রমেশচন্দ্র দত্ত

বাঙালি ঔপন্যাসিক, ঐতিহাসিক,রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব

রমেশচন্দ্র দত্ত (১৩ আগস্ট ১৮৪৮ - ৩০ নভেম্বর ১৯০৯) (বাংলা উচ্চারণ: [রমেশচন্দ্র দত্ত] (এই শব্দ সম্পর্কেশুনুন)) একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক ছিলেন। তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের অনুরোধে বাংলা উপন্যাস রচনায় অগ্রসর হন এবং বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

রমেশচন্দ্র দত্ত
Romesh Chunder Dutt photo.jpg
জন্ম১৩ আগস্ট, ১৮৪৮
মৃত্যু৩০ নভেম্বর,১৯০৯
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাইতিহাসবিদ,ঔপন্যাসিক
পরিচিতির কারণবাঙালি ঔপন্যাসিক

প্রাথমিক জীবনসম্পাদনা

রমেশ চন্দ্র দত্ত একটি বিশিষ্ট বাঙালি কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পরিবারের প্রায় সবাই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত৷ তার বাবা ছিলেন ঈশানচন্দ্র দত্ত এবং মা ছিলেন ঠাকামাণী৷ তার বাবা ঈশানচন্দ্র তৎকালীন বাংলার ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন৷ অফিস চলাকালে রমেশ চন্দ্র দত্ত তার সঙ্গে থাকতেন৷ রমেশ চন্দ্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷ তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী মথুরানাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও পড়াশুনা করেছেন। এছাড়াও তিনি ডেভিড হেয়ার প্রতিষ্ঠিত হেয়ার স্কুলে পড়াশোনা করেন৷ নৌকা দূর্ঘটনায় তার বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর ১৮৬১ সালে তার কাকা শশী চন্দ্র দত্ত, যিনি একজন প্রখ্যাত লেখক ছিলেন, তার অভিভাবকত্ত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ রমেশ চন্দ্র তার কাকা সম্পর্কে লিখেছেন যে রাতের বেলা তিনি পরিবারের অন্যান্যদের সাথে বসতেন এবং তাদের প্রিয় বিষয় ছিল ইংরেজি কবিদের কবিতা চর্চা করা৷[১]

রমেশ চন্দ্র ১৮৬৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন৷ পরে ১৮৬৬ সালে তিনি মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনের মাধ্যমে এবং স্কলারশীপ অর্জনের মাধ্যমে আর্টস পরীক্ষায় পাস করেন৷ ১৮৬৮ সালে বিএ ক্লাসের ছাত্র থাকা অবস্থায় পরিবারের অনুমতি না নিয়ে তিনি এবং তার দুই বন্ধু বিহারী লাল গুপ্ত এবং সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান৷ রমেশ চন্দ্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্বকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ সে সময় দীর্ঘ সময় ধরে ১৮৫৩ সালের আগে ও পরে, যখন ইংল্যান্ডে আইসিএস পরীক্ষা চালু করা হয়, তার পূর্বে মূলত বিট্রিশ কর্মকর্তারাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন৷ ১৮৬০ সালের দিকে ভারতীয়রা, বিশেষ করে বাঙালি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের লোকজন হতে ভারতীয় উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে আসীন হতে শুরু করেন৷

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এ রমেশ ব্রিটিশ লেখকদের নিয়ে পড়াশোনা করেন৷ তিনি লন্ডনের মিডল ট্যাম্পল এ আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন৷ তিনি ১৮৬৯[২] সালের ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এর ওপেন এক্সামিনেশন এ তৃতীয় স্থান [৩] লাভের মাধ্যমে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন৷

সিভিল সার্ভিসসম্পাদনা

১৮৭১ সালে রমেশ চন্দ্র দত্ত আলীপুরের সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আইসিএস(ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) এ যোগদান করেন৷ পদটিতে তার নিয়োগ ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর রাণী ভিক্টোরিয়ার রঙ ও ধর্মমত নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি সমান সুযোগের ঘোষণার [৪] প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে৷
ভয়ঙ্কর সাইক্লোনের কারণে ১৮৭৪ সালে নদীয়া জেলার মেহেরপুরে এবং ১৮৭৬ সালে ভোলা জেলার দক্ষিণ শাহবাজপুরে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়৷ এলাকাগুলোতে জরুরী ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ পরবর্তী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়ে৷ রমেশ চন্দ্রের তত্ত্বাবধানে এ কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়৷ ১৮৮২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রমেশ চন্দ্রকে সার্ভিসের নির্বাহী শাখায় নিয়োগ দেয়া হয়৷ তিনিই প্রথম ভারতীয়, যাকে নির্বাহী পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়৷ ১৮৯৩ সালে তিনি বর্ধমান জেলার জেলা অফিসার এবং ১৮৯৪ সালে বর্ধমান বিভাগের কমিশনার হন৷ রমেশ চন্দ্র ১৮৯৫ সালে উড়িষ্যার বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব লাভ করেন৷ ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি বিভাগীয় কমিশনার পদে আসীন হন৷[৩]

রাজনীতিসম্পাদনা

রমেশ চন্দ্র নরমপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন৷ কংগ্রেসের শুরুর দিকে তিনি কংগ্রেসের সাথে জড়িত ছিলেন৷ ১৮৯৯ সালে তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷

সাহিত্যে অবদানসম্পাদনা

১৮৯৪ সালে রমেশ চন্দ্র বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নবীনচন্দ্র সেন পরিষদটির সহ-সভাপতি ছিলেন৷[৫] বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৮৯৩ সালে পরিষদটি গঠন করা হয়৷

সূদীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অনেকগুলো বই লিখেছেন৷ এছাড়াও তিনি মহাভারত ও রামায়ণ অনুবাদও করেছেন৷ গুণী এ মনীষী ১৯০৯ সালের ৩০এ নভেম্বর মারা যান৷

রমেশচন্দ্র দত্তের রচনাতালিকাসম্পাদনা

রমেশচন্দ্রের চারটি ঐতিহাসিক উপন্যাস বঙ্গবিজেতা (১৮৭৪), মাধবীকঙ্কণ (১৮৭৭), জীবন-প্রভাত (১৮৭৮) এবং জীবন-সন্ধ্যা (১৮৭৯) যথাক্রমে আকবর, শাজাহান এবং আওরঙ্গজেব এবং জাহাঙ্গীরের সময়ের ঘটনা অবলম্বনে রচিত হয়েছিল । মুঘল সাম্রাজ্যের শতবর্ষের ইতিহাসের ঘটনা নিয়ে এই উপন্যাসগুলি রচিত হয়েছিল বলে এগুলি একসাথে শতবর্ষ (১৮৭৯) নামে সঙ্কলিত হয়েছিল ।

সংসার (১৮৮৬) এবং সমাজ (১৮৯৩) রমেশচন্দ্রের দুটি সামাজিক উপন্যাস । সুকুমার সেনের মতে এই দুটি সামাজিক উপন্যাস তার ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলির থেকে উপাদেয় ছিল ।

উপন্যাসসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "R.C.Dutt"। R.C.Dutt,Romesh Chunder Dutt (1968)Internet Archive Million Books Project। 
  2. "utoronto"। utoronto.ca। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  3. "Sacred"। sacred-texts.com। 
  4. "Queen Victoria's Proclamation"। wikisource.org। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  5. এম মোফাখখারুল ইসলাম (২০১২)। "দত্ত, রমেশচন্দ্র"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  • বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস - শ্রী সুকুমার সেন - সপ্তম সংস্করণ।