মিশরীয় নারী পথশিল্পীরা

মিশরীয় নারী পথশিল্পীরা ২০১১ সালের বিপ্লবের পর মিশরে একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠে। এই ধরনের শিল্পীরা মিশরে নারী-সংক্রান্ত অনেক সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হয়ে উঠে, যা কেবল রাজনৈতিক উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং সমাজে নারীর অবস্থা ও যৌন হয়রানি বিষয়েও কাজ করে। উল্লেখযোগ্য মহিলা শিল্পীদের মধ্যে রয়েছে আয়া তারেক এবং হেন্ড খেরা। তাদের সহযোগিতায় রয়েছে উইমেন অন ওয়ালস এবং নূনেসওয়ার মতো সংগঠন।

পটভূমি সম্পাদনা

  • পথশিল্পীদের বাণী

পথশিল্পীরা প্রকৃতির মাঝে তাদের কাজ করে কিন্তু সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক নিপীড়নের দ্বারা চুপ হয়ে যায়। সাধারণত পথশিল্পীরা সুপরিকল্পিত বা পরিকল্পিত নির্দিষ্ট সমস্যা বা বিষয় সম্পর্কে বার্তা দিয়ে থাকে। ২০১৪ সালে টিভি চ্যানেল আল জাজিরার এক নিবন্ধে, উইমেন অন ওয়ালসের প্রতিষ্ঠাতা মিয়া গ্রোনডহল বলেন, "পথশিল্পী হলো সববিষযয়ে কাজ করে যেমন মানুষকে শক্তিশালী করা, মানুষের সাথে থাকা, মানুষের কথা শোনা।"[১] শহুরে জীবন শহরের ভবনের সীমাবদ্ধতার মধ্যে কেন্দ্রীভূত করে। পথশিল্পীরা এর অস্তিত্বের পিছনে বিবৃতিগুলি অনিবার্য করে তোলে। অ্যাঞ্জি বালাতা বলেন, "প্রত্যেকে দেখে আবার বার্তাও পায় - কিন্তু এটি গ্রহণ করতে চায় না।"[২] যেসব সমাজে কিছু নির্দিষ্ট দলকে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে সমান মর্যাদা দেওয়া হয় না, সেখানে বক্তব্যটি একটি আউটলেট।

  • পথশিল্পী ও বিপ্লব

মিশরে ২০১১ সালের বিপ্লবের আগে, পথশিল্পীদের সাধারণ উপস্থিতি ছিল না। ২০১১ সালের আগে পাবলিক স্পেসকে ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহার করতেন মাত্র কয়েকজন শিল্পী। এই সময়ের আগে, পথশিল্পীকে সন্দেহজনক হিসাবে দেখা হত এবং আইন দ্বারা বন্ধও করা হত।[৩] পথশিল্পীরা মিশরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারেককে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যাপারে আন্দোলন করে। তাদের পুরুষ ও মহিলারা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে। বিপ্লব সমাপ্তির পরও তারা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে।[১] তারা কিছু বিষয়ে মুসলিম ব্রাদারহুড এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে।[১][৩] মিশরীয় বিপ্লবের পর পথশিল্পীরা “উইমেন অন ওয়ালস” এর সহযোগিতার পথ তৈরি করেছে যারা নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করে। একজন পথশিল্পী বলেন, "আপনি যদি মিশরের মানুষকে কিছু বলতে চান, তাহলে রাস্তায় বলতে হবে।" এভাবে পথশিল্পীরা মিশরে মতামত প্রকাশ করার উপায় হয়ে উঠে।[১]

পথশিল্পী নারীরা সম্পাদনা

ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম মহিলারা ঘরে বা ব্যক্তিগত স্থানে সীমাবদ্ধ ছিল, আর পুরুষরা ছিল পাবলিক স্থানে।[৪] পথশিল্পী মহিলাদের পাবলিক স্পেসে কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। নুন এল নেসওয়া, নুনউইসা ও উইমেন অন ওয়ালের মতো নারী শিল্পী গ্রুপগুলি মহিলাদের সমস্যা ও অবস্থান রাস্তায় প্রতিবাদের মাধ্যমে সমাধানের প্রচারণা চালায়।[৫][৬][৭] নওনিউজার সদস্য নাওয়ারা বেলাল বলেন, "নারীরা পাবলিক স্পেসে সুবিধাজনক স্থানে নেই। আমাদের অবশ্যই মনে করতে হবে যে আমরা রাস্তায় আছি, এটা আমাদের অঞ্চল।"[৬] এ দল ছাড়াও মিশরে অনেক স্বতন্ত্র মহিলা শিল্পী কাজ করেন। কিছুদিন আগে তাদের বিষয় ছিল নারী বা নারী-সম্পর্কিত বা নারীদেরকে অপমান করা সম্পর্কিত।[৫][৭] এখন মিশরের মহিলারা পথশিল্পীদের ব্যবহার করে রাজনীতিতে মন্তব্য করে, তাদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলির সম্বোধন করে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করে। এই শিল্পীদের সাধারণ বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে- মিশরে মহিলাদের অবস্থা, লিঙ্গ বৈষম্য এবং দেশে যৌন নিপীড়নের উচ্চ হার রোধ করা।[১][৭]

