রালফ অ্যাশার আলফার
রালফ অ্যাশার আলফার (৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ – ১২ আগস্ট ২০০৭)[১][২] একজন আমেরিকান ভৌত বিশ্বতাত্ত্বিক ছিলেন। মহাবিস্ফোরণের উপর রালফ ১৯৫০ এর দশকে বেশ কিছু তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে মহাবিস্ফোরণের নিউক্লিওসংশ্লেষণ ও মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ।
জীবনী
সম্পাদনাআলফার বেলারুশীয় ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা স্যামুয়েল আলফার (পূর্বে তাঁর পারিবারিক উপাধি ছিল ইলফিরোভিচ) বেলারুশের ভিতেবস্ক শহরের বাসিন্দা ছিলেন। রালফের মা রোজ ম্যালসন ১৯৩৮ সালে পাকস্থলির ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। রোজের মৃত্যুর পর স্যামুয়েল পুনর্বিবাহ করেন।
১৫ বছর বয়সে আলফার ওয়াশিংটন ডিসির থিওডোর রুজভেল্ট উচ্চবিদ্যালয় হতে স্নাতক হন। তিনি বিদ্যালয়ের ক্যাডেট দলের মেজর ও কমান্ডার পদ অধিষ্ঠান করেন। বিদ্যালয়ের রঙ্গমঞ্চে তিনি দুই বছর মঞ্চ ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। মহামন্দার সময়ে রালফের আয়ের উপর তার পরিবার অনেকাংশে নির্ভরশীল ছিল। তিনি গ্রেগ শর্টহ্যান্ড শিখেন ও ১৯৩৭ সালে আমেরিকান ভূপ্রকৃতিবিদ্যা সমিতির জন্য স্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কার্নেগি ফাউন্ডেশনের "ভূখণ্ডের চুম্বকত্ব দপ্তর" তাকে ১৯৪০ সালে নিয়োগ দেয়। সেখানে ড.স্কট ফোরবুশের অধীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর নির্দেশনায় তিনি জাহাজের চুম্বকত্ব হ্রাসের কৌশল আবিষ্কার করেন। মার্ক ৩২ ও মার্ক ৪৫ ডিটোনেটর তৈরি, টর্পেডো তৈরি, নৌবাহিনীর অস্ত্র ব্যবহার সুচারুভাবে নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশল, সাবমেরিনসমূহের চৌম্বকীয় শনাক্তকরণ ও ম্যানহাটন প্রকল্প সহ অনেক ক্ষেত্রে রালফ অ্যাশার আলফারের বিশেষ অবদান রয়েছে। ১৯৪৫ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি নৌ সমরাস্ত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৪৬ সালে তিনি পুনরায় এ পুরস্কারে ভূষিত হন। নিরাপত্তাজনিত কারণে রালফের অনেক কাজই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছোয়নি। ১৯৪৪ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত রালফ জনা হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানাগারে কাজ করেন। সেখানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সুপারসনিক(শব্দের গতির চেয়ে দ্রুততর) অস্ত্র নির্মাণকৌশল আবিষ্কারের জন্য রালফ বিস্তারিত গবেষণা করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। নিউক্লিওসংশ্লেষণ তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল। ১৯৪৮ সাল থেকেই ড.রবার্ট সি হারম্যানের সঙ্গে তিনি মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ বিকিরণ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন নিয়ে রালফের মনে মিশ্র অনুভূতি ছিল, কেননা এটি অর্জন করতে গিয়ে তার জীবনের অনেক মূল্যবান সময় সমরাস্ত্রের পিছনে ব্যয় করতে হয়েছিল।
যখন তার বয়স ১৬, তখনই ম্যাসাচুসেটস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট তাকে পূর্ণবৃত্তি দানের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আলফার এ নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে এমআইটির একজন শিক্ষার্থীর সাথে দেখা করতে চাইলে প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে,আলফার জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে রুশীয়-ইউক্রেনীয় পদার্থবিদ জর্জ গ্যামোর সাক্ষাৎ হয়। তবে আলফারের প্রথম শিক্ষক ছিলেন এডওয়ার্ড টেলার। গ্যামোর তাত্ত্বিক মতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য একজন যোগ্য গণিতবিশারদের অভাব অনুভূত হয়। আলফার সেই অভাব পূরণ করেন। গ্যামো বিশ্বজুড়ে "পদার্থের উৎপত্তি" নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ালেও এ মতবাদ আলফারের মস্তিষ্কপ্রসূত। আলফার নিউক্লিওসংশ্লেষণের উপর যে কাজ করে যান, সেটার জন্য আজও গ্যামোকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। আলফারই প্রথম গবেষণা অভিসন্দর্ভে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের কথা উল্লেখ করেন। বেল ল্যাবরেটরির গবেষক আরনো অ্যালান পেনজিস ও রবার্ট উইলসন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি সুনিশ্চিত করেন।
১৯৪৪ সালে আলফারের সাথে লুইস অ্যালেন সিমন্সের দেখা হয়। সিমন্স দিনে স্বরাষ্ট্র দপ্তরে ব্যক্তিগত সহকারী ও রাতে মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নৌবাহিনীতে যোগ দিতে চাইলেও তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। তিনি জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যাবর্তন করেন ও চুম্বক-প্রভাবিত টর্পেডো তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৩ সালে মার্ক-১৪ টর্পেডোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় এটি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে আলফারের গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Wilford, John Noble (১৮ আগস্ট ২০০৭)। "Ralph Alpher, 86, Expert in Work on the Big Bang, Dies"। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০ – NYTimes.com-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Ralph Alpher - Obituary"। www.legacy.com। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০।