মার্কাস ফার্নান্দো

স্যার হিলারিয়ন মার্কাস ফার্নান্দোএফআরসিপি (২১ অক্টোবর ১৮৬৪ – ১৮ ডিসেম্বর ১৯৩৬) ছিলেন একজন স্বাধীনতাপূর্ব সিলনীয় রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক এবং ব্যাংকার। তিনি একাধারে সিলনের নির্বাহীসংসদীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন, সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন রাষ্ট্রীয় মর্টগেজ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে।

স্যার মার্কাস ফার্নান্দো
জন্ম
হিলারিয়ন মার্কাস ফার্নান্দো

(১৮৬৪-১০-২১)২১ অক্টোবর ১৮৬৪
কলম্বো, সিলন (বর্তমান শ্রীলঙ্কা)
মৃত্যু১৮ ডিসেম্বর ১৯৩৬(1936-12-18) (বয়স ৭২)
কলম্বো, সিলন (বর্তমান শ্রীলঙ্কা)
জাতীয়তাসিলনীয়
শিক্ষালন্ডন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়
কলম্বো একাডেমি
সেইন্ট বেনেডিক্ট একাডেমি
পেশাচিকিৎসক, জনসেবী, আবাদকারী, রাজনীতিবিদ
দাম্পত্য সঙ্গীমেরি ফ্রান্সিস নি ডি সয়সা

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

 

ফার্নান্দো পড়াশোনা করেন সেইন্ট বেনেডিক্ট একাডেমি (পরবর্তীতে সেইন্ট বেনেডিক্ট কলেজ, কলম্বো নামে পরিচিত) এবং কলম্বো একাডেমিতে (পরবর্তীতে যার নাম হয় কলম্বো রয়েল কলেজ)। কলম্বো একাডেমিতে তিনি টার্নার পুরস্কার, জুনিয়র কেমব্রিজ বৃত্তি এবং গণিত পুরস্কার অর্জন করেন। সিলন সরকারি বৃত্তির পাশাপাশি গিলক্রিস্ট এজুকেশনাল ট্রাস্ট থেকেও তিনি বৃত্তিপ্রাপ্ত হন, যা তাকে লন্ডন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়।[১][২] অ্যাচিনসন বৃত্তির সাথে সাথে বিচারসহায়ক চিকিৎসাবিদ্যা, শারীরতত্ব, ওষুধবিদ্যা ও প্রসূতিবিদ্যায় লন্ডন-বিশ্ববিদ্যালয়-স্বর্ণপদক লাভ করে তিনি স্নাতকোত্তীর্ণ হন। ১৮৮৮ সালে এম.বি. এবং ১৮৮৯ সালে এম.ডি. ডিগ্রি লাভের পর ১৮৯০ সালে তিনি লন্ডন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন।[৩][৪]

চিকিৎসক জীবন সম্পাদনা

সিলনে ফিরে তিনি সিলন মেডিকেল কলেজের রেজিস্ট্রার, ডি সয়সা মাতৃসদনের সুপারিনটেন্ডেন্ট এবং কলম্বো সরকারি হাসপাতালের প্রথম কনসালটেন্ট চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেন।[১][২] নানাবিধ রোগব্যাধি সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক আলাপ-আলোচনায় তিনি ভূমিকা রাখেন। এর মধ্যে "ক্রান্তীয় অঞ্চলে ডায়াবেটিস" আলোচনায় যুক্ত হয়ে তিনি দেখান রোগটির প্রাদুর্ভাব ধনাঢ্য সিলনিদের মধ্যেই বেশি।[৫] সিলনে অবস্থিত ব্রিটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের দীর্ঘকালীন সদস্য তিনি; ১৮৯১-১৮৯৭ সময়কালে সম্পাদক এবং ১৯০৫ ও ১৯১৪ সালে অলংকৃত করেন সভাপতির আসন। কলম্বোস্থিত ব্যাকটেরিয়াতত্ত্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং সিলন সরকারের রাসায়নিক পরীক্ষকের দায়িত্বও তিনি পালন করেন।[৬][৭]

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

তেতাল্লিশ বছর বয়সে তিনি চিকিৎসাজীবন থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসায়ী জীবনে প্রবেশ করেন। ১৯১১ সালের সিলন আইনসভা নির্বাচনে এক নব্যসৃষ্ট আসনে (স্যার জেমস পেইরিস প্রস্তাবিত) প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে প্রাক্তন জনপ্রিয় সরকারী চাকুরে এবং তদানীন্তন রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ স্যার পন্নাম্বালাম রামানাথানের কাছে পরাজিত হন।[৮][৯][১০] পরবর্তীতে একাধারে নির্বাহী বিভাগ এবং আইন পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন। ফার্নান্দো তার ইশতেহারে শিল্পায়নের ব্যাপারে এক প্রগতিশীল পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলেছিলেন।[১১]

তিনি ডনোমর সংবিধানকে সমর্থন করেছিলেন, যা প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন এবং উত্তরের তামিল ও পূর্বের মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছিলো।[৪] তার মালিকানায় "দা সিলন ইন্ডিপেন্ডেন্ট" প্রকাশিত হতো, যার সম্পাদকীয় পর্ষদে ছিলেন নীল গ্রেটিয়েন এবং ম্যানিকাসোথি সারাভানামুত্তু[৪]

১৯৩১ সালে মার্কাস ফার্নান্দোকে চেয়ারম্যান করে সিলনের প্রথম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক "সিলন রাষ্ট্রীয় মর্টগেজ ব্যাংক"।[১২] সিলন ব্যাংক স্থাপনেও তার ভূমিকা ছিলো।[২]

