ম্যারি অ্যাস্টর (ইংরেজি: Mary Astor; জন্ম: লুসিল ভাস্কনসেলোস ল্যাংহ্যাঙ্ক; ৩ মে ১৯০৬ - ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭) ছিলেন একজন মার্কিন অভিনেত্রী ও লেখিকা।[][] তিনি দ্য মল্টিজ ফ্যালকন (১৯৪১) চলচ্চিত্রের ব্রিগিড ওশঘনেসি চরিত্রের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একটি একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেছেন।

ম্যারি অ্যাস্টর
Mary Astor
১৯৩৩ সালে অ্যাস্টর
জন্ম
লুসিল ভাস্কনসেলোস ল্যাংহ্যাঙ্ক

(১৯০৬-০৫-০৩)৩ মে ১৯০৬
মৃত্যু২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭(1987-09-25) (বয়স ৮১)
উডল্যান্ড হিলস, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সমাধিহলি ক্রস সিমেট্রি, কালভার সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯২০–১৯৬৪
দাম্পত্য সঙ্গীকেনেথ হকস
(বি. ১৯২৮; মৃ. ১৯৩০)

ফ্রাঙ্কলিন থর্প
(বি. ১৯৩১; বিচ্ছেদ. ১৯৩৫)

মানুয়েল দেল কাম্পো
(বি. ১৯৩৬; বিচ্ছেদ. ১৯৪১)

থমাস গর্ডন হুইলক
(বি. ১৯৪৫; বিচ্ছেদ. ১৯৫৫)
সন্তান
স্বাক্ষর

১৯২০-এর দশকের শুরুতে কিশোরী বয়সে নির্বাক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অ্যাস্টরের অভিনয় কর্মজীবন শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় তিনি সবাক চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। শুরুর দিকে তার কণ্ঠ পুরুষালী বলে বিবেচিত হওয়ায় তাকে পর্দায় দেখা যায়নি। তিনি তার বন্ধু ফ্লোরেন্স এলরিজের সাথে একটি মঞ্চনাটকে কাজ করেন এবং চলচ্চিত্রের প্রস্তাব পেতে থাকেন, ফলে তিনি সবাক চলচ্চিত্রে পুনরায় কাজ শুরু করেন। চার বছর পর এক কুৎসায় জড়িয়ে পরে তার কর্মজীবনে ধস নামে। ১৯৩৬ সালে তার প্রাক্তন স্বামী তাকে পরকীয়ায় আসক্ত বলে অভিযোগ আনে এবং তার কন্যাকে নিয়ে মামলা করে। ব্যক্তিগত জীবনের এই ঝামেলা মিটিয়ে তিনি পর্দায় সফলতা অর্জন করেন এবং দ্য গ্রেট লাই (১৯৪১) চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৪০-এর দশকের পুরো সময় তিনি মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার স্টুডিওর সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন এবং ১৯৬৪ সালে অবসর নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চে কাজ করে যান। পরিচালক লিন্ডসে অ্যান্ডারসন ১৯৯০ সালে তার সম্পর্কে লিখেন, "যখন চলচ্চিত্রপ্রেমী দুই বা তিনজন একসাথে হতো, ম্যারি অ্যাস্টরের নাম ওঠে আসতো, এবং সকলে সম্মত ছিলেন যে তিনি বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণকারী অভিনেত্রী ছিলেন, যার গভীরতা ও বাস্তবতার গুণাবলী সবসময় তিনি যেসব চরিত্রে কাজ করতেন সেখানে প্রতিফলিত হতো।"[]

তিনি পাঁচটি উপন্যাস রচনা করেছেন। তার আত্মজীবনী সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় ছিল এবং তার পরবর্তী বই আ লাইফ অন ফিল্ম ছিল তার কর্মজীবন সম্পর্কিত।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

অ্যাস্টর ১৯০৬ সালের ৩রা মে ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের কুইন্সি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অটো লুডভিগ ভিলহেল্ম লাংহাঙ্কা এবং মাতা হেলেন মারি দে ভাস্কোনসেলো।[] তার জার্মান পিতা ১৮৯১ সালে বার্লিন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। তার মাতা ইলিনয়ের জ্যাকসনভিলে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু তার পূর্বপুরুষগণ পর্তুগিজ ছিলেন।[] ১৯০৪ সালের ৩রা আগস্ট ক্যানসাসের লিয়ন্সে তাদের বিয়ে হয়। তারা দুজনেই শিক্ষক ছিলেন। অ্যাস্টরের পিতা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত কুইন্সি হাই স্কুলে জার্মান ভাষা শিখাতেন। এরপর তিনি কৃষিকাজে জড়িত হন। অ্যাস্টরের মাতা অভিনেত্রী হতে চাইতেন এবং তিনি নাট্যতত্ত্ব ও বক্তৃতা শিখাতেন। অ্যাস্টর বাড়িতেই শিক্ষাগ্রহণ করেন। তার পিতা তাকে পিয়ানো বাজানো শিখাতেন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

