রাইজোরিমিডিয়েশন

রাইজোরিমিডিয়েশন(Rhizoremediation) হল রাইজোস্ফিয়ারে আসামাত্রই রাইজোবিয়াম প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়ামসমূহ উপস্থিতিতে ভারী ধাতু যাদের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বেশি, সবচেয়ে ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত দূষকগুলোর মধ্যে অন্যতম, প্রাকৃতিক কারণে এবং মানুষের কার্যকলাপের মাধ্যমে পরিবেশে প্রবেশ করে এবং তারপরে প্রাথমিকভাবে মাটি এবং জলাশয়ে জমা হয়। মাটি একটি সিঙ্ক বা ডোবা হিসেবে কাজ করে, যেখানে ভারী ধাতুগুলি বিভিন্ন ভগ্নাংশে পৃথক হয় এবং এই ভগ্নাংশগুলির মধ্যে কিছু মাটিতে স্থিতিশীল হয়, যা পরবর্তীতে মাটি থেকে অপসারণ করা কঠিন হয়। যাইহোক, কিছু রাসায়নিক ভগ্নাংশ লেবাইল বা ভঙ্গুর অবস্থায় উপস্থিত থাকে এবং বিভিন্ন শ্রেণীর উদ্ভিদ ব্যবহার করে সেগুলো সরানো যেতে পারে। বিষাক্ত ভারী ধাতু এবং মেটালয়েড আর্সেনিক গাছপালা, প্রাণী এবং মানুষের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।এ পদ্ধতি ডায়াজোট্রোফিক নডিউল অর্গানোজেনেসিস পদ্ধতি কো-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।

দূষণের প্রভাব কমানোর জন্য ও নিরাপদ ব্যবহারের জন্য মাটি ও জলাশয় ভারী ধাতু পরিশোধন অপরিহার্য। বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে মাটির পরিশোধন সম্ভব। বিশেষ ক্ষেত্রে দূষণ অনেক বেশি হলে, খননের মাধ্যমে দূষিত মাটি অপসারণ করা প্রয়োজন। রাসায়নিক এজেন্ট দিয়ে ওয়াশিং, লিচিং ও ফ্লাশিং কার্যকর হতে পারে এবং অপরিশোধিত মাটি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের মাটির সাথে মিশ্রিত করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য রাসায়নিক কৌশলও প্রয়োগ করা হয়। দূষিত পদার্থ অপসারণের জন্য উদ্ভিদের ব্যবহার একটি বহুল ব্যবহৃত কৌশল, যা ফাইটোরিমিডিয়েশন(Phytoremediation) নামে পরিচিত।

গাছপালা শিকড়ের মাধ্যমে কিছু বিষাক্ত ধাতু এবং রাসায়নিক পদার্থ শোষণ, সরানো বা জমা করার মাধ্যমে তাদের পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করে। রাইজোরিমিডিয়েশন প্রাকৃতিক পরিবেশগত পরিস্থিতি সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।

রাইজোরিমিডিয়েশন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা সম্পাদনা

রাইজোরিমিডিয়েশন কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, দূষিত মাটি এবং পানি থেকে দূষক অপসারণের জন্য বিশ্বব্যাপী রাইজোরিমিডিয়েশন কৌশল ব্যবহার করা হয়। বেশ কয়েকটি গবেষণা এবং পরীক্ষাগার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত প্রক্রিয়াগুলিকে সংক্ষেপে নিম্নরূপ শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে:

