যিমাদ আযদি

মুহাম্মাদের সাহাবি
(যিমাদ ইবনে সালামা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

যিমাদ আযদি রাযিয়াল্লাহু আনহু (আরবি: ضماد الازدي) ছিলেন মুহাম্মাদের একজন সাহাবি। বাংলায় তার নাম কখনো কখনো দিমাদ আযদি বা জিমাদ আজদি বানানে লিখা হয়ে থাকে। তিনি মাক্কি যুগে প্রথমদিকে ইসলামগ্রহণকারীদের মধ্যে একজন।[১] জাহিলি যুগে তিনি মুহাম্মাদকে সত্য বলে সাক্ষ্য দান করেন।[২]

জীবনী সম্পাদনা

যিমাদের পুরো নাম যিমাদ বিন ছালাবা আযদি। যিমাদ ছিলেন ইয়েমেনের[৩] আযদ শানুয়া গোত্রের লোক। তবে কেউ বলেন, সাঈদ বিন বকর গোত্রের।[৪] তিনি জাহিলি যুগে বাতাসে অমঙ্গলের ঝাড়ফুঁক করতেন।[৫] কেউ বলেন, জিন-ভূতের সমস্যাদির জন্যও ঝাড়ফুঁক করতেন।[৬] এছাড়া তিনি বিভিন্ন চিকিৎসাদিও করতেন।[১]

ইসলামগ্রহণ সম্পাদনা

তিনি মুহাম্মাদের নবুয়তের প্রথমদিকে মক্কায় আগমন করেন। তাকে বলা হল, মুহাম্মাদ পাগল, উম্মাদ ও জাদুকর। তিনি বললেন, আমি হয়ত লোকটাকে চিকিৎসা করাতে পারব। তিনি মুহাম্মাদের কাছে গেলেন ও বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি এই এই রোগের জন্য চিকিৎসা করিয়ে থাকি। আপনি কি চিকিৎসা করাতে ইচ্ছুক। তখন মুহাম্মাদ নিচের বাক্যগুলো বললেন,[৬]

(বাংলা)

«সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, আমি তাঁরই প্রশংসা বর্ণনা করছি, তাঁরই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে সৎ পথপ্রদর্শন করেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কেউ পথপ্রদর্শন করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইবাদতের উপযুক্ত উপাস্য নেই। তিনি এক তার কোন অংশীদার নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁরই রাসুল।»

(আরবি)

«إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»

(মুসলিম, বাইহাকি ও নাসায়ির বর্ণনায়)

এটা শুনে যিমাদ বললেন, আপনি আবার বলুন। মুহাম্মাদ তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। তারপর তিনি বললেন, আমি জাদুকরদের কথাও শুনেছি, গণকদের কথাও শুনেছি, কবিদের কথাও শুনেছি। কিন্তু এ বাক্যগুলোর মত বাক্য আর কখনো শুনিনি। আপনার কথাগুলো অথৈ সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছে গিয়েছে। আপনি আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। আমি ইসলামগ্রহণ করব। এভাবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তার গোত্রের পক্ষ থেকে মুহাম্মাদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন।[১][৩][৪][৬][৭]

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

পরবর্তী যুগে হয়ত মুহাম্মাদের সময়েই যেমনটা সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,[৫] অথবা মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর আবু বকরের যুগে; যেমনটা ইবনে আব্দিল বার তার ইসতিয়াবে[১] বর্ণনা করেছেন; একটি সেনাদল যিমাদের গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ইবনে সাদ তার তাবাকাতে কুবরার মধ্যে ঘটনাটিকে সারিয়্যার অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং এটি ইয়েমেনে আলি ইবনে আবু তালিবের নেতৃত্বে প্রেরিত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন।[৭] এই গোত্রের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের দলপতি (ইবনে সাদের বর্ণনামতে আলি) বললেন, তোমরা কি এই গোত্র হতে কিছু নিয়েছ? তাদের একজন বলল, (অযুর জন্য ব্যবহৃত) পানির পাত্র নিয়েছি। দলপতি বললেন, এটা ফিরিয়ে দাও, কেননা এটা যিমাদের গোত্র। তাই সেটা সম্মানের সাথে ফিরিয়ে দেয়া হল।[১][৪][৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বার, ইবনে আব্দিল"ضماد الْأَزْدِيّ"আল ইসতিয়াব ফি মা'রিফাতিস সাহাবাহ 
  2. হিব্বান, ইবনে। "ضماد الْأَزْدِيّ"কিতাবুছ ছীকাত (আরবি ভাষায়)। 
  3. বাগাভী"ضماد الْأَزْدِيّ"মু'জামুস সাহাবাহ 
  4. ইসফাহানি, আবু নুয়াইম। "ضِمَادُ بْنُ ثَعْلَبَةَ الْأَزْدِيُّ أَزْدُ شَنُوءَةَ"মা'রিফাতুস সাহাবাহ (আরবি ভাষায়)। 
  5. "সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | হাদিস: ১৮৮১ [ ]"www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৭ 
  6. "মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) | হাদিস: ৫৮৬০ [ ]"www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৭ 
  7. সাদ, ইবনে। "ضماد الأزدي"তাবাকাতে কুবরা