যাত্রামোহন সেনগুপ্ত
যাত্রামোহন সেনগুপ্ত (৩০ জুলাই ১৮৫০ - ২ নভেম্বর ১৯১৯) একজন বাঙালি আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী। দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত তার পুত্র।
যাত্রামোহন সেনগুপ্ত | |
---|---|
জন্ম | ৩০ জুলাই ১৮৫০ |
মৃত্যু | ২ নভেম্বর ১৯১৯ | (বয়স ৬৯)
পেশা | আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী |
সন্তান | যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত |
পিতা-মাতা |
|
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
সম্পাদনাযাত্রামোহন সেনগুপ্ত ১৮৫০ সালের ৩০ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার বরমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতার নাম ছিল ত্রাহিরাম সেন ও মাতার নাম মেনকা দেবী। পিতা ত্রাহিরাম সেন ছিলেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। ১২ বছর বয়সে পিতাকে হারান যাত্রামোহন এবং গৃহশিক্ষকতা করে নিজেই লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। ছোটবেলায় এক দুর্ঘটনাতে তার হাতের আঙুল পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। ভালো করে কলম ধরতে পারতেননা তিনি। অধ্যবসায় আর মেধার জোরে তবুও লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি।[২] চট্টগ্রাম গভর্নমেন্ট স্কুল (বর্তমান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল) থেকে ১৮৬৮ সালে এনট্রান্স, ১৮৭০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কলকাতা ক্যাথিড্রেল মিশন কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। এরপর চট্টগ্রামে কমিশনার অফিসে মাসিক ত্রিশ টাকা বেতনে চাকরি গ্রহণ করেন। দশ মাস পর তিনি চাকুরি ছেড়ে কলকাতায় এসে আইন পড়া শুরু করেন। এর পাশাপাশি লং সাহেবের গির্জায় কম্পাউন্ড কেডিসেন মিশন বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষক পদে কাজ করেছেন। ১৮৭৬ সালে সপ্তম স্থান অধিকার করে বি এল পাশ করে চট্টগ্রাম চলে যান ও সেখানে ওকালতি শুরু করেন।[১][৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনাওকালতির মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন যাত্রামোহন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলে যোগ দিয়ে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে সভাসমিতিতে বক্তৃতা রাখতেন, সুবক্তা হিসেবে তার পরিচিতি হয়। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য হয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার অনুরাগ ছিল। তার উদ্যোগে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে। এই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। ১৯১৯ সালের ময়মনসিংহ বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সম্মেলনের অভিভাষণে তার চরমপন্থি রাজনীতির আভাস পাওয়া যায়।[৩] তার বাগ্মিতা, দেশপ্রেম পুত্র যতীন্দ্রমোহনকে প্রভাবিত করেছিল। তার বাড়িতে সম্মানিত ও বিশিষ্ট নেতা বিভিন্ন সময় আতিথ্য গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, মৌলানা শওকত আলী, ড. আনসারী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, ব্যারিস্টার এম. এ. রসুল প্রমুখ।[২] চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন তৈরির সময় তিনি জমি দান করেন। তার মৃত্যুর পর ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠানের ভবনটির নাম হয় যাত্রামোহন সেন হল বা জেএম সেন হল। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে চট্টগ্রামের এই ঐতিহাসিক ভবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।[৪] শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যালয়, তিনি নিজের নামানুসারে জে.এম.সেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রাম শহরের ফিরিঙ্গীবাজারে। চিকিৎসালয়, ব্রাহ্মমন্দির স্থাপন ও নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন তিনি।[১]
মৃত্যু
সম্পাদনাযাত্রামোহন সেনগুপ্ত ১৯১৯ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "সেনগুপ্ত, যাত্রামোহন"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৭।
- ↑ ক খ "কালজয়ী যাত্রা মোহন সেনগুপ্তকে শ্রদ্ধাঞ্জলি"। দৈনিক সংগ্রাম। ২ জুন ২০১২। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৭।
- ↑ ক খ গ প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৪৩৭।
- ↑ "ইতিহাসের নিরব সাক্ষী জেএম সেন হল"। ২৪ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]