্ট্রেলিয়া, লিডস, ২১-২৪ জুলাই, ২০১০ | ১০৮ |
ওডিআই | দক্ষিণ আফ্রিকা ব ভারত, পোর্ট এলিজাবেথ, ৯ ডিসেম্বর, ১৯৯২ | জিম্বাবুয়ে ব শ্রীলঙ্কা, হারারে, ৯ জুন, ২০১০ | ২০৯ |
টি২০আই | দক্ষিণ আফ্রিকা ব পাকিস্তান, জোহানেসবার্গ, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ | ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব অস্ট্রেলিয়া, গ্রোস আইলেট, ১১ মে, ২০১০ | ১৪ |
পুরস্কারসমূহ
- ১০০ ওডিআই পরিচালনার জন্য আইসিসি ব্রোঞ্জ বেইল পুরস্কার
- ২০০ ওডিআই পরিচালনার জন্য আইসিসি রৌপ্য বেইল পুরস্কার
- ১০০ টেস্ট পরিচালনার জন্য আইসিসি স্বর্ণ বেইল পুরস্কার
একমাত্র আম্পায়ার হিসেবে উপরের সবগুলো পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Murgatroyd, Brian (১৯ এপ্রিল ২০০৬)। "'Slow death' Koertzen achieves landmark in inaugural Abu Dhabi ODI"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ Fitzgerald, James (২১ এপ্রিল ২০০৭)। "Umpire Koertzen breaks record for most number of ODIs"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Koertzen Reaches 200 Mark In ODIs"। Cricket World। ১১ জুলাই ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Lord's Test to be Koertzen's 100th"। ESPNcricinfo। ১৬ জুলাই ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ Polack, John (১০ মে ২০০০)। "A Definitive Overview of Cricket Match-Fixing, Betting and Corruption Allegations"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Wisden Almanack - Sri Lanka v England, 2000-01"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Umpire Rudi Koertzen set to retire"। ESPNcricinfo। ৪ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ "ICC pays tribute to the retiring Rudi Koertzen"। TheSportsCampus.com। ৪ জুন ২০১০। ৫ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১০।