মা (উপন্যাস)

(মা (বাংলা উপন্যাস) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মা বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক রচিত একটি উপন্যাস। বইটি ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি আনিসুল হকের সবচেয়ে জনপ্রিয় কর্ম। ২০২০ সালে বইটির ১০০ তম মুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে। [১][২] এটি একটি বাস্তব ঘটনাভিত্তিক উপন্যাস। লেখক এই কাহিনীর সন্ধান পান মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ -এর নিকট থেকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ ও তার মায়ের জীবনের সত্য ঘটনা নিয়ে রচিত এই উপন্যাসটির আবেদন মর্মস্পর্শী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসগুলোর মধ্যে এটির স্থান অন্যতম। বিভিন্ন সাহিত্যিক ও লেখক বইটির প্রশংসা করে লিখেছেন মন্তব্য। [৩][৪]

মা
লেখকআনিসুল হক
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
ধরনঐতিহাসিক, যুদ্ধ উপন্যাস
প্রকাশকসময় প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশনার তারিখ
ফেব্রুয়ারি ২০০৩
মিডিয়া ধরনমুদ্রণ (হার্ডকভার)
পৃষ্ঠাসংখ্যা২৭২
আইএসবিএন৯৮৪-৪৫৮-৪২২-১
ওসিএলসি৬৫০৩৭৩৬৬৬

উপন্যাসটি Freedom's Mother নামে ইংরেজিতে ও La Madre নামে স্পেনীয় ভাষাতে অনূদিত হয়েছে।

সারসংক্ষেপ সম্পাদনা

উপন্যাসের কাহিনী মুক্তিযোদ্ধা মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ এবং তার মায়ের জীবন নিয়ে । শহীদ আজাদের মা সাফিয়া বেগম ছিলেন ঢাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের স্ত্রী। তিনি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারী। তাই তার স্বামী যখন দ্বিতীয় বিবাহ করলেন, তখন তিনি তা মেনে নেননি। ছোট্ট আজাদকে নিয়ে শত বিলাসিতা আর প্রাচুর্যের আকর্ষণ উপেক্ষা করে নেমে এসেছিলেন নিজের গড়া যুদ্ধক্ষেত্রে। সেই যুদ্ধের তিনি ছিলেন সফল যোদ্ধা। অভাব অনটনকে পেছনে ফেলে নিজ হাতে তিনি মানুষের মত মানুষ করে তুলেছিলেন আজাদকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আজাদ তার বন্ধুদের সাথে যোগ দেয় । ঢাকায় ক্র্যাক প্লাটুনের এক জন যোদ্ধা ছিলেন তিনি। এই গেরিলা দলটি তৎকালীন সময়ে “হিট এন্ড রান" পদ্ধতিতে বেশ কিছু সংখ্যক আক্রমণ পরিচালনা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক ত্রাসের সঞ্চার করে । ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনী রেইড চালিয়ে ক্র্যাক প্লাটুন এবং সংশ্লিষ্ট অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যায় । আজাদের বাড়িতেও রেইড হয়, আজাদ তার সহযোদ্ধাদের সাথে ধরা পড়েন । পাকিস্তানিরা তাদের নির্মমভাবে নির্যাতন করে তথ্য জানতে চায়। প্রচণ্ড অত্যাচারের মুখেও তারা আজাদের মুখ থেকে কিছু বের করতে পারে না। তখন তার মাকে বলা হয়, ছেলে যদি সবার নাম-ধাম ইত্যাদি বলে দেয়, তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আজাদের মা ছেলেকে বলেন কিছুই না বলতে । আজাদ বলে, মা দুদিন ভাত খাই না, ভাত নিয়ে এসো। মা পরের দিন ভাত নিয়ে হাজির হন কারাগারে। কিন্তু ছেলের দেখা মেলে না। ইতোমধ্যে আজাদকে হত্যা করা হয়েছে। আজাদকে ভাত খাওয়াতে না পেরে আজাদের মা নিজে জীবনে আর কোনোদিনও ভাত খাননি। যুদ্ধের ১৪ বছর পরে মা মারা যান, নিঃস্ব অবস্থায়। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে কবরে শায়িত করলে আকাশ থেকে ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে বৃষ্টি ।

প্রশংসা সম্পাদনা

উপন্যাসটি প্রকাশের পর পাঠকমহলে ব্যাপক জনপ্রিয় হয় । সাহিত্য সমালোচকেরা এই উপন্যাসটিকে মুক্তিযুদ্ধের পর এবং মাকে নিয়ে যেকোনো সময়ে লেখা একটি প্রধান উপন্যাসের মর্যাদা দিয়েছেন । বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম বলেছেন, "আমি বলি দুই মা; ম্যাক্সিম গোর্কির ''মা'' আর আনিসুল হকের মা : ... এই দুই মা যথার্থ মা হয়ে উঠেছেন আমার কাছে ।" [৫] সরোজিনী সাহু মন্তব্য করেছেন, "One of the best novels of Indian sub-continent.It made my eyes watery. Perhaps the success lies behind the strong theme of humanity."[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] শেখর ইমতিয়াজ উপন্যাসের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপটের আঙ্গিকে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছেন, "প্রায় ৩০ বছর আগে ম্যাক্সিম গোর্কির মা উপন্যাসটি পড়ে কৈশোরিক দুরন্ত সাহস অর্জন করেছিলাম , আজ আনিসুল হকের মা উপন্যাসটি পড়ে নিজেদের ইতিহাসের বিস্মৃতির লীলায় প্রৌঢ়ত্বের বুকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "'মা' উপন্যাসের ১০০তম মুদ্রণ প্রকাশনা উৎসব"Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-২৫ 
  2. প্রতিবেদক। "শহীদ আজাদের বুকের রক্ত ও মায়ের অশ্রু দিয়ে লেখা 'মা'"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-২৫ 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "আনিসুল হকের 'মা' বস্তুনিষ্ঠ বয়ান: মনিশঙ্কর আয়ার"Prothomalo। ২০২১-০১-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-২৫ 
  4. "In The Streets Of Dacca | Outlook India Magazine"https://magazine.outlookindia.com/। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-২৫  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  5. "[১] দেশের ইতিহাসে ১৩৫ বছরে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় আনিসুল হকের 'মা' চতুর্থ, সংখ্যায় তৃতীয়"আমাদের সময়.কম - AmaderShomoy.com। ২০২০-১২-২৭। ২০২১-০১-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-২৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা