রামকমল ভট্টাচার্য

রামকমল ভট্টাচার্য (৩১ মার্চ ১৮৬৪ - ১১ জুন ১৮৬০) ছিলেন একজন সংস্কৃত পণ্ডিত ও গ্রন্থকার। ঊনবিংশ শতকের এক চিন্তাশীল লেখক হিসাবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছিলেন। [১]

রামকমল ভট্টাচার্য
জন্ম(১৮৩৪-০৩-৩১)৩১ মার্চ ১৮৩৪
মৃত্যু১১ জুন ১৮৬০(1860-06-11) (বয়স ২৬)
পেশাশিক্ষকতা ও লেখক
কর্মজীবন১৮৫৭ - ১৮৬০
সন্তান২ কন্যা
পিতা-মাতারামজয় তর্কালঙ্কার (পিতা)

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

রামকমল ভট্টাচার্যের জন্ম ১২৪০ বঙ্গাব্দের ১৬ই চৈত্র ( ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ) ব্রিটিশ ভারতের উত্তর কলকাতার শিমুলিয়া পল্লীর মালিরবাগান নামক স্থানে বারেন্দ্র শ্রেণীর ব্রাহ্মণ পরিবারে। পিতা রামজয় তর্কালঙ্কার। তাদের আদি নিবাস ছিল গৌড়বঙ্গের রাজধানী মালদহে। প্রখ্যাত পণ্ডিত ও শিক্ষাব্রতী কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য ছিলেন তার অনুজ। তাদের এক জ্যেষ্ঠ ভগিনীও ছিল। মেধাবী রামকমল পিতার কাছেই ব্যাকরণ সমগ্র, অমরকোষ অভিধান, ভট্টিকাব্য, শ্রীমদভাগবত পুরাণের কিছু অংশের পাঠ সম্পন্ন করেন। বারো বৎসর বয়সে তার পিতংবিয়োগ ঘটে। কিন্তু তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে সাহিত্য শ্রেণীতে ভর্তি হন। মেধার গুণে অতি অল্প সময়ে সাহিত্য, অলঙ্কার, দর্শন ও গণিতে শিক্ষালাভ করেন। [২] ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সংস্কৃত কলেজের ছাত্রদের মধ্যে তিনি প্রথম হন এবং মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। বিদ্যাবত্তার জন্য তৎকালীন সমস্ত খ্যাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হন। [৩] গণিতশাস্ত্রে রামকমলের রীতিমত অধিকার ছিল। তিনি সেসময়ে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ঘনিষ্ঠ ও বাল্যবন্ধু প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারীকে পাটিগণিত রচনায় যথেষ্ট সাহায্য করেন। সংস্কৃত শাস্ত্রে প্রাজ্ঞতা লাভের পর ইংরাজী চর্চায় মনোনিবেশ করেন। অল্পদিনে ভূয়সী উন্নতি করেন। তবে চক্ষুরোগের কারণে ইংরাজী সাহিত্য চর্চায় বাধার সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বায়ু পরিবর্তনে যান। কিন্তু কোন উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি।[২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

শেষে সংসার নির্বাহের কারণে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার নর্মাল স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন। চক্ষুরোগের কারণে পড়াশোনা অসম্ভব হলেও, তিনি তার যা কিছু রচনা করেছেন তা ওই সময়ে করেন। ইউক্লিডের পদ্ধতি প্রাচীন এবং বোঝার পক্ষে কালজয়ী মনে হওয়ায় তিনি জ্যামিতি বিষয়ক নতুন গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেন। নর্মাল স্কুলের ছাত্রদের জন্য ইংরেজ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকনের কয়েকটি বাছাইয়ের সন্দর্ভ রচনা ছিল তার দ্বিতীয় প্রয়াস।[৩] তিনি বেকনের সন্দর্ভ নামে কিছু প্রবন্ধের বঙ্গানুবাদ করেন। নানা কারণে রামকমল ভট্টাচার্য আত্মহত্যা করেন ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুন। সেকারণে তার রচিত গ্রন্থের কয়েকটি অপ্রকাশিত থেকে গেছে। রামকমলের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় -

  • এলিমেন্টস্ অফ জিওমেট্রি - জ্যামিতি (১৮৬২) প্রেসিডেন্সি প্রেস ,কলকাতা
  • বেকন অর্থাৎ তদীয় কতিপয় সন্দর্ভ (১৮৬১)
  • আন্বীক্ষিকী ইংরেজ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিলের দর্শন গ্রন্থের দৃষ্টে বাংলায় রচিত ন্যায়শাস্ত্র (অপ্রকাশিত)[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১৯২। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  2. ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। কমলকৃষ্ণ ভট্টাচার্য রামকমল ভট্টাচার্য। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৩৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১১ 
  3. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৬৫৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