  • রাইজোডিপোজিশন(Rhizodeposition):-গাছের শিকড় থেকে জৈব পদার্থের নির্গমন যা মাটির মাইক্রোবায়োটা বৃদ্ধি এবং ক্রিয়াকলাপ উন্নত করে। এই পদার্থগুলো মাটির উর্বরতা বাড়ায়, মাটির গঠন উন্নত করে, এবং দূষণ হ্রাসে সাহায্য করে।
  • রাইজোডিগ্ৰেডেশন(Rhizodegredation):-গাছের শিকড়ের আশেপাশের মাইক্রোবায়োম দ্বারা দূষণযুক্ত জৈব পদার্থগুলোকে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় মাইক্রোবায়োম শিকড় থেকে নির্গত জৈব পদার্থ ব্যবহার করে দূষণকারী পদার্থগুলোকে ভেঙে ফেলে এবং অধিক নিরাপদ পদার্থে পরিণত করে।
  • রাইজোহাইড্রোলেশন(Rhizohydration):উচ্চ পরিমাণে জল শোষণের মাধ্যমে আশেপাশের অঞ্চলে দূষিত বর্জ্য জলের বিচ্ছুরণ বন্ধ করা।
  • রাইজোভোটালাইটেশন(Rhizovolatilization):-এই পদ্ধতিতে গাছের শিকড় মাটি থেকে দূষণযুক্ত পদার্থ শোষণ করে এবং তারপর তা পাতার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে উৎসর্জন করে। এটি বিশেষ করে জৈব দূষণযুক্ত পদার্থ যেমন সীসা বা মার্কারির জন্য প্রযোজ্য।
  • রাইজোট্রান্সফরমেশন(Rhizotransformation):-এই প্রক্রিয়ায় গাছের শিকড়ের আশেপাশের মাইক্রোবায়োম দ্বারা দূষণযুক্ত পদার্থগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয় বা পরিবর্তিত করা হয়। এটি মূলত জৈবিক দূষণগুলোকে সামলায়।
  • রাইজোপুট্রেকেশন(Rhizoputrefaction):-রাইজোপুট্রেকেশন (Rhizoputrefraction) একটি প্রাকৃতিক পরিবেশগত পরিশোধন প্রক্রিয়া যেখানে উদ্ভিদের মূল এবং মূলের আশপাশের মাইক্রোবায়োটা (ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস ইত্যাদি) মাটিতে থাকা জৈব দূষণকারী পদার্থগুলিকে ভেঙে ফেলার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়াটি মূলত উদ্ভিদ এবং মাইক্রোবিয়াল সম্প্রদায়ের মধ্যে সহজীবনের একটি উদাহরণ।রাইজোপুট্রেকেশনের মাধ্যমে, উদ্ভিদের মূল বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ নির্গমন করে যা মাটির মাইক্রোবগুলিকে উৎসাহিত করে এবং তাদের বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে তোলে। এই বৃদ্ধি পেয়েছে বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপের ফলে, জৈব দূষণকারীগুলি যেমন হাইড্রোকার্বন, পেস্টিসাইডস, সলভেন্টস ইত্যাদি ভাঙ্গন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরল এবং কম ক্ষতিকারক যৌগিকে পরিণত হয়।রাইজোপুট্রেকেশন ব্যবহার করে মাটির সংশোধন এবং দূষণ নির্মূলের প্রক্রিয়া টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব, কারণ এটি কোনো বাড়তি রাসায়নিক বা শারীরিক প্রক্রিয়া ছাড়াই দূষণ পরিষ্কার করে। এছাড়াও, এই প্রক্রিয়া জমির উর্বরতা বাড়াতে এবং ভবিষ্যতের কৃষি ব্যবহারের জন্য মাটির গুণগত মান উন্নত করতে সহায়ক।
  • রাইজোস্ট্যাবিলাইজেশন(Rhizostabilization):-এই পদ্ধতিতে গাছের শিকড় মাটির ভেতরের ভারী মেটাল বা অন্যান্য দূষণকারী পদার্থগুলোকে আটকে রাখে এবং তাদের গতিবিধি কমিয়ে দেয়। এর ফলে দূষণযুক্ত পদার্থগুলো আর পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে না।
  • রাইজোফিল্ট্রেশন(RhizoFiltresion):-রাইজোফিল্ট্রেশন হল জলজ বা আর্দ্র পরিবেশে বিদ্যমান দূষণকারী পদার্থকে উদ্ভিদের মূলের মাধ্যমে শোষণ ও বাঁধাই করার একটি প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিটি বিশেষ করে ভারী ধাতু শোষণে কার্যকর।
  • রাইজোঅ্যাক্সোট্র্যাকশন (Rhizoextraction):-এই পদ্ধতিতে গাছগুলি তাদের শিকড়ের মাধ্যমে মাটি থেকে ভারী মেটালসহ দূষণযুক্ত পদার্থ শোষণ করে এবং তার উপরের অংশে জমা করে। পরে এই গাছগুলিকে কেটে নিরাপদে নিষ্কাশন করা হয়।
  • রাইজোফ্রামেন্টেশন(RhizoFragmentation):-এটি একটি প্রক্রিয়া যেখানে উদ্ভিদের মূল মাটির দূষণকারী পদার্থকে ভাঙ্গতে সাহায্য করে, বিশেষ করে ভারী ধাতু ও অন্যান্য অজৈব দূষণকারীদের ক্ষেত্রে। এই প্রক্রিয়াটি মূলত মৃত্তিকা সংশোধনের একটি উপায় হিসেবে কাজ করে।
  • রাইজোস্টিমুলেশন(Rhizostimulation):-রাইজোস্টিমুলেশন হল মৃত্তিকার মাইক্রোবায়োটাকে উদ্ভিদের মূল দ্বারা উৎসাহিত করার প্রক্রিয়া, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য বাড়াতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াটি মৃত্তিকা এবং উদ্ভিদের মধ্যে সহজীবনকে উন্নত করে।
  • রাইজোঅগমেন্টেশন(RhizoAugmentation):-রাইজোঅগমেন্টেশন একটি কৃষি প্রযুক্তি যা মূলত উদ্ভিদের মূল বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য উন্নতি করার লক্ষ্যে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায়, মৃত্তিকার পুষ্টি, জৈব সার, এবং মাইক্রোবায়োটা (যেমন ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাস) উদ্ভিদের মূলের সাথে সম্পর্ক উন্নত করে এবং মূলের বৃদ্ধি এবং কার্যকারিতা বাড়ায়। এর ফলে উদ্ভিদের পানি ও পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা উন্নত হয়, যা শুষ্ক ও লবণাক্ত মাটি সহ বিভিন্ন পরিবেশে তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়ায়।

রাইজোঅগমেন্টেশনের মাধ্যমে, উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এটি কৃষি উৎপাদনে পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই সমাধান প্রদান করে। মাইকোরাইজা ফাংগাস এবং রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া এই প্রক্রিয়ায় প্রায়শই ব্যবহৃত হয়, যা উদ্ভিদের মূলের সাথে সহজীবন গড়ে তোলে এবং উদ্ভিদের নাইট্রোজেন শোষণ এবং ফসফেট উপলব্ধি উন্নত করে।

রাইজোরিমিডিয়েশন পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার চেষ্টা করছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

[১]