মোহাম্মদ ওসমান গনি

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

মোহাম্মদ ওসমান গনি (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[]

মোহাম্মদ ওসমান গনি
মৃত্যু১৯৯৯
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

মোহাম্মদ ওসমান গনির পৈতৃক বাড়ি পঞ্চগড় জেলার পৌরসভার অন্তর্গত মিঠাপুকুরে। তার বাবার নাম আজিজুল হক এবং মায়ের নাম আফরিন নেছা। তার স্ত্রীর নাম নাসিম বানু। তাদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

মোহাম্মদ ওসমান গনি চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের রংপুর উইংয়ের অধীন চিলমারীতে। তিনি একটি কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন। ২৫ মার্চের দু-তিন দিন আগে সুবেদার মেজর হিসেবে তার পদোন্নতি হয়। তাকে সেক্টর হেডকোয়ার্টারে যেতে বলা হয় এবং তিনি চিলমারী থেকে রংপুর হয়ে দিনাজপুর রওনা হন। এর মধ্যে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। পথে পার্বতীপুর রেলস্টেশনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে তিনি আক্রান্ত হয়ে কোনো রকমে বেঁচে যান।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন শেষে দিনাজপুর সার্কিট হাউসে ছিল এক কোম্পানি পাকিস্তানি সেনা। কোম্পানিটি পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। মার্চ মাসে তাদের যাত্রা বাতিল করা হয়। ২৮ মার্চ বিকেলে এফএফ রেজিমেন্ট ইপিআর সেক্টরে গোলাবর্ষণ করে। সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অবস্থান ছিল কুঠিবাড়িতে। এ সময় সেখানে ইপিআরদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বাঙালি কর্মকর্তা কেউ ছিলেন না। এমনকি সেক্টরের সবচেয়ে প্রবীণ বাঙালি সুবেদার মেজরও অনুপস্থিত ছিলেন। এ অবস্থায় ইপিআর মর্টার প্লাটুনের বাঙালি সেনারা মর্টারসহ কুঠিবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তারা কাঞ্চনে অবস্থান নিয়ে সার্কিট হাউস লক্ষ্য করে পাল্টা গোলাবর্ষণ করেন। মর্টার প্লাটুন তাদের রিয়ার হেডকোয়ার্টার স্থাপন করে কাঞ্চনে। ২৯ মার্চ রাতে দিনাজপুর সেক্টরের বাঙালি ইপিআররা একযোগে বিদ্রোহ করে কাঞ্চনে সমবেত হন। ওসমান গনি পার্বতীপুর থেকে ৩০ মার্চ কাঞ্চনে পৌঁছে বিদ্রোহী ইপিআরদের সঙ্গে যোগ দেন। তাকে রিয়ার হেডকোয়ার্টারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিরোধযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দিনাজপুর শহরে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনী কাঞ্চনের রিয়ার হেডকোয়ার্টারে কয়েকবার আক্রমণ করে। ওসমান গনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে এ আক্রমণ প্রতিহত করেন। তার নেতৃত্ব ও পরিচালনায় ইপিআর সেনারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ৩১ মার্চ দিনাজপুর শহর মুক্ত হয়। কয়েক দিন পর রংপুর ও সৈয়দপুর থেকে আগত পাকিস্তানি সেনারা দিনাজপুর শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের আক্রমণ করে। অব্যাহত আক্রমণের মুখে কাঞ্চনে অবস্থানরত ওসমান গনিরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুই স্থানে যান। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ১২ এপ্রিল ওসমান গনি তার দলের সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিরলে অবস্থান নেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে কয়েক দিন ধরে তার দলের যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানিরা ভারী অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নিয়ে কয়েকবার তাদের আক্রমণ করে। ওসমান গনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু তারা সেখানে টিকে থাকতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পশ্চাদপসরণ করে নানাবাড়ি নামক স্থানে অবস্থান নেন। দু-তিন দিন পর পাকিস্তানিরা সেখানে আক্রমণ করে। তখন সেখানে ছোটখাটো যুদ্ধ হয়। তারা পিছে হটে কিশোরীগঞ্জে যান। ২৪ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরাট দল ওসমান গনির দলকে আক্রমণ করে। তখন তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালান। তাদের আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশ ক্ষতি হয়। এরপর পাকিস্তানিরা ভারতীয় ভূখণ্ডে অনবরত শেলিং করতে থাকে। এতে জানমালের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তাকে সহযোদ্ধাসহ ভারতে যাওয়ার অনুরোধ করে। তখন তিনি বাধ্য হয়ে সহযোদ্ধাদের নিয়ে ভারতে যান। ভারতে পুনঃসংগঠিত হওয়ার পর ওসমান গনি ৬ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ছাত্র-যুবকদের মধ্যে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক, তাদের মধ্যে থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করেন এবং প্রশিক্ষণ দেন। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২১-১১-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৮২। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা

সম্পাদনা