মুরওয়াব

কাতারের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান

মুরওয়াব (আরবি: مروب) হল উত্তর-পশ্চিম কাতারে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এর এক প্রান্তে একটি বিশাল গ্রাম রয়েছে, যা আব্বাসীয় আমলের শুরু থেকে নবম শতাব্দীর শেষ দিকে কার্মাতিয়ান বিপ্লবের সূচনালগ্ন পর্যন্ত ব্যবহৃত হত।[] স্থানটিতে ২৫০টি বিধ্বস্ত ঘর, একটি দুর্গ এবং দুটি মসজিদ রয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়ির কাছে কবরস্থানের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।[]

মুরওয়াব
مروب
মুরওয়াব কাতার-এ অবস্থিত
মুরওয়াব
কাতারে অবস্থান
অবস্থানউত্তর-পশ্চিম কাতার
স্থানাঙ্ক২৫°৫১′৩৫″ উত্তর ৫১°০১′১১″ পূর্ব / ২৫.৮৫৯৭১৪° উত্তর ৫১.০১৯৫৯৭° পূর্ব / 25.859714; 51.019597
ধরনজনবসতি
ইতিহাস
সময়কালআব্বাসীয় যুগ
স্থান নোটসমূহ
খননের তারিখ১৯৮৪
২০০৯
প্রত্নতত্ত্ববিদসি. হার্ডি-গিলবার্ট
অ্যালেক্সান্ড্রাইন গুয়েরিন

নামকরণ

সম্পাদনা

মুরওয়াব শব্দটি এসেছে আরবি রওব শব্দ থেকে, যা দ্বারা দইঘোল দিয়ে তৈরি এক ধরনের দুগ্ধজাত দ্রব্যকে বুঝায়। উক্ত এলাকার মেষপালকেরা তাদের ছাগলের দুধ থেকে বিপুল পরিমাণে রওব প্রস্তুত করতেন বলে অঞ্চলটির নাম রাখা হয়েছে মুরওয়াব।[]

অবস্থান

সম্পাদনা

মুরওয়াব উত্তর-পশ্চিম কাতারের দুখান শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। সমুদ্র উপকূল থেকে এর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। এর নিকটেই রয়েছে কাতারের আরেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উম্মুল মা[]

আবিষ্কার এবং খনন

সম্পাদনা

১৯৫৯ সালে জেফ্রি বিবির নেতৃত্বাধীন একদল ডেনীয় প্রত্নতাত্ত্বিক এই প্রত্নস্থলটি আবিষ্কার করেন।[][] সি হার্ডি-গিলবার্টের নেতৃত্বে একটি ফরাসী দল ১৯৮৪ সালে এই স্থানটিতে খননকার্য পরিচালনা করে। পরবর্তীতে, ২০০৯ সালে গুয়রিনের নেতৃত্বে আরেকটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল এখানে খননকার্য পরিচালনা করে।[]

প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহ

সম্পাদনা

জিনিসপত্র

সম্পাদনা

খননকারীরা মুরওয়াবে ৬,৯৪৮টি মৃৎপাত্রের টুকরো আবিষ্কার করেছিল।[] এগুলোর বেশিরভাগই খ্রিস্টীয় ৮০৫-৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে তৈরি। এগুলোর মধ্যে দুই ধরনের পাত্র ছিল: কয়েকটি ছিল চকচকে আর বাকিগুলো সাধারণ।[] মোট ৬,৯৪৮টি মৃৎপাত্রের টুকরার মধ্যে সাধারণ ৪,৬৯৭টি এবং চকচকে ২,২৫১টি।[] ফয়সাল আল-নুয়াইমি এবং আলেকজান্ড্রাইন গুয়েরিন পরিচালিত একটি গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে, গ্রামবাসীরা মুক্তার বিনিময়ে পণ্য বিক্রি করত।[]

বেশিরভাগ সাধারণ সামগ্রী বৈশিষ্ট্যগতভাবে তাদের গোলাকার আকৃতি দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। প্রাপ্ত সাধারণ পাত্রগুলোর অন্তত ১৮% মেরামতের চেষ্টার চিহ্ন বহন করে।[] ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরগুলোতে প্রাপ্ত বেশ কিছু চুল্লীতে বিটুমেনের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা নির্দেশ করে যে এগুলো ঘরোয়া ভাবেই মেরামত করা হত।[১০]

আল-নুয়াইমি এবং গুয়েরিন এখানে প্রাপ্ত চকচকে দ্রব্যাদির সাথে বর্তমান ইরানের সুসা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোর নকশা ও বর্ণের তুলনা করে দেখিয়েছেন। তারা অনুমান করেছেন যে, চকচকে জিনিসগুলোর একটি অংশ সরাসরি সুসা থেকে আমদানি করা হতে পারে।[১১] তারা আরো মন্তব্য করেন যে, সেখানে প্রাপ্ত অষ্টম ও নবম শতাব্দীর চকচকে পাত্রগুলোর কিছু অংশ বসরা এবং সামাররায় তৈরি হয়ে থাকতে পারে।[] কাতারের অন্যান্য অধিকাংশ প্রত্নস্থলে চীনা জিনিসপত্র পাওয়া গেলেও মুরওয়াবে তা পাওয়া যায় নি বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।[]

