রাকেশ শর্মা
রাকেশ শর্মা (জন্ম ১৩ জানুয়ারি ১৯৪৯), একজন ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের পাইলট যিনি মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন। ইন্টারকসমস কার্যক্রমের অঙ্গ হিসেবে সোয়ুজ টি-১১ উৎক্ষেপণ করা হয় ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩ এপ্রিল। রাকেশ শর্মা হলেন একমাত্র ভারতীয় নাগরিক যিনি মহাকাশে ভ্রমণ করেছেন।
রাকেশ শর্মা | |
---|---|
![]() রাকেশ শর্মা | |
জন্ম | ১৩ জানুয়ারি ১৯৪৯ (বয়স ৬৯) পাতিয়ালা, পাঞ্জাব, ভারত |
অবস্থা | অবসরপ্রাপ্ত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সে টেস্ট পাইলট |
পুরস্কার | ![]() হিরো অফ দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন |
মহাকাশযাত্রা | |
ক্রম | ![]() |
মহাকাশে অবস্থানকাল | ৭ দিন ২১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট |
মনোনয়ক | ১৯৮২ |
অভিযান | সোয়ুজ টি-১১/সোয়ুজ টি-১০ |
অভিযানের প্রতীক | ![]() |
শৈশবসম্পাদনা
রাকেশ শর্মা ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি ভারতের অঙ্গরাজ্য পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হায়দরাবাদের সেন্ট জর্জেস গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেন। নিজাম কলেজ থেকে তিনি স্নাতক হন। মাত্র ১৮ বছর বছরে তিনি এয়ার ফোর্সের একজন ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে, তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইতে ভর্তি হন একজন এয়ার ফোর্সের কর্মী হিসেবে। রাকেশ নিজেকে জাহির এবং একজন উৎসর্গিত ছাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের পাইলট নিযুক্ত হন।
জীবনধারাসম্পাদনা
৩৫তম ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি-র প্রাক্তন ছাত্র রাকেশ শর্মা একজন টেস্ট পাইলট হিসেবে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সে যোগদান করেন ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৭১ থেকে আরম্ভ করে তিনি মিকোয়ান গুরেভিচ (মিগ)-এর মতো নানা ধরনের এয়ারক্র্যাফটে আকাশ ভ্রমণ করেন। রাকেশ শর্মা অনেক স্তরের মধ্যে দিয়ে দ্রুত উন্নতি করেন এবং ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের স্কোয়াড্রন লিডার এবং পাইলট নিযুক্ত হন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর তিনি একজন মহাকাশচারী হওয়ার জন্যে মনোনীত হন এবং ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) ও সোভিয়েত ইন্টারকসমস মহাকাশ কর্মসূচির মধ্যে যৌথ প্রকল্পের অংশ হিসেবে মহাকাশ যাত্রা করেন।
রাকেশ শর্মা হলেন ভারতের প্রথম নাগরিক যিনি মহাকাশে যাত্রা করেন। তিনি ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩ এপ্রিল কাজাখ সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকের বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে উৎক্ষিপ্ত সোভিয়েত সোয়ুজ টি-১১ মহাকশযানে উড্ডয়ন করেন। তিনজন সোভিয়েত-ভারভীয় আন্তর্জাতিক ক্রুয়ের মধ্যে যুক্ত ছিলেন কম্যান্ডার ইউরি মালিশেভ এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার গেন্নাদি স্ত্রেকালোভ (ইউএসএসআর) যাঁরা সোয়ুজ টি-১১ মহাকাশযানে করে সলিউত ৭ মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছান। রাকেশ শর্মা সলিউত ৭ মহাকাশ স্টেশনে আরূঢ়াবস্থায় ৭ দিন ২১ ঘণ্টা এবং ৪০ মিনিট কাটান, যে সময়ে তার টিম ৪৩টি বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। তার কাজ ছিল প্রধানত বায়ো-মেডিসিন এবং রিমোট সেন্সিং বিষয়ে। মহাকাশচারীগণ একটি যৌথ দূরদর্শন সংবাদ সম্মেলন করেন মস্কো কার্যনির্বাহী ও পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে। যখন ইন্দিরা গান্ধি রাকেশ শর্মাকে জিজ্ঞাসা করেন, 'বহির্মহাকাশ থেকে ভারতকে কেমন দেখায়?' তিনি জবাব দেন, সারে যাঁহাসে আচ্ছা (পৃথিবীর মধ্যে সেরা)। এটা হল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে লেখা ইকবাল রচিত একটি দেশাত্মবোধক কবিতার শিরোনাম, যেটা ধারাবাহিকভাবে আজো জনপ্রিয়। ভারত বহির্মহাকাশে একজন মানুষকে পাঠানো বিশ্বের চতুর্দশ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
রাকেশ শর্মা অবসর নেওয়ার সময় উইং কম্যান্ডার পদে ছিলেন। তিনি ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডে যোগ দেন এবং ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি হ্যালের নাসিক ডিভিশনে চিফ টেস্ট পাইলট হিসেবে কর্মরত ছিলেন; বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি হ্যালের চিফ টেস্ট পাইলটের কাজ করেছেন। তিনি লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট 'তেজাস'-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
পুরস্কারসম্পাদনা
মহাকাশযাত্রার পর ফিরে এসে তিনি 'হিরো অফ দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন' সম্মানে ভূষিত হন। ভারত প্রজাতন্ত্র তাকে এবং তার দুজন সঙ্গী মহাকাশযাত্রী ইউরি মালিশেভ ও গেন্নাদি স্ত্রেকালোভকে শান্তিসময়ের অসমসাহসী সর্বোচ্চ সম্মান অশোকচক্র প্রদান করে।
ব্যক্তিগত জীবনসম্পাদনা
রাকেশ শর্মা এবং তার স্ত্রী মধু ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ায় থাকাকালীন সময়ে রাশিয়ান ভাষা শিখেছিলেন। তাদের সন্তান কপিল একজন চলচ্চিত্র নির্দেশক এবং সন্ততি কৃতিকা একজন মিডিয়া শিল্পী।