রাশিয়ার ইতিহাস
রাশিয়ার ইতিহাস শুরু হয় পূর্ব স্লাভ ও ফিনো-উগ্রিক জাতির বিকাশের মধ্য দিয়ে।[১][২] প্রথাগত রুশ ইতিহাস শুরু হয় ৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সমন্বিত পূর্ব স্লাভীয় রাষ্ট্র, কিয়েভান রুস, প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রটি ৯৮৮ সালে বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্য হতে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে, যার ফলে বাইজেন্টীয় ও স্লাভীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন শুরু হয় যা পরবর্তী সহস্রাব্দ পর্যন্ত গোঁড়া স্লাভীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে। কিয়েভান রুশ ১২৩৭ থেকে ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে মোঙ্গলদের আক্রমণের ফলে বিভক্ত হতে শুরু করে এবং এই আক্রমণগুলোতে রুসের প্রায় অর্ধেক জনগণ মারা যায়।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর পর মস্কো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাশিয়ার জারতন্ত্র বিকাশ লাভ করে রুশ সাম্রাজ্যে পরিণত হয়, যা পূর্ব পোল্যান্ড থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সে সময় প্রায়ই কৃষক বিদ্রোহ লেগে থাকতো এবং সবগুলো বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করা হয়। রুশ সের্ফতন্ত্র ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে বিলুপ্ত হয়, কিন্তু কৃষকেরা অল্প কর পরিশোধ করত এবং বিল্পবী চাপ প্রদান করত। পরবর্তী দশকগুলোতে সংস্কারের প্রচেষ্টা, যেমন স্তোলপিন সংস্কার, ১৯০৬ সালের সংবিধান ও স্টেট দুমা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে মুক্ত ও স্বাধীন করার চেষ্টা করে, কিন্তু জারগণ তাদের স্বৈরশাসন ত্যাগ বা তাদের ক্ষমতা বণ্টন করতে নারাজ ছিলেন।
প্রাক-ইতিহাস
সম্পাদনা২০০৬ সালে উত্তর ককেশাসের দাগেস্তান আকুশা অঞ্চল থেকে ১.৫ মিলিয়ন বছর পুরনো ওল্ডোয়ান ফ্লিন্টের সরঞ্জাম আবিস্কৃত হয়, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে প্রারম্ভিক সময় থেকেই রাশিয়ায় মানব বিচরণ ছিল।[৩] ইউরোপের কোন স্থান থেকে প্রাপ্ত আধুনিক মানুষের অস্তিত্বের প্রথম প্রমাণ মিলে ২০০৭ সালে রাশিয়ার ডন নদীর নিকটবর্তী কস্তেন্কি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের গভীরতম স্তর থেকে, যা ৪০,০০০ বছরের পুরনো বলে ধারণা করা হয়।[৪] ৪০,০০০ বছর পূর্বে আর্কটিক রাশিয়ায় মানুষ পৌঁছেছিল। আদিগিয়ার মেজমাইস্কায়া গুহায় নিন্দার্টাল শিশুদের আংশিক কঙ্কাল আবিস্কারের পর প্রকাশিত হয় যে আর্কটিক রাশিয়া ছিল সর্বশেষ নিন্দার্টালদের নিবাস, কার্বন তারিখ গণনা অনুসারে তা ২৯,০০০ বছর পুরনো।[৫] ২০০৮ সালে নভসিবির্স্কের ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলজি অ্যান্ড এথনোলজির রুশ প্রত্নতত্ত্ববিদগণ সাইবেরিয়ার আল্টাই পর্বতমালার দেনিসভা গুহায় অনুসন্ধান চালিয়ে ৪০,০০০ বছর পুরনো একটি শিশু হোমিনিনের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের হাড় আবিষ্কার করে। এর ডিএনএ বিশ্লেষণ করার পর প্রকাশিত হয় যে এটা মানুষের অজ্ঞাত কোন প্রজাতির, যার নাম দেওয়া হয় দেনিসভা হোমিনিন।[৬]
প্রারম্ভিক ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রাচীনকাল
সম্পাদনাখ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর শেষের দিকে গ্রিক বণিকের তানাইস ও ফানাগোরিয়ায় বাণিজ্য সম্ভারের পাশাপাশি ধ্রুপদী সভ্যতার ছোঁয়া এনে দেয়।[৭] হেরোডটাস খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দের দিকে হেলনি ও বুদিনিদের তৈরি গেলোনাসকে বৃহৎ (ইউরোপের সর্ববৃহৎ) মাটি ও কাট দিয়ে নির্মিত বসতি বলে উল্লেখ করেন। ৬৩ থেকে ৬৮ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট নিরোর অধীনস্থ বসপরান রাজ্য ছিল রোমান সাম্রাজ্যের প্রদেশ মোয়েসিয়ার অংশ। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে গথরা কৃষ্ণ সাগরের তীরে অভিবাসিত হয় এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে দক্ষিণ রাশিয়ায় অর্ধ-কিংবদন্তিতুল্য গথিক রাজ্য বিদ্যমান ছিল। পরবর্তীকালে হুন জাতি তাদের পরাজিত করে। তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীতে বসপরান রাজ্য গ্রিক উপনিবেশগুলো দখল করে[৮] এবং ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো যুদ্ধরত যাযাবরদের আক্রমণের ফলে বিপর্যস্ত হয়।[৯]
প্রারম্ভিক পূর্ব স্লাভ
সম্পাদনাআধুনিক রুশদের কিছু পূর্বপুরুষেরা ছিলেন স্লাভ উপজাতির। অনেক পণ্ডিতবৃন্দ তাদের মূল আবাসভূমি প্রিপেত মার্সেসের বনাঞ্চল বলে ধারণা করেন।[১০] প্রারম্ভিক পূর্ব স্লাভরা ধীরে ধীরে পূর্ব রাশিয়ায় বসতি স্থাপন করতে শুরু করে, মূলত দুটি প্রবাহের মধ্য দিয়ে: প্রথমটি কিয়েভ থেকে বর্তমান সময়ের সুজদাল ও মুরমের দিকে এবং অপরটি পোলতস্ক থেকে নভগরদ ও রুস্তভের দিকে যেতে শুরু করে।[১১]