কাতারে আবিষ্কৃত দুর্গগুলোর মধ্যে মুরওয়াব দুর্গই সবচেয়ে প্রাচীন। আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষের উপর এ দুর্গটি নির্মাণ করা হয়।[১২] দুর্গটি আয়তক্ষেত্রাকার। মনে করা হয় যে, পূর্বে এটিকে একটি বসবাসের প্রাসাদ হিসাবে ব্যবহার করা হত। আব্বাসীয় আমলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্থানে বসবাসের জন্য যেসব প্রাসাদ গড়ে তোলা হয়েছিল তার সাথে এর বেশ মিল রয়েছে।[১৩] দূর্গের কেন্দ্রে রয়েছে একটি বড় উঠান, যার সাথে বারোটি আয়তাকার কক্ষে প্রবেশের দরজা সংযুক্ত আছে। দুর্গের প্রবেশপথটি এর উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। এটি ৪.৬ ফুট চওড়া। পাথর ও কাদামাটি ব্যবহার করে দুর্গটির দেয়াল নির্মাণ করা হয়।[]

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. ফাইসাল আল-নুয়াইমি ও অ্যালেক্সান্ড্রাইন গুয়েরিন (২০১০)। "Murwab horizon in progress, ninth century AD, Qatar"। প্রোসিডিং অফ দ্য সেমিনার ফর অ্যারাবিয়ান স্টাডিস (ইংরেজি ভাষায়)। ৪০: ১৯। 
  2. "Qatar's Heritage Sites" (ইংরেজি ভাষায়)। মারহাবা। ৮ মে ২০১৪। ২১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৫ 
  3. "জিআইএস পোর্টাল" (ইংরেজি ভাষায়)। পৌরসভা ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। ১৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৯ 
  4. জাইদাহ, ইবরাহিম; বোরেনান, মালিকা (২০১০)। The History of Qatari Architecture 1800-1950 (ইংরেজি ভাষায়)। স্কিরা। পৃষ্ঠা ৩৪। আইএসবিএন 978-8861307933 
  5. এ. ঘোষ (১৯৬৮)। "Report on the protection of cultural heritage and development of a museum" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। ইউনেস্কো। পৃষ্ঠা ৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৫ 
  6. ফয়সাল আল-নুয়াইমি ও আলেকজান্ড্রাইন গুয়েরিন (২০১০)। "Murwab horizon in progress, ninth century AD, Qatar"। প্রোসিডিংস অফ দ্য সেমিনার ফর অ্যারাবিয়ান স্টাডিস (ইংরেজি ভাষায়)। ৪০: ১৮। 
  7. ফয়সাল আল-নুয়াইমি ও আলেকজান্ড্রাইন গুয়েরিন (২০১০)। "Murwab horizon in progress, ninth century AD, Qatar"। প্রোসিডিংস অফ দ্য সেমিনার ফর অ্যারাবিয়ান স্টাডিস (ইংরেজি ভাষায়)। ৪০: ৩২। 
  8. ফয়সাল আল-নুয়াইমি ও আলেকজান্ড্রাইন গুয়েরিন (২০১০)। "Murwab horizon in progress, ninth century AD, Qatar"। প্রোসিডিংস অফ দ্য সেমিনার ফর অ্যারাবিয়ান স্টাডিস (ইংরেজি ভাষায়)। ৪০: ২৯। 
  9. ফয়সাল আল-নুয়াইমি ও আলেকজান্ড্রাইন গুয়েরিন (২০১০)। "Murwab horizon in progress, ninth century AD, Qatar"। প্রোসিডিংস অফ দ্য সেমিনার ফর অ্যারাবিয়ান স্টাডিস (ইংরেজি ভাষায়)। ৪০: ২৭। 
  10. ফয়সাল আল-নুয়াইমি ও আলেকজান্ড্রাইন গুয়েরিন (২০১০)। "Murwab horizon in progress, ninth century AD, Qatar"। প্রোসিডিংস অফ দ্য সেমিনার ফর অ্যারাবিয়ান স্টাডিস (ইংরেজি ভাষায়)। ৪০: ২৮। 
  11. ফয়সাল আল-নুয়াইমি ও আলেকজান্ড্রাইন গুয়েরিন (২০১০)। "Murwab horizon in progress, ninth century AD, Qatar"। প্রোসিডিংস অফ দ্য সেমিনার ফর অ্যারাবিয়ান স্টাডিস (ইংরেজি ভাষায়)। ৪০: ২১। 
  12. "History of Qatar" (পিডিএফ)কাতার দূতাবাস, থাইল্যান্ড (ইংরেজি ভাষায়)। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। লন্ডন: স্ট্যাকি ইন্টারন্যাশনাল। ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৫ 
  13. "Settlements of Qatar" (ইংরেজি ভাষায়)। কাতার জাদুঘর। ২৭ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