অ্যাস্টরের প্রথম স্ক্রিন টেস্ট পরিচালনা করেন লিলিয়ান গিশ, যিনি তার উইলিয়াম শেকসপিয়ারের লেখা আবৃতিতে এতটা মুগ্ধ হন যে তিনি তার আবৃতি ধারণ করতে হাজার ফুট ফিল্ম শ্যুট করেন। ১৯২১ সালে ১৪ বছর বয়সে নির্বাক চলচ্চিত্র সেন্টিমেন্টাল টমি-তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অ্যাস্টরের চলচ্চিত্রে কর্মজীবন শুরু হয়।

তিনি দ্য গ্রেট লাই (১৯৪১) চলচ্চিত্রে আত্মমগ্ন কনসার্ট পিয়ানোবাদক সান্ড্রা কোভাক চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি তার অনাগত সন্তানকে ত্যাগ করেন। এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন বেটি ডেভিস, যিনি তার স্ক্রিন টেস্ট ও পিওতর ইলিচ চাইকভ্‌স্কির পিয়ানো কনসের্টো নং ১ বাজানো দেখে তাকে এই চলচ্চিত্রের জন্য বাছাই করেন।[] তিনি এরপর তার সাথে যৌথভাবে পাণ্ডুলিপি লেখার জন্য অ্যাস্টরকে নিয়োগ দেন, কারণ তিনি মনে করেন এই পাণ্ডুলিপিটি মাঝারি মানের এবং তা আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে কাজ করা প্রয়োজন। অ্যাস্টর ডেভিসের উপদেশ অনুসরণ করেন এবং এই চরিত্রের জন্য তিনি বগ করা চুলের স্টাইল করেছিলেন।[]

ভ্যারাইটি তার অভিনয় সম্পর্কে লিখে, "ডেভিস প্রেম ও বিবাহের দুঃখজনক ঘটনার মুখোমুখি হওয়া স্ত্রী চরিত্রে সবচেয়ে বিশ্বস্ত চিত্রায়ন করেছেন। কিছু জায়গায়, তিনি অশ্রু ঝরান, এবং কিছু জায়গায় হালকা স্বতঃস্ফূর্ততার স্বল্পস্থায়ী মুহূর্ত সৃষ্টি করেন।"[] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর বসলি ক্রাউদার ম্যারি অ্যাস্টরের অভিনয়কে "মনমুগ্ধকর" বলে উল্লেখ করেন।[] এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।[] অস্কার গ্রহণকালে তিনি বেটি ডেভিস ও চাইকভ্‌স্কিকে ধন্যবাদ জানান। এই কাজের পর অ্যাস্টর ও ডেভিস ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন।[]

মৃত্যু

সম্পাদনা

অ্যাস্টর ১৯৮৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ৮১ বছর বয়সে পালমনারি এমফিজিমার কারণে শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মোশন পিকচার হাউজ কমপ্লেক্সের হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ক্যালিফোর্নিয়ার কালভার সিটির হলি ক্রস সেমেটারিতে সমাহিত করা হয়।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. টমাস, বব (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭)। "'Maltese Falcon' star Astor dies at 81"। Kansas, Salina। দ্য স্যালিনা জার্নাল। পৃষ্ঠা ৮। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৮নিউজপেপার্স.কম-এর মাধ্যমে। 
  2. "Mary Astor Not Actress by Accident; Career Planned"। Montana, Butte। দ্য মন্টানা স্ট্যান্ডার্ড। ২৪ আগস্ট ১৯৩৬। পৃষ্ঠা ৫। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৮নিউজপেপার্স.কম-এর মাধ্যমে। 
  3. অ্যান্ডারসন, লিন্ডসি। "Mary Astor", সাইট অ্যান্ড সাউন্ড, Autumn 1990। পুনর্মুদ্রণ Paul Ryan (ed) Never Apologise: The Collected Writings, 2004, London: Plexus, pp. 431–36, 431
  4. "Distinguished Americans & Canadians of Portuguese Descent"। জুলাই ১৮, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২৫ 
  5. হাইয়াম, চার্লস (১ অক্টোবর ১৯৮১)। The Life of Bette Davis । New York: ম্যাকমিলান পাবলিশিং কোম্পানি। পৃষ্ঠা ১৪০–১৪৩। আইএসবিএন 978-0025515000 
  6. "The Great Lie"ভ্যারাইটি (ইংরেজি ভাষায়)। ১ জানুয়ারি ১৯৪১। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২৫ 
  7. ক্রাউদার, বসলি (১২ এপ্রিল ১৯৪১)। "Bette Davis Wriggles Out of 'The Great Lie,' at the Strand -- Dead End Kids at Rialto"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২৫ 
  8. "The 14th Academy Awards | 1942"অস্কারস (ইংরেজি ভাষায়)। একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। ৩ অক্টোবর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২৫ 
  9. ম্যাকমিলান, পেনেলোপি (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭)। "From the Archives: Actress, Author Mary Astor, 81, Dies"লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২৫ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা