মারিয়া লিমানস্কায়া
মারিয়া লিমানস্কায়া (ভুল করে আনা পাভলোভা বলেও উল্লেখ করা হয়) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে তিন বছর রেড আর্মির নারী সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৪৫ সালে বার্লিন যুদ্ধের পর ব্রান্ডেনবুর্গ ফটকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পরিচিতি পান। তখন থেকে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে মিত্র শক্তির বিজয়ের প্রতীক হয়ে উঠেন।
জীবনী সম্পাদনা
প্রারম্ভিক জীবন ও সামরিক চাকুরি সম্পাদনা
মারিয়া লিমানস্কায়া ১৯২৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চরম সময়ে ১৯৪২ সালে রেড আর্মিতে যোগ দেন। তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর।[১][২] তখন স্টাভকা (শীর্ষ সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ) ২,০০০ কিলোমিটারের (১,২০০ মাইল) বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য সৈন্য যোগান দিতে স্বল্প প্রশিক্ষিত সৈন্য নিয়োগ করতে থাকে; এজন্য তখন সেনাবাহিনীতে কম বয়সী পুরুষ ও নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয়।[৩] যুদ্ধ জুড়ে রেড আর্মিতে প্রায় ৮০০,০০০ নারী অংশ নেয়। [৪] মারিয়া সামরিক জীবনে কয়েকবার মৃত্যূর মুখ থেকে বেঁচে যাওয়ার কারণে কিছু পরিচিতি পান। একবার বোমায় গুড়িয়ে দেয়ার মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে তিনি একটি ভবন থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ম্যালেরিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন।[১][২]
ব্রান্ডেনবুর্গ ফটক ও বিজয় প্রতীক সম্পাদনা
১৯৪৫ সালের মে মাসের প্রথম দিকে বার্লিন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর জুলাইর শেষের দিকে পস্টডাম সম্মেলনের সময় লিমানস্কায়াকে ব্রান্ডেনবুর্গ গেটে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তখন দায়িত্ব পালনের সময় তার ছবি তোলা হয়, ভিডিও করা হয়, এমনকি রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা টিলিয়েগ্রাফনয়ে আজিয়েন্তস্তভো সভিয়েতস্কোগো সয়ুজা ("টেলিগ্রাফ এজেন্সি অব দি সোভিয়েত ইউনিয়ন"; তাস)-এর সাংবাদিক ইউজেনি হ্যালডে তার সাক্ষাৎকার নেন। তার ছবি দেশ বিদেশের পত্র-পত্রিকায় ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে, এবং রাতারাতি নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রতীক হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে পস্টডামে যাওয়ার পথে ব্র্যান্ডেনবুর্গ ফটক পার হওয়ার সময় ব্রিটশ নেতা উইন্সটন চার্চিল লিমানস্কায়ার সাথে সংক্ষিপ্ত বাক্যালাপ করেন।[১][২] পরবর্তীতে এই সাক্ষাৎ সম্পর্কে লিমানস্কায়া বলেন, "তাকে ঠিক তেমনই দেখাচ্ছিল যেমন আমি ভেবেছি, চুরূট ফুকছিলেন।"[২]
পরবর্তী জীবন ও বিবাহ সম্পাদনা
যুদ্ধ শেষে লিমানস্কায়া সাধারণ জীবনে ফিরে আসেন এবং বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ে বেশি দিন টিকে নি, তিনি তার দু্ই মেয়ে নিয়ে আলাদা হতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে লিমানস্কায়া আবার বিয়ে করেন, ভিক্তর নামের এক পুরোনো সহকর্মীকে বিয়ে করেন যার সাথে জীবনের বাকি ২৩টি বছর কাটিয়েছিলেন।[১] ধারণা করা হয় তিনি তার জীবনের শেষ বছরগুলি কাটিয়েছিলেন সারাটোভের স্ভনারিওভকা গ্রামে।[১][২] লিমানস্কায়ার পাঁচজন নাতি-নাতনি বেঁচে আছেন, যাদের তিনজন এখন জার্মানিতে বাস করে। কোনো এক অজানা কারণে টেলিভিশন তথ্যচিত্র ও অন্যান্য গণ উপস্থাপনায় প্রায়ই তাকে "আনা পাভলোভা" হিসবে বর্ণনা করা হয়।[১]
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Mark Simner 2015।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Kulikov 2004।
- ↑ Goldstein 2003, পৃ. 64–66।
- ↑ Goldstein 2003, পৃ. 65।
উৎস সম্পাদনা
ছাপাকৃত সম্পাদনা
- Goldstein, Joshua (২০০৩)। War and Gender: How Gender Shapes the War System and Vice Versa। Cambridge University। আইএসবিএন 978-0521001809।
অনলাইন সম্পাদনা
- "Maria Limanskaya – Forgotten Iconic Image of the Second World War"। Mark Simner। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৫।
- Kulikov, Andrei (১৩ মে ২০০৪)। "The Fate of Russian Girl from WWII Photo"। Pravda। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৫।