মাসুমা বেগম (৮ অক্টোবর ১৯০২ - ২ মার্চ ১৯৯০) ছিলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সদস্য ছিলেন ও উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।তিনি অন্ধ্র প্রদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন ১৯৬০ সালে মন্ত্রিসভার সদস্য হন। তিনি ১৯৬২ সালে সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলন সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন এবং আন্তর্জাতিক নারীবাদী সংস্থাগুলোর সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য কাজ করেন। পরিবার পরিকল্পনার পক্ষে ছিলেন এবং হায়দ্রাবাদে সামাজিক কল্যাণ সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করেন। তিনি ভারতীয় নারীদের সামাজিক নির্জনতার অবসানের জন্য প্রথম দিকের জনসাধারণের উকিল ছিলেন, যেটি পর্দা নামে পরিচিত। তিনি ১৯৭৪ সালে ভারত সরকার কর্তৃক দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন।

মাসুমা বেগম
সভাপতি, সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলন ১৯৬২
ডেপুটি লিডার, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ১৯৫৭
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম৮ অক্টোবর ১৯০২
হায়দরাবাদ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত
মৃত্যু২ মার্চ ১৯৯০
হায়দরাবাদ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
মন্ত্রীসভাঅন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য সরকার, ১৯৬০
দফতরসামাজিক কল্যাণ এবং ধর্মীয় অনুদান
পুরস্কারপদ্মশ্রী, ১৯৭৪

জীবনের প্রথমার্ধ সম্পাদনা

বেগম ১৯০২ সালে হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ও তার বোন মাহবুবিয়া গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেন।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

বেগম হায়দ্রাবাদে দাতব্য সংস্থার সাথে ল কাজের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন ও পরবর্তীতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দেন।[২] তিনি ১৯৫২ সালে হায়দ্রাবাদ নির্বাচনী এলাকা থেকে অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভায় যোগদান করে তার প্রথম নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে, তিনি কংগ্রেস পার্টির ডেপুটি নেত্রী নিযুক্ত হন,[৩] এবং ১৯৬০ সালে তিনি অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ এবং ধর্মীয় এনডোমেন্টস মন্ত্রী হন।[৪]

বেগম ১৯২৭ সাল থেকে সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলনের (এআইডব্লিউসি) সাথে জড়িত ছিলেন যা নারী অধিকার ও স্বার্থের জন্য নিবেদিত একটি নারীবাদী সংগঠন এবং এর সহ-সভাপতি হিসাবে দু'বার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৫৭ সালে তিনি এআইডব্লিউসি-র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং প্রচারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৬২ সালে তিনি এআইডব্লিউসি'র সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত হন।[২] এআইডব্লিউসি-তে থাকাকালীন তিনি ১৯৫৫ সালে কলম্বোতে আন্তর্জাতিক মহিলা জোটের সুবর্ণ জয়ন্তীতে একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের বেসরকারী সংস্থার দ্বিতীয় সম্মেলনের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং যুগোস্লাভিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় আন্তর্জাতিক নারীবাদী সম্মেলনে এআইডব্লিউসির প্রতিনিধিদলেরও নেতৃত্ব দেন।[১]

বেগম ভারতে পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭০-এর দশকে ভারত সরকার ভারতে গর্ভপাত বৈধ করার প্রশ্নটি পরীক্ষা করার জন্য একটি কমিটি নিযুক্ত করেছিল এবং আভাবাই ওয়াদিয়ার সাথে, বেগম এই কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ১৯৭২ সালে এই বিষয়ে আইন প্রবর্তন করা হয়েছিল।[৫] তিনি বেশ কয়েকজন মুসলিম নেতার মধ্যে একজন ছিলেন যারা সারদা আইনের পক্ষে ছিলেন এবং সমর্থন করেছিলেন, যেটি ভারতে বাল্যবিবাহের প্রথাকে বেআইনী ঘোষণা করেছিল।[৬]

হায়দ্রাবাদে, বেগম বেশ কয়েকটি সামাজিক কল্যাণ সংস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি একটি সরকারী সংস্থা হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বোর্ডের চেয়ার নিযুক্ত হন এবং রেড ক্রস, লেডি হায়দারি ক্লাব এবং আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুসলিম মহিলাদের জন্য শিক্ষা প্রচারের জন্য চালু করেছিলেন।[১]

তিনি ১৯৭৪ সালে পদ্মশ্রী ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বেসামরিক সম্মানের পায়।[৭]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

বেগম তার সম্পর্কিত ভাই হোসেন আলী খানকে বিয়ে করেন, যিনি অক্সফোর্ডে অধ্যয়ন করেন ও পরে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হন। যদিও তিনি এমন একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন যেখানে নারীরা পর্দা (স্বতন্ত্র) ব্যবহার করত, তবুও তার স্বামী তাকে পর্দার অভ্যাস ত্যাগ করতে উৎসাহিত করেছিলেন এবং তিনি ধীরে ধীরে এর বিরুদ্ধে একজন প্রবক্তা হয়েছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর, তিনি সম্পূর্ণরূপে বোরকা পরা বা পরদা রাখা বন্ধ করে দেন।[৮] বেগম ফার্সী, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলতেন ও পড়তেন জানেন।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Srivastava, Gouri (২০০৩)। The Legend Makers: Some Eminent Muslim Women of India (ইংরেজি ভাষায়)। Concept Publishing Company। আইএসবিএন 978-81-8069-001-3 
  2. Basu, Aparna; Ray, Bharati (২০০৩)। Women's Struggle: A History of the All India Women's Conference, 1927-2002 (ইংরেজি ভাষায়)। Manohar। পৃষ্ঠা 183। আইএসবিএন 978-81-7304-476-2 
  3. Majumdar, Maya (২০০৫)। Encyclopaedia of Gender Equality Through Women Empowerment (ইংরেজি ভাষায়)। Sarup & Sons। আইএসবিএন 978-81-7625-548-6 
  4. Wright, Theodore P. (১৯৬৪)। "Muslim Legislators in India: Profile of a Minority Élite" (ইংরেজি ভাষায়): 253–267। আইএসএসএন 1752-0401জেস্টোর 2050136ডিওআই:10.2307/2050136 
  5. Chandrababu, B. S.; Thilagavathi, L. (২০০৯)। Woman, Her History and Her Struggle for Emancipation (ইংরেজি ভাষায়)। Bharathi Puthakalayam। আইএসবিএন 978-81-89909-97-0 
  6. Sinha, Mrinalini (২০০৬-০৭-১২)। Specters of Mother India: The Global Restructuring of an Empire (ইংরেজি ভাষায়)। Duke University Press। আইএসবিএন 978-0-8223-3795-9 
  7. "Padma Awards Directory (1954–2014)" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs (India)। ২১ মে ২০১৪। পৃষ্ঠা 37–72। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৬ 
  8. IANS (২০১৮-০৫-২৯)। "Beyond purdah: 20th century Muslim women who broke societal barriers"Business Standard India। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০২