মোল্লা মাজদুদ্দিন

মাজদুদ্দীন আল-মাদানী (আরবি: مجد الدین المدنی),[১] মদন শাহজাহানপুরী বা মাজদুদ্দীন ওরফে মোল্লা মদন নামেও পরিচিত (আরবি: مدن شاہجہانپوری), [২] ছিলেন ১৮ শতকের একজন ভারতীয় মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, গবেষক ও শিক্ষক ছিলেন।[৩] তিনি বাংলার প্রথম আলিয়া মাদ্রাসা, মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও মাদ্রাসার প্রথম হেড মাওলানা ছিলেন।[৪][৫] তার উপাধি ছিলো মৌলভি বাহারুল উলুম। তিনি ইসলামি আইন, বালাগাত-মানতিক সম্পর্কেও জ্ঞান রাখতেন।


মাজদুদ্দিন
ملّا مجد الدین
প্রথম পরিচালক মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, কলকাতা
অফিসে
১৭৮১ – ১৭৯১
পূর্বসূরীপদ স্থাপিত
উত্তরসূরীমুহাম্মাদ ইসমাইল
ব্যক্তিগত তথ্য
ধর্মইসলাম
উদ্ভব১৮ শতাব্দী
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
যে জন্য পরিচিতকলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক
মুসলিম নেতা
শিক্ষকশাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি
ভিত্তিকবেরেলি
কলকাতা

তিনিই এই মাদ্রাসার সিলেবাস প্রণয়ন করেন। তিনি ইসলামের মৌলিক জ্ঞানের পাশাপাশি ইসলামি আইন ও বিচারব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে ও গণিত, যুক্তিবিদ্যা ও দর্শন অন্তর্ভুক্ত করে এই সিলেবাস প্রণয়ন করেন। তার বাড়িতেই কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রথম ৭ মাসের কার্যক্রম চলতে থাকে।[৬] সেই সময়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসাবে তার মাসিক বেতন ৩০০ টাকা ধার্য করা হয়েছিলো।[৭]

শিক্ষা সম্পাদনা

মাজদুদ্দিন উত্তর ভারতের বৃহত্তর বেরেলির শাহজাহানপুরে জন্মগ্রহণ করেন।[১] পরবর্তীতে তিনি শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর একজন ছাত্র হয়েছিলেন।[৮] তিনি দারসে নিজামির শিক্ষার্থী ছিলেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৮ শতকের শেষ ত্রৈমাসিকে, ব্রিটিশ প্রশাসকরা উপলব্ধি করছিলেন যে উপমহাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, এবং আইনী রীতিনীতি আরও ভালভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে ভারতের গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ সালের অক্টোবরে কলকাতা মোহামেডান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।[৯] মোল্লা মাজদুদ্দিন সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় যান। ২১ সেপ্টেম্বর বেশ কয়েকজন মুসলমান হেস্টিংসকে তার প্রভাব ব্যবহার করে মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে মাজদুদ্দিনকে নিয়োগের প্রস্তাব দেন।[১০] এইভাবে, মাজদুদ্দিন মাদ্রাসার প্রথম প্রধান পরিচালক ও হেড মাওলানার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় এক দশক ধরে সেই ভূমিকা পালন করেন। উত্তর ভারতের একটি জনপ্রিয় ইসলামিক পাঠ্যক্রম দারস-ই নিজামি বাংলা পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে প্রবর্তনের জন্য তাকে প্রায়শই কৃতিত্ব দেওয়া হয়।[৮]

১৭৯১ সালে, মাজদুদ্দিনকে ২৪ পরগনার ব্রিটিশ কালেক্টর কর্তৃক অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ষড়যন্ত্রের তদন্তের পর তাকে অপসারণ করা হয়। কলকাতা থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর, মাজদুদ্দিন বেরেলিতে ফিরে আসেন এবং ইসলামী আইনশাস্ত্র শেখাতে শুরু করেন। বেরিলির তার উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের একজন ছিলেন সালামত উল্লাহ কাশফী।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Madrassah Education"। Press and Publications Department, Muslim World League। নভেম্বর ১৯৮২: 29। 
  2. Mawlana Nur Muhammad Azmi। "2.2 বঙ্গে এলমে হাদীছ" [2.2 Knowledge of Hadith in Bengal]। হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস। Emdadia Library। পৃষ্ঠা 24। 
  3. "কলকাতা মাদ্রাসা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৯ 
  4. Ragib, Hammad (২০১৯-০৮-০৭)। "কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড : একটি পর্যালোচনা"Fateh24 (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৯ 
  5. "হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস"জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি (ইংরেজি ভাষায়)। হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস। ২০১৪-০৫-০৮। ৩২ পৃষ্ঠা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৯ 
  6. "যে আলেমের হাতে আলিয়া মাদরাসার সূচনা | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। ২০২২-১০-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৬ 
  7. "আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার খন্ডচিত্র"আওয়ার ইসলাম। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৯ 
  8. Siddiqui, M.K.A. (১৯৯৭)। Institutions and Associations of the Muslims in Calcutta: A Preliminary Survey। Institute of Objective Studies। 
  9. Muhammad Abdur Rahim (১৯৭৮)। The Muslim Society and Politics in Bengal, A.D. 1757-1947University of Dacca। পৃষ্ঠা 124। 
  10. "Establishment of Calcutta Madrasah"। Reports on Islamic Education and Madrasah Education in Bengal, 1861-1977Islamic Foundation Bangladesh। পৃষ্ঠা 138।