গুরুত্বপূর্ণ পথশিল্পী ও সহযোগিতা সম্পাদনা

  • আয়া তারেক

সুপরিচিত আরব ব্লগারের মতে, "শহরে সুজি", আয়া তারেক একজন আলেকজান্দ্রিয়ান পথশিল্পী। প্রথম স্বীকৃত মিশরীয় পথশিল্পীদের একজন। মিশরে বিপ্লবের আগে পথশিল্পীর কাজ শুরু করেছিলেন এবং পথশিল্পীকে "একটি খোলা গ্যালারি" হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। [৮]

  • হেন্ড খেরা

সুপরিচিত মিশরীয় পথশিল্পী হেন্ড খেরা একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী।[৯] খেরা মিশরের সামাজিক রীতিনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন, একজন নারী হিসেবে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেন এবং যৌন হয়রানি বিরোধী অভিযানে অবদান রাখেন।[১০] রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আপনি লোকের সাথে কথা বলার জন্য রাস্তার একটি দেয়ালে লিখেন। যেকোনো মিডিয়া চ্যানেলের চেয়ে একটি প্রাচীর বেশি শক্তিশালী, কারণ আপনি এটিকে উপেক্ষা করতে পারবেন না ... রাস্তায় গ্রাফিটি তৈরি করে কী ঘটছে সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করুন।" [১১]

  • উইমেন অন ওয়ালস

উইমেন অন ওয়ালস, মিয়া গ্রোনডহল এবং অ্যাঞ্জি বালতা দ্বারা শুরু। তারা নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে কাজ করে। মিশর ও জর্ডানে ৬০ এরও বেশি শিল্পী কাজ করছেন।[১][১২]

  • নওনিউজ

এই গ্রুপটি মিশরে নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করে। তারা গ্রাফিতি হারিমি (মহিলা গ্রাফিতি) মাধ্যমে সামাজিক নিষেধাজ্ঞা ভাঙে। নওনিউজ পাবলিক স্পেসে কথা বলার জন্য নারীদের উৎসাহিত করে। তারা মানুষকে নারীর ইতিবাচক চিত্র দিতে চায় এবং প্রায়শই সুপরিচিত মহিলা চিত্রকে তাদের শিল্পের বিষয় হিসাবে ব্যবহার করে।[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Wolf, Mat (৬ মে ২০১৪)। "Egypt's graffiti artists make their mark"Al Jazeera 
  2. "Egyptian women fight for equality with graffiti"Observers। france24.com। ২৯ এপ্রিল ২০১৩। ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  3. Ali, Amro (২৫ জানুয়ারি ২০১৩)। "Alexandria Re-Imagined: The Revolution through Art"। jadaliyya.com। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  4. Esposito, John L.; Haddad, Yvonne Yazbeck (১৯৯৮)। Islam, Gender, & Social Change (e-book সংস্করণ)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা ix, xiii। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. ElNabawi, Maha (৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Graffiti campaigns bring women and children into street art"Egypt Independent 
  6. Fecteau, Andre (৩ অক্টোবর ২০১২)। "A Graffiti campaign brings strong female voices to the streets"Egypt Independent 
  7. Barakat, Nada (৬ মার্চ ২০১৪)। "Women on Walls"Al-Ahram Weekly। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  8. LeilZahra (১৭ আগস্ট ২০১২)। "Words of Women from the Egyptian Revolution Episode 11: Aya Tarek"। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  9. Peirandrei, Elisa (১ জুলাই ২০১৩)। "Egypt: This is Not Graffiti"। muftah.org। ৬ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৪ 
  10. "Hend Kheera"। WomenOnWalls। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪। ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  11. Downey, Michael (জুন ২০১২)। "The Writings on the Wall"। michael-downey.com। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৪ 
  12. "Home"। Women on Walls। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৪