সিলন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় স্যার জেমস পেইরিস ও স্যার পন্নামবালাম অরুণাচালামের সাথে তিনি গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯২৩ সালে তিনি নাইটহুড লাভ করেন(নিউ ইয়ার অনার্স লিস্ট)।[২] ১৯২৯ সালে স্থাপিত কলম্বো রোটারি ক্লাবের তিনি ছিলেন সহপ্রতিষ্ঠাতা।[১৩]

পরিবার সম্পাদনা

তার পিতা ছিলেন এন্ড্রিউ ফার্নান্দো জুনিয়র এবং তার পিতামহ এন্ড্রিউ ফার্নান্দো সিনিয়র ছিলেন কলম্বো'র 'মুদালিয়ার'[১][২] ১৮৯১ সালে তিনি চার্লস হেনরি ডি সয়সা এবং লেডি ডি সয়সা'র দ্বিতীয় কন্যা ম্যারি ফ্রান্সিসকে বিবাহ করেন। তাদের দুই কন্যা ও এক পুত্র ছিলো।[১] অ্যাডভোকেট চার্লস ম্যাথিউস ফার্নান্দো, প্রথম সিলনি রাজ-আইনপরামর্শক, ছিলেন তার ভাই।[১৪][১৫]

তার ভাইপো'দের মধ্যে চিভেলিয়ার সি.এইচ.জেড.ফার্নান্দো ছিলেন একজন পথিকৃৎ শ্রমিক ইউনিয়ন কাউন্সিলর, সর্বজনীন ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের মাঠকর্মী, যুব লঙ্কা লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেনিনের সাথে সাক্ষাৎকারী একমাত্র সিলনীয়[১৬][১৭][১৮][১৯] এবং সি.এম.ফার্নান্দো ছিলেন এসএলএফপি'র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।[২০][২১]

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

মেডিকেল এসোসিয়েশন[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] বিশেষ বক্তৃতামালার মাধ্যমে তার জীবনস্মৃতি স্মরণ করেছে।[২২][২] বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সুরেন্দ্র রামচন্দ্রন, নির্মল সেনানায়েকে এবং হিথানাদুরা জনক ডি সিলভাপেরাডেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হল এবং দারুচিনি উদ্যানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে তার নামে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Wright, Arnold (১৯৯৯)। Twentieth century impressions of Ceylon: its history, people, commerce ... By Arnold Wright page 549-50আইএসবিএন 9788120613355। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-০৩ 
  2. "Sir Marcus Fernando Oration"। www.slma.lk। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-০৩ 
  3. "Sir H Marcus Fernand0 MD" (পিডিএফ)। www.bmj.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-০৩ 
  4. The Sara Saga, Manicasothy Saravanamuttu (Areca) আইএসবিএন ৯৬৭৫৭১৯০৩৬ pp. 51-3
  5. Bose RKC. Diabetes in the tropics. BMJ 1907; ii: 1053-56.
  6. Medical Research institute, Sri Lanka: History (Official Website) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৪-১২-১৯ তারিখে Retrieved 2015-02-25.
  7. "Sir Marcus Fernando – Knight in medical armour SLMA News September 2010 Volume 3 no 9"। www.slma.lk। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "What went wrong with Sri Lanka? (Part II) by Victor Ivan"। Daily FT। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০৩ 
  9. Phadnis, Urmila; Muni, Sukh Deo; Bahadur, Kalim (১৯৮৬)। Domestic Conflicts in South Asia: Economic and Ethnic Dimensions (ইংরেজি ভাষায়)। South Asian Publishers। পৃষ্ঠা 128। আইএসবিএন 9788170030713 
  10. "SRI LANKA: THE UNTOLD STORY Beginning of British Rule By K T Rajasingham"। www.atimes.com। Archived from the original on ২০০১-০৮-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-০৩ 
  11. Bandura Dileepa Witharana। "Technical Education in the Imagination of the Ceylonese Developmental State"। SAGE Publishing: 178–9। এসটুসিআইডি 200077621ডিওআই:10.1177/0972266120180208 
  12. Ceylonese Participation in Tea Cultivation: Major constraint for Ceylonese entrepreneurs, by Maxwell Fernando: History of Ceylon Tea Website, Retrieved 5-12-2014
  13. Seventy five years of Rotary ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে, The Sunday Leader, Retrieved 8 January 2016
  14. The History of the Ceylon Police - The Sunday Times. Retrieved 2015-02-25.
  15. Revisiting Ceylon's first sensational murder trial more than 100 years ago By Jayantha Gunasekera (Sunday Times). Retrieved 2015-02-25.
  16. Who’s Who of Sri Lanka: The lives and times of forty eight personalities, Gamini Akmeemana (Daily Mirror) Retrieved 8 January 2016
  17. CEYLON'S BATTLE, The Straits Times (13 November 1929) Retrieved 2 November 2015
  18. Traversed new paths making History, Ananda E. Goonesinha (The Island) Retrieved 2 November 2015
  19. “Sons of the Soil and Strangers within the gates”, Joe Simpson (rootsweb) Retrieved 4 November 2015
  20. C.M. Fernando - Devout Catholic and founder member of SLFP, W. T. A. Leslie Fernando (Sunday Observer) Retrieved 8 January 2016
  21. Charting a new course for Sri Lanka’s success, S. S. Sahabandu (Daily News) Retrieved 8 January 2016
  22. Rosenheim ML. The first Sir Marcus Fernando Memorial oration. Ceylon Med J. 1970 Mar;15(1):3-9.