মুনধুম (পেলান নামেও পরিচিত) হল লিম্বু সম্প্রদায়ের প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ এবং লোকসাহিত্য। [১] ভিন্নমতে মুনধুম নেপালের আদিবাসীদের দ্বারা অনুসৃত একটি প্রাচীন ধর্ম। লিম্বু ভাষায় মুনধুম কথার অর্থ হল মহান সামর্থ্যের শক্তি[২][৩]

ইয়াকথুং হল লিম্বু সংস্কৃতির অপর এক নাম। ভারতীয় উপমহাদেশে বৈদিক সভ্যতার উত্থানের আগে থেকেই লিম্বু রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের অস্তিত্ব ছিল। এই লিম্বু সংস্কৃতির ও আচারের সাথে মুনধুমের বিশেষ সম্পর্ক দেখা যায়।[৪][৫][৬][৭]

মুনধুম লোকসাহিত্য দুটি ভাগে বিভক্ত, যারা থাংসাপ এবং পেসাপ নামে পরিচিত।[৮] মুনধুম কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয় বরঞ্চ এটি সংস্কৃতি, আচার এবং সামাজিক মূল্যবোধ শেখানোর একটি নির্দেশাবলী। মুনধুম গ্রন্থ প্রাচীন লিম্বু ভাষায় রচিত এবং বিভিন্ন লিম্বু উপজাতির মধ্যে এর বিবিধ সংস্করণ বর্তমান। ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণের মধ্যে কিছু বিশেষ পরিবর্তন ও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি সংস্করণ বিবিধ উপজাতির স্বতন্ত্র সংস্কৃতি পরিবেশন করে এবং অন্যান্য উপজাতি ও জনগণের সাথে তাদের সামাজিক পরিচয় ঘটায়। এর ফলে এই গ্রন্থের মাধ্যমে বিবিধ উপজাতিদের মধ্যে ঐক্য গঠন হয়।[৯]

থাংসাপ মুনধুম সম্পাদনা

থাংসাপ মুনধুম প্রাচীনকাল থেকে লোককাহিনীর মাধ্যমে এক পুরুষ থেকে আরেক পুরুষে ঐতিহ্যগতভাবে প্রবাহিত হয়েছে এবং লিখন শিল্প প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই লোকজনের মুখে মুখে ধর্মগ্রন্থের মূল সারটি পুরুষানুক্রমে সংরক্ষিত হয়েছে।[৮] এটি একটি পুরাতন মহাকাব্য যা সাম্বা, ধর্মীয় কবি এবং চারনকবিদের দ্বারা গানের আকারে রচিত এবং আবৃত্তি করা হত। কিরাত ধর্মগুরুদের বলা হত সাম্বাসাম মানে গান এবং বা মানে হল এমন একজন ব্যক্তি যিনি সাম বা গান জানেন।[৮] এই দুটি কথা থেকেই সাম্বার উৎপত্তি।

পেসাপ মুনধুম সম্পাদনা

পেসাপ মনধুম ধর্ম সম্পর্কে একটি লিখিত বই। এটি চারটি ভাগে বিভক্ত: সোকসোক মনধুম, ইয়েহাং মনধুম, সামজিক মনধুম এবং সাপ মনধুম।[৮] সোকসোক মুনধুম মহাবিশ্বের সৃষ্টি, মানবজাতির সূচনা, পাপের কারণ ও প্রভাব, হিংসা ও ক্রোধ উতপাদনকারী মন্দ আত্মার সৃষ্টির কারন, শৈশবে মৃত্যুর কারণ ও তার প্রভাব সম্পর্কে লেখা রয়েছে।

ইয়েহাং মনধুমে মানবজাতির প্রথম নেতার গল্প রয়েছে যিনি মানুষের প্রাণী জীবনের নিম্ন পর্যায় থেকে উচ্চ আত্মদর্শন ও বোধিলাভের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করেছিলেন এবং আধ্যাত্মবাদ ও দর্শনের মাধ্যমে কিভাবে একজন মানুষ তার নিজ জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সেই সম্পর্কে আলোকপাত করেছিলেন। এ গ্রন্থে নেতা বিবাহ, সালিশ, শুদ্ধিকরণ ও ধর্মের নিয়মকানুন নথিগত রয়েছে।[৮] প্রলয় দ্বারা মানুষের ধ্বংসের কাহিনী এবং কিরাত জনগণের মধ্যে বহু ভাষার অস্তিত্বের কারণ, ঈশ্বরের উপাসনা থেকে ঋতু পূজার সামাজিক রীতিনীতি, শিশুর জন্ম ও মৃত্যুতে শুদ্ধিকরণের নিয়ম ইত্যাদি প্রসংগ সম্পর্কে লেপমুহাং মুনধুমে উল্লেখ করা হয়েছে।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. P120 The Rise of Ethnic Politics in Nepal: Democracy in the Margins By Susan I. Hangen Routledge, 4 Dec 2009
  2. Hardman, Charlotte E. (ডিসেম্বর ২০০০)। Other Worlds: Notions of Self and Emotion among the Lohorung Rai। Berg Publishers। পৃষ্ঠা 104–। আইএসবিএন 978-1-85973-150-5 
  3. Nationalism and Ethnicity in a Hindu Kingdom: The Politics and Culture of Contemporary Nepal, Front Cover By D. Gellner, J. Pfaff-Czarnecka, J. Whelpton Routledge, 6 Dec 2012 - Social Science - 648 pages, Page 530
  4. Dor Bahadur Bista (১৯৯১)। Fatalism and Development: Nepal's Struggle for Modernization। Orient Longman। পৃষ্ঠা 15–17। আইএসবিএন 81-250-0188-3 
  5. Cemjoṅga, Īmāna Siṃha (২০০৩)। History and Culture of the Kirat People। Kirat Yakthung Chumlung। পৃষ্ঠা 2–7। আইএসবিএন 99933-809-1-1 
  6. "Cultures & people of Darjeeling"। ২০১৩-১০-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-১১ 
  7. Gurung, Harka B. (২০০৩)। Trident and Thunderbolt: Cultural Dynamics in Nepalese Politics (পিডিএফ)। Social Science Baha। আইএসবিএন 99933-43-44-7ওসিএলসি 57068666। ২০০৯-০৯-০২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  8. Cemjoṅga, Īmāna Siṃha (২০০৩)। History and Culture of the Kirat People। Kirat Yakthung Chumlung। আইএসবিএন 99933-809-1-1 
  9. Monika Bock, Aparna Rao. Culture, Creation, and Procreation: Concepts of Kinship in South Asian Practice. Page 65. 2000, Berghahn Books.