রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

বিশিষ্ট বাঙ্গালী ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (এপ্রিল ১২, ১৮৮৫ – মে ২৩, ১৯৩০) ভারতের বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ। তিনি আর. ডি. ব্যানার্জি নামে অধিক[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] পরিচিত। ১৯১১ সালে তিনি ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণে যোগ দেন। ১৯২২ সালে তিনি হরপ্পা সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র মহেঞ্জোদাড়ো পুনরাবিষ্কার করেন। ১৯২৬ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন।[২]

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম(১৮৮৫-০৪-১২)১২ এপ্রিল ১৮৮৫
মৃত্যু২৩ মে ১৯৩০(1930-05-23) (বয়স ৪৫)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাঐতিহাসিক
দাম্পত্য সঙ্গীকাঞ্চনমালা দেবী

প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৮৫ সালে ১২ এপ্রিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্ম গ্রহণ করেন৷[১] তাঁর পিতার নাম মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর মাতা কালীমতি দেবী৷ বনগাঁর ছয়ঘরিয়া গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে তাঁর জন্ম হলেও বনগাঁর সঙ্গে কীভাবে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হল তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট মতভেদ। রাখালবাবুর বাবা মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রথিতযশা আইনজীবী। তাঁর মা কালীমতিদেবী ছিলেন কোচবিহার রাজার দেওয়ানের মেয়ে। অনেকের মতে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও মীর জাফরের সৈন্যদল বহরমপুর জুড়ে লুটতরাজ শুরু করায় বাধ্য হয়ে কালীমতিদেবীকে নিয়ে পারিবারিক ভৃত্য ছয়ঘরিয়া এলাকার আত্মীয় বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে নতুন করে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বাড়ি তৈরি হয়। আবার আর একদল বলেন, আগের যুগের নিয়ম অনুযায়ী কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার পর তাঁকে বাপের বাড়িতে আনা যেত না। ছয়ঘরিয়া গ্রামে কালীমতিদেবীর বাপের বাড়ি স্থানান্তর হয়ে এসেছিল। মেয়েকে বাড়িতে আনার জন্য নিজের বাড়ি ও জমির একাংশ মতিলালবাবুকে লিখে দিয়েছিলেন কালীমতিদেবীর বাবা। এই দুই তত্ত্বই মানতে নারাজ বনগাঁর অনেক মানুষই। তাঁদের দাবি মতিলালবাবুরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে এই এলাকার জমিদারি নিয়েছিলেন। তাঁরা তিন ভাই পৃথক ঘর তৈরি করিয়েছিলেন ছয়ঘরিয়া এলাকায়।[৩] রাখালদাস বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ ও স্কুল থেকে ১৯০০ সালে এনট্রান্স পাস করেন। একই বছর তিনি নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে কাঞ্চনমালা দেবীকে বিয়ে করেন। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৩ সালে এফ.এ পাস করেন। এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ ভর্তি হন। ১৯০৭ সালে ইতিহাসে অর্নাস ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯১১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এম.এ পাস করেন।[৪]

মূখ্য কীর্তিসমূহ সম্পাদনা

মহেঞ্জোদারো সভ্যতার সুপ্রাচীন ধংসাবশেষ আবিষ্কার তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি। কুষান সম্রাট কণিষ্ক সম্পর্কে তিনি যে সব তথ্য আবিষ্কার করেন তা প্রামান্য বলে বিবেচিত হয়েছে। বাংলায় পাল রাজবংশ সম্পর্কিত বহু তথ্য তিনি আবিষ্কার করেন। পাহাড়পুরে খননকার্যের পরিচালক ছিলেন তিনি। মুদ্রাসম্বন্ধীয় বিষয়ে বাংলাতে প্রথম গ্রন্থ রচনা তার অন্যতম কৃতিত্ব।

তার উল্লেখনীয় কৃতিসমূহঃ ২ খণ্ডে বাঙ্গালার ইতিহাস, পাষাণের কথা, শশাঙ্কধর্মপাল[৫] তিনি লেখমালানুক্রমণী নামে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাপ্ত প্রস্তরখোদিত লিপির বর্ণনামূলক সংকলন গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। এছাড়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার বাংলা ও ইংরেজি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

রচিতগ্রন্থ সম্পাদনা

  • The origin of the Bengali Script
  • ২ খণ্ডে বাঙ্গালার ইতিহাস
  • পাষাণের কথা
  • ত্রিপুরী হহৈয় জাতীর ইতিহাস
  • করুনা
  • ব্যতিক্রম
  • অসীম
  • পক্ষান্তর
  • ভূমারার শৈবমন্দির
  • শশাঙ্ক
  • ধর্মপাল
  • প্রাচীন মুদ্রা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "রাখালদাস নিজেই গড়ে ফেললেন ইতিহাস"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ৭ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০২০ 
  2. "জন্মভূমিতেই ব্রাত্য মহেঞ্জোদাড়োর বাঙালি আবিষ্কারক"Eisamay Blog। ২০১৭-১১-৩০। ২০২১-০৪-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১২ 
  3. রাস্তায় পাতা রয়েছে রাখালদাসের ভাঙা বাড়ির ইট, বিশ্বজিৎ মাইতি, রবিবার, বর্তমান (৭ মার্চ ২০২১)
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০১৬ 
  5. সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র (সম্পা.) (১৯৮৮) সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান, কলিকাতা, পৃ.৪৬৫