আন্তঃযুদ্ধ রাশিয়া (১৯১৭-১৯২২)
সম্পাদনা১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জারতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে রাজধানী পেত্রোগ্রাদে (বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গ) একটি ফ্যাক্টরিতে ধর্মঘট ডাকা হয়। ১৯১৭ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি হাজার হাজার নারী পোশাক-শিল্প কর্মী খাদ্যাভাবের জন্য তাদের ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে আসেন এবং অন্যদেরও তাদের সাথে যোগ দিতে বলেন। কয়েকদিনের মধ্যে শহরের প্রায় সকল শ্রমিকেরা কর্মহীন হয়ে পড়ে এবং রাস্তার তাদের মধ্যে মারাপিঠ শুরু হয়ে যায়। জার ধর্মঘট পালনকারীদের কাজে ফিরে যেতে নির্দেশ দেয় এবং সৈন্যদের নির্দেশ দেয় যেন তারা রাস্তায় আন্দোলনকারীদের গুলি করে। তার আদেশ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়, বিশেষ করে যখন সৈন্যরা প্রকাশ্যে ধর্মঘট পালনকারীদের পক্ষ নেয়। জার দ্বিতীয় নিকোলাসের পদচ্যুত করার মধ্য দিয়ে ২রা মার্চ জার ও অভিজাততন্ত্রের পতন হয়।[১২][১৩]
সোভিয়েত ইউনিয়ন (১৯২২-১৯৯১)
সম্পাদনা১৯২২ থেকে ১৯৯১ সালের রাশিয়ার ইতিহাস হল সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ইউনিয়ন বা সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস। ১৯২২ সালের ডিসেম্বর মাসে রুশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা এই মতাদর্শ ভিত্তিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে।[১৪] সেই সময়ে নতুন দেশটিতে চারটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র যুক্ত হয়, সেগুলো হল রুশ সোভিয়েত ফেডারেটিভ সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক, ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক, বেলারুশীয় সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক এবং ট্রান্সককেশীয় সোভিয়েত ফেডারেটিভ সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক।[১৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "HISTORY OF RUSSIA"। হিস্টরি ওয়ার্ল্ড। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ "Finno-Ugric People"। এলুপু। ৮ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ চেপালিয়াগা, এ. এল.; আমিরখানভ, কে. এ.; ত্রুভিকিন, ভি. এম.; সাদভিকভা, টি. এ.; পিরোগভ, এ. এন.; তাইমাজভ, এ. আই.। "Geoarchaeology of the earliest paleolithic sites (Oldowan) in the North Caucasus and the East Europe"। paleogeo.org (রুশ ভাষায়)। ২০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ হার্শট, কে. ক্রিস। "Kostenki Russia Holds Key Evidence for the Human Colonization of Europe"। থটকো। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ অভচিন্নিকভ, ইগর ভি.; গোটারস্ট্রম, আন্ডার্স; রোমানভা, গালিনা পি.; খারিতনভ, ভিতালি এম.; লিডেন, কার্স্টিন; গুডউইন, উইলিয়াম (মার্চ ২০০০)। "Molecular analysis of Neanderthal DNA from the northern Caucasus"। নেচার (ইংরেজি ভাষায়)। ৪০৪: ৪৯০–৪৯৩। আইএসএসএন 0028-0836। ডিওআই:10.1038/35006625। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ মিচেল, অ্যালানা (৩০ জানুয়ারি ২০১২)। "Gains in DNA Are Speeding Research Into Human Origins"। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ জ্যাকবসন, এস্থার (১৯৯৫)। "The Art of the Scythians: The Interpenetration of Cultures at the Edge of the Hellenic World। ব্রিল। পৃ. ৩৮। ISBN 90-04-09856-9।
- ↑ সেতসখলাদজে, গোচা আর. (সম্পাদনা), "The Greek Colonisation of the Black Sea Area: Historical Interpretation of Archaeology।" এফ. স্টেইনার, ১৯৯৮, পৃ. ৪৮। ISBN 3-515-07302-7।
- ↑ তুর্চিন, পিটার (২০০৩)। "Historical Dynamics: Why States Rise and Fall।" প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃ. ১৮৫–১৮৬। ISBN 0-691-11669-5।
- ↑ বারফোর্ড, পল এম. (২০০১)। "The Early Slavs"। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃ. ১৫-১৬। ISBN 0-8014-3977-9।
- ↑ ক্রিস্টিয়ান, পৃ. ৬-৭।
- ↑ ওয়েড, রেক্স এ. (২০০৫)। The Russian Revolution, 1917 (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 9780521841559। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ রিয়াসানভ্স্কি (১৯৮৪)। A History of Russia (৪র্থ সংস্করণ)। পৃষ্ঠা ৪৫৫–৫৬।
- ↑ "Tsar Killed, USSR Formed"। থিংক কোয়েস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ "The Soviet Union: Facts, Descriptions, Statistics — Ch 1"। মার্ক্সিস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। সোভিয়েত ইউনিয়ন ইনফরমেশন ব্যুরো। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১৮।