রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি

পিরোজপুর সদর উপজেলার ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।

রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর উপজেলার রায়েরকাঠি গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি[]

রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি
বিকল্প নামরায়েরকাঠি রাজভবন
সাধারণ তথ্য
ধরনবাসস্থান
অবস্থানপিরোজপুর সদর উপজেলা
ঠিকানারায়েরকাঠি গ্রাম
শহরপিরোজপুর সদর উপজেলা, পিরোজপুর জেলা
দেশবাংলাদেশ
খোলা হয়েছে১৬৫০
স্বত্বাধিকারীরাজা রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী
কারিগরী বিবরণ
উপাদানইট, সুরকি ও রড

ইতিহাস

সম্পাদনা

ভারতবর্ষে মোগল সম্রাট শাহজাহান শাসনামলে পিরোজপুরের রায়েরকাঠি নামক জায়গা এই জমিদার বাড়িটির গোড়াপত্তন হয়। মূলত এখানে বন-জঙ্গল ছিল। এগুলো পরিষ্কার করেই এখানে এই বাড়িটি তৈরি করা হয়। যার ফলে এখানের নামকরণ করা হয় রায়েরকাঠি। মোগল সম্রাটের শাসনামলে যুবরাজ সেলিম অর্থাৎ সম্রাট জাহাঙ্গীর বিদ্রোহ করে বর্তমান পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বাগেরহাট জেলার কিছু অংশ নিয়ে "সেলিমাবাদ" নামে একটি পরগণা সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে তিনি উক্ত এলাকার রাজস্ব আদায়ের জন্য মোদন পালকে দায়িত্ব দেন। মোদন পাল আবার তার ছেলে শ্রীনাথকে উক্ত রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেন। রাজস্ব আদায়ের জন্য শ্রীনাথ বর্তমান ঝালকাঠির লুৎফুবাদ নামক গ্রামে একটি কাছারিঘর স্থাপন করেন এবং সেখান থেকে অতি সু-দক্ষতার সাথে রাজস্ব আদায়ের কাজ পরিচালনা করতে থাকেন। যার ফলস্বরূপ তিনি মোগল সম্রাটের কাছ থেকে "রাজা" উপাধি লাভ করেন। এরপর রাজা শ্রীনাথের ছেলে রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বর্তমান পিরোজপুরের রায়েরকাঠি এলাকায় বিশাল বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জমিদার বাড়ি তৈরির সময় কালী মন্দিরও তৈরি করছিলেন। এই কালী মন্দির তৈরি করতে গিয়ে তিনি তখনকার সময়ের নিম্নবর্ণের হিন্দু পাঁচজনের মুণ্ডু কেটে তার উপর মূর্তি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তার এই নিষ্ঠুর কার্যক্রমের কথাটি ঢাকার প্রাদেশিক সুবেদার শাহবাজ খানের কানে যায়। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে বিচার করে রুদ্র নারায়ণকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। যা হাজার হাজার মানুষের সামনে বাঘের খাঁচায় তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি খাঁচার মধ্যে বাঘের সাথে লড়াই করে বাঘকে মেরে ফেলেন। এ খবর সুবেদারের কাছে গেলে তিনি রুদ্র নারায়ণের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে দেন। এতে রুদ্র নারায়ণ তার এই নিষ্ঠুর কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে জমিদার বাড়িতে না ফিরে ছেলে নরোত্তম নারায়ণ রায়কে জমিদারীত্ব দিয়ে কাশি চলে যান। সেখানে তিনি আমৃত্যু সন্ন্যাস জীবন পালন করেন।’

অবকাঠামো

সম্পাদনা

এখানে তৈরি করা হয়েছিল বাড়ির প্রবেশদ্বার, রাজভবন, নহবৎখানা, অতিথিশালা, নাট্যশালা, অন্ধকূপ এবং অসংখ্য মন্দির। ছোট বড় প্রায় দু’শ অট্টালিকা ছিলো। এছাড়াও রয়েছে মন্দিরের নকশায় নির্মিত কয়েকটি মঠ। তন্মধ্যে ৪০ বা ৫০টি গগণচুম্বী অট্টালিকা রাজবাড়ির শোভাবর্ধন করতো। বর্তমানে ভাল এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত মিলিয়ে মোট ৭টির মত ভবন এখনো মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জমিদার বাড়ির কালী মন্দিরে ২৫ মন ওজনের শিব লিঙ্গ।

বর্তমান অবস্থা

সম্পাদনা

অযত্ন ও অবহেলার কারণে এখন আর তেমন কিছু আর অবশিষ্ট নেই এখানে। বাসভবন, জলসাঘর, বিচারালয়, সুড়ঙ্গপথ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন কয়কটি মঠ ও মন্দির ছাড়া আর তেমন কিছু নেই। আর যেগুলো রয়েছে, সেগুলোও প্রায় ধ্বংসের মুখে। দেয়ালে লতাপাতা, গাছগাছালি ও শ্যাওলায় জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা