মামুন হুসাইন (জন্ম: ৪ মার্চ ১৯৬২) একজন চিকিৎসাবিদ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও কথাসাহিত্যিক। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০১৭ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।[১]

মামুন হুসাইন
জন্ম (1962-03-04) ৪ মার্চ ১৯৬২ (বয়স ৬২)
কুষ্টিয়া জেলা, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)
পেশাচিকিৎসাবিদ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, কথাসাহিত্যিক
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরাজশাহী মেডিকেল কলেজ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার
সক্রিয় বছর১৯৮০-এর দশক-বর্তমান

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মামুন হুসাইন ৪ মার্চ ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন কুষ্টিয়া জেলা শহরের কমলাপুরে। তার পিতার নাম আলতাফ হুসাইন, মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। মামুন হুসাইনের শৈশব-কৈশোর কেটেছে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায়। তিনি পড়ালেখা করেছেন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। তিনি ১৯৭৭ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৯ সালে আইএসসি পাস করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেন ১৯৮৫ সালে। এরপর তিনি বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন-এর অধীনে ডাক্তার হিসেবে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি মেডিক্যাল সোসিওলজি নিয়ে উচ্চতর পড়ালেখায় আত্মনিয়োগ করেন এবং ২০০২ সালে এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৯ সালে। পরে তিনি সাইকিয়াট্রিতে এফসিপিএস ২০১১ সালে ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়মিত মানসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবাপ্রদান করেন।

সাহিত্য জীবন সম্পাদনা

মামুন হুসাইনের সাহিত্যে হাতেখড়ি আশির দশকে হলেও প্রাথমিক অবস্থায় তিনি সাহিত্যের ছোটকাগজগুলোতেই লিখতেন। বেশ পরে তিনি ১৯৯৫ সালে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘শান্ত সন্ত্রাসের চাঁদমারি’ প্রকাশ করেন। গ্রন্থটি প্রকাশের আগেই তিনি বাংলাদেশের গল্পধারায় সিরিয়াসধর্মী গল্পকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার গল্পকার সত্তার মূল্যায়ন করতে গিয়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আশির দশকেই এক চিঠিতে মহীবুল আজিজকে লিখেছিলেন : ‘... মামুন হুসায়েনের (হুসাইন) গল্প সংকলন এবারেও বেরুবে কি-না সন্দেহ। ও এখন কাজ করে রাজশাহীতে, ঢাকায় এলেও সহজে দ্যাখা করে না; আর ওর লেখা কিংবা বই নিয়ে জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে যায়। সুশান্ত খুব চেষ্টা করছে, কিন্তু মামুন এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। আমার কথা তো পাত্তাই দেয় না, তুমি বরং তাগাদা দিয়ে চিঠি লিখতে পারো ওকে। ওর বই বেরুনো খুব দরকার। কলকাতা ও ঢাকায়, বিশেষ করে কলকাতায় যথার্থ ভালো পাঠকেরা মামুনের লেখা খুব পড়তে চায়। অনুষ্টুপের গত বছরের শারদীয় সংখ্যায় ওর গল্প ‘সনকার কালাবুড়ি ও আমাদের দিন যাপন’ দারুন সাড়া তুলেছে।’ [২]

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

বাংলাদেশের গল্পধারায় মামুন হুসাইনকে সিরিয়াসধর্মী গল্পকার। তাঁর গল্পের ভাষা এবং গল্প বলার স্টাইলে তিনি সমকালের অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।[৩] ‘মৃত খড় ও বাঙাল একজন’, ‘এ এক পুনরুত্থান’, ‘সনকার কালাবুড়ি ও আমাদের দিনযাপন’, ‘এক প্রার্থনার ঘুম’, ‘আকুল পরাণ’ ও ‘রাজযাত্রা কিম্বা সহজ বেহুলা পাঠ’ মাত্র এ ৬টি গল্প নিয়ে ‘শান্ত সন্ত্রাসের চাঁদমারি’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের পাঁচ বছর পর তার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ 'আমাদের জানা ছিল কিছু' প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে। একদিকে চিকিৎসা পেশায় অক্লান্ত পরিশ্রম অন্যদিকে লেখালেখি নিয়ে জীবনযাপন করতে গিয়ে তিনি প্রায় জনবিচ্ছিন্নই থাকেন। ফলে সমকালের অনেকের চেয়ে মেধাবী লেখক হয়েও তিনি অনেকাংশেই অপঠিতই থেকে গেছেন। তারপরও বিগত তিন-চার দশকে ১৩টি গল্পগ্রন্থ, ৪টি উপন্যাস ও দুটো গদ্যগ্রন্থ রচনা করেছেন।[৪] এই বিবেচনায় বলাই যায় মামুন স্বল্পপ্রজ লেখক। ৪০/৪২ টির মতো গল্প রচনা করেও বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে ভিন্নমাত্রার গল্পকার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন।[৫] মামুন প্রথম থেকেই গল্প লেখার ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল খুঁজেছেন এবং ক্রমাগত নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিজস্ব গল্পভাষা, গল্প-বলার কৌশল আয়ত্ত করেছেন।[৬]

গল্পগ্রন্থ সম্পাদনা

  • শান্ত সন্ত্রাসের চাঁদমারি ১৯৯৫
  • আমাদের জানা ছিল কিছু ২০০০
  • মানুষের মৃত্যু হলে ২০০০
  • বালক বেলার কৌশল ২০০২[৭]
  • নিরুদ্দেশ প্রকল্পের প্রতিভা ২০০২
  • কয়েকজন সামান্য মানুষ ২০০৩
  • একটি স্মারক গ্রন্থের জীবন প্রণালী ২০০৫
  • রাষ্ট্রযন্ত্রের খেলাধুলা ২০০৭
  • কর্নেল ও কিলিং বিষয়ক এন্ডগেম ২০০৯
  • যুদ্ধাপরাধ ও ভূমিব্যবস্থার অস্পষ্ট বিজ্ঞাপন ২০১১[৭]
  • অন্ধজনের জাতককথা ২০১৪
  • সংক্ষিপ্ত সন্ধ্যাভাষা ২০১৬[৭]
  • শব্দান্ধ আত্মার সাধন-বাসনা[৮] ২০১৮

উপন্যাস সম্পাদনা

  • নিক্রপলিস ২০১১
  • হাসপাতাল বঙ্গানুবাদ ২০১২
  • বিষণ্ন হওয়ার ফিল্ড গাইড[৯]
  • শরীর সংক্রান্ত কূটালাপ ২০১৯

উপন্যাসিকা সম্পাদনা

  • স্বাধীন অন্ধকার : এখানে বিশেষ কিছু হয় নি অনেক দিন[১০]

প্রবন্ধ সম্পাদনা

  • কথা ইশারা ২০১৪
  • গল্পদেখার চিহ্ন ২০১৬
  • অসরল পুঁথিবিদ্যা ২০১৯

পুরস্কার সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "এবার যারা পেলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার"কালের কণ্ঠ। ২৭ জানুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ 
  2. আজিজ, মহীবুল (২০১০)। সাহিত্য : ইলিয়াস ও অন্যান্য নক্ষত্র (১ম প্রকাশ সংস্করণ)। ঢাকা: শোভা প্রকাশ। পৃষ্ঠা ১৬০। আইএসবিএন 984 700 84 0113 9 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য) 
  3. হাসান, অনুপম। "গল্পকার মামুন হুসাইন : এলিট শ্রেণীর পাঠসূত্র"পিপীলিকা। যৌথ উদ্যোগেজিপি আইটিএবংশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৭, ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. অনুপম হাসান সম্পাদিত, রাঢ়বঙ্গ, ৬ষ্ঠ বর্ষ : ৪র্থ সংখ্যা।। মামুন হুসাইন খণ্ড। রাজশাহী : ২০১৮
  5. মাহমুদ, শিমুল। "বাংলাদেশের সিরিয়াস ধারার গল্প : খণ্ডিত পাঠ"গল্পপাঠ [কথাসাহিত্যের অন্তরসূত্র]। সম্পাদক--এমদাদ রহমান মোমিনুল আজম কুলদা রায়। প্রকাশক--মৌসুমী কাদের। ২৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৭, ২০১৭ 
  6. সৈয়দ আকরম হোসেন সম্পাদিত, উলুখাগড়া, ১৭তম সংখ্যা, ঢাকা : ২০১৩
  7. গ্রন্থটির পেপারব্যাক সংস্করণ, ২০১৯ সালে রাঢ়বঙ্গ প্রকাশনী, রাজশাহী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
  8. সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ। ১ম সংস্করণ, রাঢ়বঙ্গ প্রকাশনী, রাজশাহী ২০১৮ ।। প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর।। মূল্য : ২৪০, পৃষ্ঠা : ৯৬।। আইএসবিএন=978 984 33 7119 5
  9. গ্রন্থাকারে এখনো প্রকাশিত হয় নি। এ উপন্যাসটি ২০১৭ সালের বণিকবার্তা [দৈনিক পত্রিকা]-এর ঈদ সংখ্যা ‘সিল্পরুট’ [ঈদসংখ্যা সম্পাদক, আলীম আজিজ]-এ প্রকাশিত হয়েছে।
  10. গ্রন্থাকারে এখনো প্রকাশিত হয় নি। এ উপন্যাসিকাটি ২০১৬ সালের বণিকবার্তা [দৈনিক পত্রিকা]-এর ঈদ সংখ্যা ‘সিল্পরুট’ [ঈদসংখ্যা সম্পাদক, আলীম আজিজ]-এ প্রকাশিত হয়েছে।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা