রাধারমণ মিত্র

ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও লেখক

রাধারমণ মিত্র( ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৭ — ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২) একজন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বিপ্লবী ও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক। তিনি ১৯২৯ সালের মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হন। শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে অন্যতম পুরোধা, দেশের মানুষের মধ্যে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ প্রচারে একনিষ্ঠ কর্মী। তিনি একসময় মহাত্মা গান্ধীর 'ডানহাত'-স্বরূপ ছিলেন। []

রাধারমণ মিত্র

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

রাধারমণ মিত্র কলকাতার শ্যামবাজারে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ছিল বর্ধমান। ১৯১৩ সালে হিন্দু স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯১৫ সালে স্বর্ণপদক সহ আই.এ পাশ করেন। সেন্ট পলস কলেজ থেকে বি এ পাশ করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।

বিপ্লবী রাজনীতি

সম্পাদনা

এম.এ পড়াকালীন অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে উত্তরপ্রদেশ চলে যান সহযোগী বিপ্লবী বঙ্কিম মুখার্জীর সাথে। গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উত্তর প্রদেশের এটাওয়া তে সংগঠকের কাজ করেন। এই সময় গ্রেপ্তার হয়ে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের নৈনি জেলে বন্দী হন। এক বছর কারাবাস করার পর তিনি সবরমতী আশ্রমে যান ও মহাত্মা গাঁধীর সাথে টানা তিন বছর কাজ করেন। গান্ধীবাদী আদর্শের অনুগামী হলেও তার সাথে মতপার্থক্যের কারণে তিনি ফিরে আসেন কলকাতায় ও কর্পোরেশন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ নেন। শিক্ষকতা ছাড়াও শ্রমিক আন্দোলন, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে বহুবার নেতার ভূমিকায় ছিলেন রাধারমণ মিত্র। মার্কসবাদী দর্শনে আকৃষ্ট হলেও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেননা। ১৯২৯ সালে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ব্রিটিশ সরকার আবার তাকে গ্রেপ্তার করে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান। ১৯৪৩-৪৪ সাল নাগাদ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। পরে মতপার্থক্যের কারণে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে গেলেও তার পাণ্ডিত্য, প্রজ্ঞা এবং বামপন্থী রাজনীতি ও মতাদর্শের প্রতি জ্ঞান তাকে সর্বজনশ্রদ্ধেয় করে তুলেছিল। তিনি ভারত সোভিয়েত সুহৃদ সমিতিরও সদস্য ছিলেন।[]

 
জেলের বাইরে তোলা মীরাটের ২৫ জন বন্দীর ছবি। পিছনের সারি (বাঁ থেকে ডানে): কে.এন. সেহগাল, এস.এস. জোশ, এইচ.এল. হাচিনসন, শওকত উসমানি, বি.এফ. ব্র্যাডলি, এ. প্রসাদ, পি. স্প্র্যাট, জি. অধিকারী। মধ্যম সারি: রাধারমণ মিত্র, গোপেন চক্রবর্তী, কিশোরী লাল ঘোষ, এল.আর. কদম, ডি.আর. থেংদি, গৌরা শঙ্কর, এস. ব্যানার্জি, কে.এন. জোগলেকার, পি.সি. জোশী, মুজফ্‌ফর আহ্‌মেদ। সামনের সারি: এম.জি. দেশাই, ডি. গোস্বামী, আর.এস. নিম্বকর, এস এস মিরাজকর, এস এ ডাঙ্গে, এস ভি ঘাটে, গোপাল বসাক।

সাহিত্য

সম্পাদনা

কলকাতার ইতিহাস নিয়ে তার প্রবল আগ্রহ ছিল। একসময় সে কারণে কলকাতা শহরের পথে পথে একা ঘুরে বেড়িয়ে তথ্য সংগ্রহ ও লেখালিখির কাজ করেছেন রাধারমণ।[][] তার কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় তন্মধ্যে কলিকাতা দর্পণ ১৯৮১ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছিল।[] তার অন্যান্য বইগুলি হল:

  • বাংলার তিন মনীষী
  • কলিকাতায় বিদ্যাসাগর
  • ডেভিড হেয়ার: হিজ লাইফ এন্ড ওয়ার্কস
  • রাধারমণ মিত্রের প্রবন্ধ

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৪৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, দ্বিতীয় খন্ড (২০০৪)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩০১। আইএসবিএন 81-86806-99-7 
  3. "রাধারমণের পথ ধরে চিনে নেওয়া পুরনো কলকাতা"। ১ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারী ২০১৮ 
  4. "Radharaman Mitra: শহর কলকাতার বিচিত্র পথের পরিব্রাজক"। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৪